ব্যথাহীন প্রসব: কি, কেন, কীভাবে?

ব্যথাহীন প্রসব কি কেন গুরুত্বপূর্ণ | এভারকেয়ার হাসপাতাল চট্টগ্রাম

ব্যথাহীন প্রসব: কি, কেন, কীভাবে?

বলা হয়, একজন নারীর প্রসবকালীন ব্যথা নাকি শরীরের ৫৬টি হাড় একসাথে ভাঙার সমপরিমাণ হয়ে থাকে। প্রসবকালীন ব্যথার সঙ্গে অন্যকোন ব্যথার তুলনা করা যায় না। বর্তমান যুগে অধিকাংশ নারী এই ব্যথা নিয়ে আতঙ্কে থাকেন, ফলে বাড়তি স্বাস্থ্যঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও অনেকেই স্বাভাবিক প্রসব (নরমাল ডেলিভারি) এড়িয়ে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সন্তান প্রসব করাতে চান।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) তথ্য বলছে, ১৯৯৫-৯৬ সালে আমেরিকায় অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সন্তান জন্মদানের হার ছিল ২০.৭ শতাংশ, যা ২০১৪-১৫ সাল নাগাদ ৩২.২ শতাংশে এসে পৌঁছায়। বাংলাদেশে বর্তমান অস্ত্রোপচার জনিত প্রসব বা সিজারিয়ান অপারেশনের হার প্রায় ৪৫ শতাংশ, যার মূল কারণ নারীদের প্রসবকালীন ব্যথাভীতি।

তবে নারীদের জন্য স্বস্তির বার্তা নিয়ে এসেছে বিশ্বের চিকিৎসক-বিজ্ঞানীরা। চিকিৎসাবিজ্ঞানে প্রযুক্তির সঠিক বাস্তবায়নের ফলে ব্যথামুক্ত প্রসবও এখন সম্ভব। বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে ইতোমধ্যেই অস্ত্রোপচার ছাড়া সন্তান প্রসব হচ্ছে, যা নিরাপদ ও ব্যথামুক্ত। যুগান্তকারী এই পদ্ধতিগুলোর মধ্যে এপিডিউরাল পদ্ধতি অন্যতম। এটি মূলত নরমাল ডেলিভারির মতোই একটি প্রক্রিয়া তবে ব্যথামুক্ত।

এ পদ্ধতিতে সাধারণত মেরুদণ্ডে কিছু ওষুধ প্রয়োগের মাধ্যমে (সিজারিয়ান অস্ত্রোপচারের মতো) প্রসব চলাকালীন মায়েদের ব্যথামুক্ত রাখা হয়। সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটি স্বয়ংক্রিয় কম্পিউটারের মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করা হয়। এই সময়ে মা হাঁটাচলা করতে, কথাবার্তা বলতে, এমনকি হালকা খাবারও খেতে পারেন। আবার সন্তানের নড়াচড়াও মা বুঝতে পারেন।

এই সময়ে ব্যথা কমানোর জন্য ওষুধ খেলে তা মা থেকে শিশুর রক্তে প্রবাহিত হওয়ার কোন ঝুঁকি নেই, নেই পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়াও। এই পদ্ধতি ব্যবহারে দ্রুত ও দীর্ঘসময়ের জন্য ব্যথা কমানো যায়। এমনকি অস্ত্রোপচারের প্রয়োজনে হলেও দ্রুত অবশ করা যায়। আবার স্বাভাবিক প্রসবের পর মা তাৎক্ষণিকভাবে নবজাতককে বুকের দুধ খাওয়াতে পারেন।

ব্যথামুক্ত স্বাভাবিক প্রসবের জন্য অত্যাধুনিক প্রি-ডেলিভারি, ডেলিভারি ও পোস্ট-ডেলিভারি ব্যবস্থা, সিনক্রোনাইজড অভিজ্ঞ লেবার ও অ্যানেসথেসিয়া টিম, ক্লোজ মনিটরিং, জরুরি চিকিৎসা ব্যবস্থা ইত্যাদি সুবিধা থাকা আবশ্যক। তবেই সুস্থ ও নিরাপদ প্রসবের নিশ্চয়তা দেওয়া যায়। এই পদ্ধতিতে যেই ওষুধ ব্যবহৃত হয়, সেটি এপিডিউরাল অ্যানেসথেসিয়া নামে পরিচিত। মেরুদণ্ডের ভেতরে ছোট একটি ক্যাথেটার ঢুকিয়ে এই ওষুধ দেওয়া হয়।

এটি অনেকটা সাধারণত সিজারিয়ান অপারেশনের সময় ব্যবহৃত স্পাইনাল অ্যানেসথেসিয়া মতো, তবে এই সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটির জন্য চাই বিশেষ প্রশিক্ষণ। এছাড়াও, নবজাতকের নিবিড় পরিচর্যার জন্য বিশ্বমানের এনআইসিইউ ও ইনফেকশন কন্ট্রোল প্রোটোকল ঝুঁকিমুক্ত প্রসব নিশ্চিত করে।

বিগত বছরেগুলোর তুলনায় বর্তমানে প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে বেশ উন্নতি করেছে বাংলাদেশ। পিছিয়ে নেই স্বাস্থ্য বা চিকিৎসা খাতেও। উন্নত প্রযুক্তি, অভিজ্ঞ চিকিৎসক, আধুনিক চিকিৎসা-সরঞ্জামের মাধ্যমে দেশেই এখন বিশ্বমানের স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া যাচ্ছে। এদের মধ্যে বন্দরনগরীর সর্ববৃহৎ হাসপাতাল এভারকেয়ার হসপিটাল চট্টগ্রাম অন্যতম। বিশ্বমানের স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের সকল ব্যবস্থাই রয়েছে এই হাসপাতালে। তাই প্রসব ব্যথা নিয়ে আতঙ্কিত নয়, বরং মাতৃত্বের আশীর্বাদে হোন উচ্ছ্বসিত।

ডাঃ সানজিদা কবির
কনসালটেন্ট- অবস্ এন্ড গাইনী
এভারকেয়ার হসপিটাল চট্টগ্রাম।