World suicide prevention day-“Creating Hope Through Action”

suicide prevention

World suicide prevention day-“Creating Hope Through Action”

Dr. Shaafi Raaisul Mahmood

Writer:
Dr. Shaafi Raaisul Mahmood
MBBS, MD (Psychiatry)
Attending Consultant
Psychiatry & Mental Health At Evercare Hospital Chattogram

World suicide prevention day is established by International Association of Suicide Prevention in conjunction with World Health organization (WHO).

This day is celebrated every year on September 10th.

The goals of this celebration are-

  • To draw attention to this issue.
  • To implement actions to prevent suicide.
  • To increase the awareness among communities, governments and organizations.
  • To reduce stigma.
  • To provide a singular message that suicide is preventable.

According to the report of World Health organization (WHO), there are currently more than 700000 suicides per year worldwide and each suicide profoundly effects many more people .

So  suicide prevention is a public health priority, and to reduce the suicide mortality rate urgent action is required.

There are many causes of suicide and among them depression is the prominent one.

“Creating Hope Through Action” is the triennial theme for the World Suicide Prevention Day from 2021-2023. This theme reflects that through actions we can prevent suicide, encourage hope and to understand that suicide is not a solution, there is an alternative to suicide.

By creating hope through action, we can signal to people experiencing suicidal thoughts that there is hope and that we care and want to support them. It also suggests that our actions, no matter how big or small, may provide hope to those who are struggling. (Source- WHO)

WHO is continuing work with its partners to support countries to take concrete measures in this direction.

 

 

 

 

বিশ্ব আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবস- “কর্মের মাধ্যমে আশা তৈরি করা”

ডাঃ শাফী রাইসুল মাহমুদ
এমবিবিএস, এমডি (সাইকিয়াট্রি)
এ্যাটেন্ডিং কনসালটেন্ট – সাইকিয়াট্রি

 

বিশ্ব আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবস বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) সাথে যৌথভাবে আন্তর্জাতিক আত্মহত্যা প্রতিরোধ সংস্থা কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত হয়। এই দিনটি প্রতি বছর ১০ই সেপ্টেম্বর পালিত হয়। এই উদযাপনের লক্ষ্য হল-

• এই সমস্যার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা।
• আত্মহত্যা প্রতিরোধে পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করা।
• সম্প্রদায়, সরকার এবং সংস্থাগুলির মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করা।
• মানসিক সমস্যা ও আত্মহত্যার কারণগুলোর প্রতি বিরূপ দৃষ্টিভঙ্গি কমিয়ে আনা।
• আত্মহত্যা যে প্রতিরোধযোগ্য তার একটি একক বার্তা প্রদান করা।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) রিপোর্ট অনুসারে, বর্তমানে বিশ্বব্যাপী প্রতি বছর ৭ লাখ এরও বেশি আত্মহত্যা হয় এবং প্রতিটি আত্মহত্যা আরও অনেক মানুষকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে। তাই আত্মহত্যা প্রতিরোধ একটি জনস্বাস্থ্য অগ্রাধিকার, এবং আত্মহত্যার কারণে মৃত্যুর হার কমাতে জরুরি পদক্ষেপ প্রয়োজন। আত্মহত্যার অনেক কারণ রয়েছে এবং তার মধ্যে বিষণ্নতা একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ।

২০২১-২০২৩ সাল পর্যন্ত বিশ্ব আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবসের ত্রিবার্ষিক থিম হল “কর্মের মাধ্যমে আশা তৈরি করা”। এই থিমটি প্রতিফলিত করে যে কর্মের মাধ্যমে আমরা আত্মহত্যা প্রতিরোধ করতে পারি, আশাকে উত্সাহিত করতে পারি এবং বুঝতে পারি যে আত্মহত্যা কোনও সমাধান নয়, আত্মহত্যার বিকল্প রয়েছে। কর্মের মাধ্যমে আশা তৈরি করার মাধ্যমে, আমরা আত্মঘাতীমূলক চিন্তার সম্মুখীন হওয়া লোকেদের কাছে ইঙ্গিত দিতে পারি যে অবশ্যই  আশা আছে এবং আমরা এই আশাকে গুরুত্ব দেই ও যত্ন করি এবং তাদের সমর্থন করতে চাই।

তাছাড়া আমাদের উদ্যোগ ও কর্ম গুলি যত বড় বা ছোট হোক না কেন, যারা সংগ্রাম করছে তা তাদের আশার আলো হতে পারে। (সূত্র- WHO) বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তার অংশীদারদের সাথে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে যা দেশগুলিকে এইসব ক্ষেত্রে দৃঢ় পদক্ষেপ নিতে সহায়তা করে।

 

হার্টের রোগ আর স্ট্রোক এক নয়, সচেতনতাই কমাতে পারে স্ট্রোকে মৃত্যু

হার্টের রোগ আর স্ট্রোক এক নয়

হার্টের রোগ আর স্ট্রোক এক নয়!

স্ট্রোক হলো ব্রেন বা মস্তিষ্কের রোগ। কেউ স্ট্রোক করলে যথা সময়ে যদি সঠিক চিকিৎসা করানো যায় তবে রোগী পুরোপুরি সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে। সময় মত সঠিক চিকিৎসা গ্রহণ করলে অধিকাংশ রোগী চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে পায়ে হেটে ঘরে ফিরতে পারবেন।

তবে দুঃখজনক হলেও সত্য দেশের বেশিরভাগ মানুষ স্ট্রোককে হার্টের রোগ মনে করেন। যার কারণে আক্রান্ত ব্যক্তির সেবা পেতেও দেরি হয়। এবং সময়মত সঠিক চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হয়। স্ট্রোকের রোগীর যত দ্রুত সম্ভব নিকটস্থ বিশেষায়িত হাসপাতালে যাওয়া প্রয়োজন। বিশেষজ্ঞদের মতে- স্ট্রোকের রোগীকে সাড়ে ৪ ঘণ্টার মধ্যে যদি সঠিক চিকিৎসা দেওয়া যায় তাহলে একজন রোগীর বেঁচে যাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে।

স্ট্রোক মূলত দুই প্রকার। একটি ইস্কেমিক স্ট্রোক, যা রক্ত নালিতে ক্লট বা জমাট বাঁধার কারণে হয়। অন্যদিকে যদি রক্তনালি ছিঁড়ে যায়, ছড়িয়ে পড়া রক্তগুলো মস্তিষ্কে চাপ সৃষ্টি করে এবং মস্তিষ্কে ঠিকমতো রক্ত পৌঁছায় না, তাকে আমরা বলি হেমোরেজিক স্ট্রোক।

থ্রম্বোলাইসিস এবং মেকানিক্যাল থ্রম্বেক্টমি পদ্ধিতের মাধ্যমে স্ট্রোকের রোগীর চিকিৎসা প্রদান করা যেতে পারে। নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
কীভাবে দ্রুত স্ট্রোকের চিকিৎসা পাওয়া যাবে, স্ট্রোক হয়েছে কিনা কীভাবে বুঝবেন? স্ট্রোক হলে করণীয় কী বিস্তারিত জানবো এভারকেয়ার হসপিটাল চট্টগ্রামের স্ট্রোক নিউরোলজি এক্সপার্ট চিকিৎসক ডা. হামিদুল হক’র কাছে।

স্ট্রোক কী?

মূলত মানুষের মস্তিষ্ক বা ব্রেনের রক্তক্ষরণ বা রক্ত চলাচল বন্ধ হওয়াটাই হলো স্ট্রোক। ব্রেনের রক্তক্ষরণ হলেও স্ট্রোক হয় আবার ব্রেনের রক্ত জমাট বাঁধলেও স্ট্রোক হয়।

স্ট্রোক কেন হয়?

ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ এবং কোলেস্টরল জনিত সমস্যার কারণে স্ট্রোক হয়।

স্ট্রোক হলে বোঝার উপায় কী?

স্ট্রোক হওয়ার পূর্বলক্ষণ গুলো হাত, পা, মুখ অথবা শরীরের এক একটা পাশ অবশ হয়ে যাওয়া। তখনই যদি সঠিক হাসপাতালে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে যদি চিকিৎসা নেওয়া যায় তাহলে রোগীর সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে। এমনকি রোগী সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে পায়ে হেঁটে ঘরে ফিরতে পারবেন। মনে রাখতে হবে, যত বেশি দেরী হবে রোগীর ক্ষতির মাত্রা তত বাড়বে।

এক্ষেত্রে স্ট্রোকের প্রথম সাড়ে চারঘন্টার মধ্যে যদি বিশেষায়িত হাসপাতালে যাওয়া যায় এবং যথাযথ চিকিৎসা করা হয় সেক্ষেত্রে রোগী পূর্ণ সুস্থ হবেন। আর যদি দেরী হয় তখন অতীতে অনেক রোগীর ক্ষেত্রে যা ঘটে তাই হবে। অর্থাৎ বেঁচে ফিরলেও পঙ্গু হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকবে।

স্ট্রোক হলে তাৎক্ষণিক করণীয় কী?

স্ট্রোক হলে প্রতি মিনিটে লক্ষ লক্ষ নিউরন মারা যায়। তাই প্রতিটি সেকেন্ড গুরুত্বপূর্ণ। স্ট্রোক হলে তাৎক্ষণিক করণীয় হলো বিশেষায়িত হসপিটালে পৌঁছা। এক্ষেত্রে এভারকেয়ার হসপিটাল চট্টগ্রাম বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সমন্বয়ে আলাদা স্ট্রোক ইউনিট চালু রেখেছে।

বাংলাদেশে স্ট্রোক প্রবণতা কেমন?

ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব নিউরোসাইন্স এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তর যৌথ উদ্যোগে ২০১৭ স্ট্রোকের একটা সমীক্ষা করেছিল। সেই সমীক্ষায় দেখা গেছে যে স্ট্রোকের প্রবণতা বাংলাদেশে অনেক বেশি। সমীক্ষায় বাংলাদেশে ১৭ লক্ষ লোক আছে বলে ওঠে আসে। সে হিসেবে দেশে ১ হাজার জনের মধ্যে প্রায় ১২ জন স্ট্রোকের আক্রান্ত হন।

স্ট্রোক থেকে বাঁচার উপায় কী?

স্ট্রোক থেকে বাঁচতে হলে খাদ্যাভাস, জীবনাচারে শৃঙ্খলা বজায় রাখতে হবে। যেমন ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, কোলেস্টরল নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
খাবার থেকে চিনি, লবন, রেড মিট বাদ দিতে হবে। নিয়মিত ব্যয়াম করতে হবে। মদ, ধুমপান থেকে বিরত থাকতে হবে। আমাদেরকে পরিমিতভাবে আহার করতে হবে। শাকসবজি প্রচুর পরিমাণে খেতে হবে, ফ্রেশ ফ্রুটস খেতে হবে।

স্ট্রোকের চিকিৎসায় দেরী হলে কী হয়?

স্ট্রোকের চিকিৎসা দেরী হয়ে গেলে অনেক রোগী পঙ্গু হয়ে যায়। সেই সময়টা খুবই কঠিন সময় হয়। তাদের খাওয়া-দাওয়া, পায়খানা-প্রসাব কোন কিছুরই ঠিক থাকে না। তখন অনেক রকম থেরাপি দিতে হয়। সেক্ষেত্রে আমাদের দেশে থেরাপিস্টেরও সংকট আছে।
সব মিলে যদি আমরা স্ট্রোকের জন্য আলাদা ইউনিট গড়তে পারি তাহলে আমাদের দক্ষ ডাক্তার তৈরি হওয়ার সাথে সাথে স্ট্রোক চিকিৎসায় দক্ষ নার্স, স্টাফ তৈরি হবে।

স্ট্রোকের চিকিৎসায় উন্নত বিশ্বের সাথে বাংলাদেশের তফাৎ কি?

উন্নত বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশে স্ট্রোক নিয়ে নিয়মিত ক্যাম্পেইন হয়। এবং ব্যক্তি পর্যায়ে মানুষ খুব ভালভাবে স্ট্রোক নিয়ে ধারণা লাভ করে। যার ফলে স্ট্রোকের প্রাথমিক লক্ষণ দেখা দিলে তারা অনেকটাই বুঝতে পারেন এবং দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে চিকিৎসা গ্রহণের সুযোগ থাকে। আমাদের বাংলাদেশে ঠিক এর উল্টো চিত্র! এই দেশের বেশিরভাগ মানুষের স্ট্রোক নিয়ে পর্যাপ্ত জ্ঞান নেই বললেই চলে। তাই কখন স্ট্রোক হয় অনেক সময় তা বুঝতে পারেন না। যার ফলে দ্রুত চিকিৎসা গ্রহণ করা সম্ভবপর হয় না। যার ফলে যা হওয়ার তাই ঘটে। এবং অকাল মৃত্যু এবং বেঁচে থাকলেও রোগী প্যারালাইসিস-সহ বিভিন্ন জটিলতায় ভুগেন।

উত্তরণের উপায় কি?

সোজাকথা এই স্ট্রোক নিয়ে মানুষের মধ্যে সচেতনা সৃষ্টি করতে হবে। এজন্য নিয়মিত স্ট্রোক নিয়ে মিডিয়াসহ বিভিন্ন ধরনের ক্যাম্পেইন করা যেতে পারে। ব্যক্তি পর্যায়ে মানুষকে সুনির্দিষ্ট ধারণা দিতে হবে। তাহলে নুন্যতম একটি পরিবারের একজন সদস্যের যদি স্ট্রোক সম্পর্কে জ্ঞান থাকে তাহলে তিনি অন্তত তার পরিবারের জন্য সুরক্ষা কবজ হতে পারেন। কর্পোরেট পর্যায়ে অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়ে স্ট্রোক সংক্রান্ত বিভিন্ন ধরনের কর্মশালা করা যেতে পারে।

প্রতিটি হাসপাতালে বিশেষায়িত স্ট্রোক ইউনিট চালু করা। যেখানে শুধুমাত্র স্ট্রোকের রোগীরাই থাকবেন। এই ইউনিটে স্ট্রোক নিয়ে কাজ করা অভিজ্ঞ ডাক্তার এবং নার্স থাকবেন। যার ফলে রোগীদের দ্রুত সেবা নিশ্চিতের পাশাপাশি সার্বিকভাবে স্ট্রোকের রোগীদের চিকিৎসার বিষয়ে ভালো সুফল পাওয়া যাবে। এই রকম আলাদা স্ট্রোক ইউনিট থাকলে রোগীদের দ্রুত চিকিৎসা দেয়া সম্ভব। গবেষণায় দেখা গেছে- স্ট্রোক ইউনিটে স্ট্রোক রোগীদের দ্রুত চিকিৎসা দেয়া সম্ভব হলে রোগীর মৃত্যুর হার কিংবা পঙ্গুত্বের হার কম হয়।

স্ট্রোকে আক্তান্ত রোগীদের Physiotherapist, Speech & Language Therapist এর পাশাপাশি Occupational Therapist এর খুবই প্রয়োজন। সময়মত চিকিৎসা গ্রহণ করা না গেলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে স্ট্রোকের রোগীরা প্যারালাইসিস-সহ অনেক জটিলতায় ভুগেন। যার ফলে নিজেদের কাজ করার সামর্থ্য হারিয়ে ফেলেন। একজন Occupational Therapist এই রোগীদের স্বাভাবিক জীবন-যাপনের জন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দিতে পারেন। যেহেতু এই স্ট্রোক একটি লাইফ চেঞ্জিং ইভেন্ট। এই রোগীদের জন্য নিউরো সাইকোলজিস্ট এরও প্রয়োজন হতে পারে।

শহরে কতগুলো হাসপাতালে স্ট্রোকের চিকিৎসা সক্ষমতা রয়েছে সেই বিষয়ে সাধারণ মানুষ-কে জানানোর ব্যবস্থা করতে হবে। এই জন্য প্রয়োজনীয় তালিকা করে তা জনসম্মুখে প্রকাশের করা। এবং যাদের নেই তাদের সক্ষমতা সৃষ্টির ব্যবস্থা করা । চট্টগ্রাম নগরীর কোন কোন হাসপাতালে থ্রম্বোলাইসিস চিকিৎসা প্রদানের সক্ষমতা আছে তা মানুষকে জানতে হবে।

জাতীয়ভাবে/সরকারিভাবে স্ট্রোক রোগীদের একটি তালিকা/ডাটাবেইজ সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা। তাহলে এই ধরণের পরিসংখ্যানের আলোকে রিসার্চ উইং সৃষ্টি করা যেতে পারে।

স্ট্রোকের চিকিৎসা পদ্ধতি কি?

একজন ব্যক্তি স্ট্রোক করলে প্রতি মিনিটে প্রায় ১৯ লক্ষ ব্রেন সেল তথা নিউরন মরে যায় কিংবা নষ্ট হয়ে যায়। ব্রেনে রক্ত চলাচল কমে আসলে তখনই স্ট্রোক এর উপসর্গ দেখা যায়।
তবে আক্রান্ত হওয়ার ছয় ঘণ্টা পর আসলে চিকিৎসা করিয়েও লাভ নাই।
উল্লেখ্য, ইস্কেমিক স্ট্রোকের পর রোগীকে সাড়ে চার ঘণ্টার মধ্যে হাসপাতালে আনা সম্ভব হলে থ্রম্বোলাইসিস (ইনজেকশনের মাধ্যমে জমাটবদ্ধ রক্ত সরানো) এবং থ্রম্বোকটমির (স্টেন্টের মাধ্যমে জমাটবদ্ধ রক্ত বের করা) মাধ্যমে চিকিৎসা দেওয়া হয়। তবে এ চিকিৎসা সম্পূর্ণ নির্ভর করে রোগীর অবস্থা, স্ট্রোকের ধরন ও রোগী কত দ্রুত হাসপাতালে পৌঁছেছেন তার ওপর।

থ্রম্বোলাইসিস- এ রোগীকে তাৎক্ষনিক Alteplase কিংবা Tnecteplase নামক ইনজেকশন পুশ করা হয়। স্ট্রোকের প্রথম চার ঘণ্টার মধ্যে এই ইনজেকশন পুশ করা গেলে একজন রোগীর জীবন বেঁচে যেতে পারে। এছাড়াও রোগী প্যারালাইসিসের মত বড় ধরণের জটিলতা থেকে রক্ষা পেতে পারেন। এবং সঠিক সময়ে এই ইনজেকশন পুশ করা গেলে রোগী সুস্থ হয়ে হেঁটে বাড়ি যেতে পারবেন। থ্রম্বোলাইসিস চিকিৎসা পদ্ধতি এভারকেয়ার হাসপাতাল চট্টগ্রাম প্রদান করতে সক্ষম।

এই ইনজেকশন কিছুটা ব্যয়বহুল। যার মূল্য প্রায় ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা হতে পারে। অনেক মানুষের সাধ্যের মধ্যে নাও হতে পারে। সেই দিক বিবেচনায়, সরকারিভাবে এই ইনজেকশন সুলভ মূল্যে প্রদানের ক্ষেত্রে সরকার একটি উদ্যোগ নিতে পারে। যেন তা সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে থাকে। এই বিষয়ে সরকারি/বেসরকারিভাবে একটি ফান্ড গঠন করা যেতে পারে।
তাই একজন স্ট্রোকে আক্রান্ত রোগীর জন্য নির্দিষ্ট সময়ে চিকিৎসা নিশ্চিত করা আবশ্যক না হলে যে কোন বিপদ হতে পারে।

মেকানিক্যাল থ্রম্বেক্টমি মূলত রক্তনালির ভেতরে জমাট বাঁধা রক্ত সরিয়ে দেওয়ার চিকিৎসা। যাতে রক্তের প্রবাহ বৃদ্ধি পায়, স্বাভাবিক প্রবাহ অব্যাহত থাকে এবং যেসব জায়গায় রক্ত জমাট বেঁধে মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চালিত হচ্ছে না, তা সরিয়ে দেওয়া যায়। ফলে মস্তিষ্ক রক্ত, নিউট্রিশন ও অক্সিজেন ফিরে পায়। এবং রক্তের স্বাভাবিক প্রবাহ ঠিক থাকে।

মেকানিক্যাল থ্রম্বেক্টমি পদ্ধতির মাধ্যমে প্রথমে মস্তিষ্কে এনজিওগ্রাম করা হয়। তারপর যে সব জায়গায় রক্ত জমাট বেঁধে গেছে, সেখানে একটি টিউব নিয়ে যাওয়া হয় এবং ক্ষুদ্র জালিকার সাহায্যে ক্লটটিকে শোষণের মাধ্যমে বের করে নিয়ে আসা হয়। বাংলাদেশে এই চিকিৎসা আগে ছিল না। ইন্টারভেনশনাল নিউরোলজি ও ব্রেনের এনজিওগ্রাম বিষয়গুলো ডেভেলপমেন্টের কারণে বাংলাদেশেই এই চিকিৎসা করা সম্ভব হচ্ছে।

থ্রম্বোলাইসিস বিষয়ে চিকিৎসকদেরকে মধ্যে সচেতনা তৈরি করতে হবে যাতে করে থ্রম্বোলাইসিস চিকিৎসা উপযোগী রোগীদের সনাক্ত করে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারে এবং মেকানিক্যাল থ্রম্বোক্টিমির বিষয়ে চিকিৎসকদের জন্য দেশে-বিদেশে উন্নত ট্রেইনিং এর ব্যবস্থা করতে হবে।

বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরিচিতিঃ

ডা. হামিদুল হক ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস সম্পন্ন করেন এবং বারডেম হাসপাতালের আইসিইউ বিভাগে প্রায় ৫ বছর কাজ করেন। যুক্তরাজ্যে ২০ বছরেরও বেশি কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে এবং তিনি হাইপারএকিউট স্ট্রোক কেয়ার এবং নিউরোরিহ্যাবিলিটেশন পরিচালনায় বিশেষজ্ঞ।

তিনি ইউরোপীয় স্ট্রোক সংস্থা (ESO), ইউরোপীয় সোসাইটি অফ নিউরোসোনোলজি অ্যান্ড সেরিব্রাল হেমোডাইনামিক্স (ESNSCH), ব্রিটিশ আইরিশ অ্যাসোসিয়েশন অফ স্ট্রোক ফিজিশিয়ানস (BIASP) এবং ইউরোপীয় সোসাইটি অফ মিনিমালি ইনভেসিভ নিউরোলজিক্যাল থেরাপি (ESMINT) এর সদস্য।

লিভার সুস্থ রাখতে যা করবেন

লিভার সুস্থ রাখতে যা করবেন

লিভার সুস্থ রাখতে যা করবেন

লিভার বা যকৃত মানবদেহের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ, যার প্রধান কাজ হলো রক্ত পরিশোধন ও ক্ষতিকর টক্সিন বের করে শরীরকে সুস্থ রাখা। লিভারের কার্যকারিতা হ্রাস পেলে ক্ষতিকর টক্সিন শরীরে জমে যায়। এতে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিকল হয়ে যেতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, জীবনযাত্রায় অস্বাভাবিকতা ও অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের কারণে লিভারে নানা রোগ দেখা দেয়।

অতিরিক্ত ওজন, ডায়াবেটিস, রক্তে অতিরিক্ত মাত্রায় ট্রাইগ্লিসারাইড, এইচডিএল-এর মাত্রা হ্রাস বা বৃদ্ধি, কার্বোহাইড্রেট ও চর্বিজনিত সমস্যার কারণে লিভার ক্ষতিগ্রস্থ হয়। লিভার ক্ষতিগ্রস্ত হলে কিছু উপসর্গ লক্ষ্য করা যায়, যেমন; চোখ হলুদ বর্ণের হয়ে যাওয়া, পেটে তরল জমে ফুলে যাওয়া, অতিরিক্ত ক্লান্তি-অবসাদ অনুভব করা, শরীরে ভিন্ন ভিন্ন স্থান চুলকানো, হঠাৎ হঠাৎ কথা ভুলে যাওয়া ইত্যাদি।

উল্লেখ্য, ভাইরাস বা জীবাণু আক্রমণে লিভার সংক্রমিত হলে লিভারে প্রদাহ হয়, যা লিভারের কার্যক্ষমতা হ্রাসে ভূমিকা রাখে। লিভার ইনফেকশন বা যকৃত সংক্রমণের সবচেয়ে বেশি প্রচলিত ধরন হলো, হেপাটাইটিস ভাইরাস। আক্রান্ত ব্যক্তির মলের সংস্পর্শে আসলে বা দূষিত খাবার-পানি শরীরে গেলে ‘হেপাটাইটিস এ’ ছড়ায়। অন্যদিকে, হেপাটাইটিস বি এবং সি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে রক্ত, বীর্যসহ অন্যান্য শারীরিক তরলের মাধ্যমে দেহে প্রবেশ করতে পারে। তাই লিভার ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার কোন উপসর্গ দেখা দিলে হেপাটাইটিস নিয়ে সতর্ক থাকতে হবে।

বিশেষজ্ঞ পরামর্শ

বিশেষজ্ঞরা লিভার সুস্থ রাখার জন্য মূলত পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। লিভারকে সুস্থ রাখতে রসুন ভীষণ উপকারী। রসুনে অ্যান্টিবায়োটিক, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও অ্যান্টি-ফাঙ্গাল জাতীয় উপাদান রয়েছে। নিয়মিত রসুন খেলে লিভার থেকে এক ধরনের বিশেষ এনজাইম তৈরি হয়, যা শরীর থেকে টক্সিন নিষ্কাশনে সাহায্য করে।

এছাড়া কাঁচা হলুদ, বিভিন্ন ফলমূল (বিশেষ করে আপেল, পেঁপে, আঙ্গুর), সবুজ শাকসবজি, সয়াবিন, ফাইবার সমৃদ্ধ খাদ্য, আমলার রস, গ্রিন-টি, কফি ইত্যাদি খেলে বা পান করলে লিভার সুস্থ থাকে। তবে কিছু খাবার বর্জন করাও প্রয়োজন। যেমন; শর্করা জাতীয় খাবার কম খেতে হবে। যাদের মদ্যপানের অভ্যাস রয়েছে তাদের লিভার বিশেষ ক্ষতির ঝুঁকিতে রয়েছে।

এছাড়া সফট ড্রিংকস, চকোলেট, আইসক্রিম, ভাঁজাপোড়া খাবার, কাঁচা লবণ, বাটার-ঘি, অতিরিক্ত চিনি, রেডমিট ইত্যাদি খাবার যতটা সম্ভব বর্জন করা উচিৎ। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ মতে খাদ্যতালিকা নির্ধারণ করা যেতে পারে। স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন ও খাদ্যাভ্যাসের মাধ্যমে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখলে ফ্যাটি লিভারের ঝুঁকি কমানো সম্ভব। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, সামগ্রিক ওজনের ১০% কমানো গেলে ফ্যাটি লিভারের পরিমাণ ৩-৫% কমানো সম্ভব।

 

ডাঃ মুশফিকুল আবরার
সহযোগী কনসালটেন্ট
হেপাটোলজি, এভারকেয়ার হসপিটাল চট্টগ্রাম

 

স্ট্রোক: কি, কেন, কীভাবে?

হার্টের রোগ আর স্ট্রোক এক নয়

স্ট্রোক: কি, কেন, কীভাবে?

স্ট্রোক মস্তিষ্কের একটি রোগ। আমাদের মস্তিষ্কের রক্তনালীতে জটিলতার কারণে এই রোগ দেখা দেয়। রক্তনালীতে রক্ত জমাট বেঁধে স্ট্রোক হয় এবং ব্রেইনের একাংশ অক্ষম হয়ে গেলে নানান পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যায়। অনেকেই স্ট্রোককে হার্টের রোগ মনে করেন, যা একদমই ভুল। এই ভুল ধারণার কারণে রোগীরা বাড়তি ঝুঁকির সম্মুখীন হয়।

হার্টের রোগ মনে করার ফলে কেউ স্ট্রোক করলে তাকে হার্টের চিকিৎসক বা হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগে নিয়ে যাওয়া হয়। এতে করে মূল চিকিৎসা লাভে বিলম্ব হয় আর তখনই দেখা দেয় জটিলতা। তাই সকলের এই বিষয়ে সচেতন হতে হবে। হঠাৎ করে ভারসাম্যহীন হয়ে পড়লে, হঠাৎ ব্ল্যাকআউট হলে, হাত-পা দুর্বল হয়ে পড়লে, মুখের কথা জড়িয়ে গেলে, সবশেষ জ্ঞান হারালে বুঝতে হবে স্ট্রোক হয়েছে। সেক্ষেত্রে, রোগীকে অতিসত্বর নিকটস্থ হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।

স্ট্রোকের ফলে যদি রক্ত জমাট বাঁধে তবে তার সাড়ে ৪ ঘন্টার মধ্যে রোগীকে চিকিৎসা দিতে পারলে ঝুঁকি অনেকটুকুই কমে যায়। তবে যদি ব্রেইনের ভেতর রক্তক্ষরণ হয় তাহলে ১ ঘন্টার মধ্যে চিকিৎসা নিশ্চিত করলে রোগীর সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এই সময়কে বলা হয় ‘গোল্ডেন আওয়ার’। আমাদের দেশের হাসপাতালগুলোয় স্ট্রোক ম্যানেজমেন্ট সহজলভ্য করা অত্যন্ত জরুরি।

হার্টের রোগীদের জন্য যেমন কোরোনারি কেয়ার ইউনিট বা সিসিইউ থাকে, তেমনি স্ট্রোকের রোগীদের জন্য প্রয়োজন স্ট্রোক ম্যানেজমেন্ট ফ্যাসিলিটি বা হাইপার অ্যাকিউট স্ট্রোক ইউনিট। এখানে রোগের ধরন, কার কেমন চিকিৎসা প্রয়োজন বা কার সার্জারি প্রয়োজন, সার্বিক পর্যবেক্ষণ ইত্যাদি বিষয়গুলো নিশ্চিত করা হয়। সুতরাং, সংশ্লিষ্টদের স্ট্রোক ম্যানেজমেন্ট নিয়ে সচেতন হওয়া প্রয়োজন।

অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ-রক্তচাপ স্ট্রোকের অন্যতম প্রধান কারণ। যারা নিয়মিত ওষুধ সেবন করে না, অথবা একটু সুস্থ অনুভব করলে বন্ধ করে দেয় তাদের স্ট্রোকের ঝুঁকি বেড়ে যায়। এছাড়া ধূমপান বা মাদক সেবন, অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা ও মানসিক চাপ, অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, রক্তে অতিরিক্ত চর্বি বা অতিমাত্রায় কোলেস্টেরলের উপস্থিতি, স্থূলতা বা অতিরিক্ত মোটা হওয়া, অতিরিক্ত লবণ খাওয়া, অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন ইত্যাদি স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়।

অনেকের স্ট্রোক পরবর্তী সময়ে প্যারালাইসিস হতে পারে। এক্ষেত্রে ফিজিওথেরাপি সবচেয়ে কার্যকরী চিকিৎসা পদ্ধতি। এটি সহজলভ্য করতে হবে। দেশে দক্ষ ফিজিওথেরাপিস্টের সংখ্যা বাড়াতে হবে। বিশেষ করে, দেশের প্রান্তির অঞ্চলগুলোয় এই বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। বিগত বছরগুলোর তুলনায় দিন দিন স্ট্রোকের হার বহু অংশে বৃদ্ধি পাচ্ছে। যেকোন বয়সেই স্ট্রোক হতে পারে। তাই সচেতনতা ও পর্যাপ্ত চিকিৎসা সুবিধাদি বৃদ্ধির মাধ্যমে দেশকে স্ট্রোকের ভয়াবহতার হাত থেকে রক্ষা করা সম্ভব।


সিনিয়র কনসালটেন্ট
নিউরোলজি বিভাগ
এভারকেয়ার হসপিটাল চট্টগ্রাম


ডা. হামিদুল হক ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস সম্পন্ন করেন এবং বারডেম হাসপাতালের আইসিইউ বিভাগে প্রায় ৫ বছর কাজ করেন। যুক্তরাজ্যে ২০ বছরেরও বেশি কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে এবং তিনি হাইপারএকিউট স্ট্রোক কেয়ার এবং নিউরোরিহ্যাবিলিটেশন পরিচালনায় বিশেষজ্ঞ।

তিনি ইউরোপীয় স্ট্রোক সংস্থা (ESO), ইউরোপীয় সোসাইটি অফ নিউরোসোনোলজি অ্যান্ড সেরিব্রাল হেমোডাইনামিক্স (ESNSCH), ব্রিটিশ আইরিশ অ্যাসোসিয়েশন অফ স্ট্রোক ফিজিশিয়ানস (BIASP) এবং ইউরোপীয় সোসাইটি অফ মিনিমালি ইনভেসিভ নিউরোলজিক্যাল থেরাপি (ESMINT) এর সদস্য।

ব্যথাহীন প্রসব: কি, কেন, কীভাবে?

ব্যথাহীন প্রসব কি কেন গুরুত্বপূর্ণ | এভারকেয়ার হাসপাতাল চট্টগ্রাম

ব্যথাহীন প্রসব: কি, কেন, কীভাবে?

বলা হয়, একজন নারীর প্রসবকালীন ব্যথা নাকি শরীরের ৫৬টি হাড় একসাথে ভাঙার সমপরিমাণ হয়ে থাকে। প্রসবকালীন ব্যথার সঙ্গে অন্যকোন ব্যথার তুলনা করা যায় না। বর্তমান যুগে অধিকাংশ নারী এই ব্যথা নিয়ে আতঙ্কে থাকেন, ফলে বাড়তি স্বাস্থ্যঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও অনেকেই স্বাভাবিক প্রসব (নরমাল ডেলিভারি) এড়িয়ে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সন্তান প্রসব করাতে চান।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) তথ্য বলছে, ১৯৯৫-৯৬ সালে আমেরিকায় অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সন্তান জন্মদানের হার ছিল ২০.৭ শতাংশ, যা ২০১৪-১৫ সাল নাগাদ ৩২.২ শতাংশে এসে পৌঁছায়। বাংলাদেশে বর্তমান অস্ত্রোপচার জনিত প্রসব বা সিজারিয়ান অপারেশনের হার প্রায় ৪৫ শতাংশ, যার মূল কারণ নারীদের প্রসবকালীন ব্যথাভীতি।

তবে নারীদের জন্য স্বস্তির বার্তা নিয়ে এসেছে বিশ্বের চিকিৎসক-বিজ্ঞানীরা। চিকিৎসাবিজ্ঞানে প্রযুক্তির সঠিক বাস্তবায়নের ফলে ব্যথামুক্ত প্রসবও এখন সম্ভব। বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে ইতোমধ্যেই অস্ত্রোপচার ছাড়া সন্তান প্রসব হচ্ছে, যা নিরাপদ ও ব্যথামুক্ত। যুগান্তকারী এই পদ্ধতিগুলোর মধ্যে এপিডিউরাল পদ্ধতি অন্যতম। এটি মূলত নরমাল ডেলিভারির মতোই একটি প্রক্রিয়া তবে ব্যথামুক্ত।

এ পদ্ধতিতে সাধারণত মেরুদণ্ডে কিছু ওষুধ প্রয়োগের মাধ্যমে (সিজারিয়ান অস্ত্রোপচারের মতো) প্রসব চলাকালীন মায়েদের ব্যথামুক্ত রাখা হয়। সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটি স্বয়ংক্রিয় কম্পিউটারের মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করা হয়। এই সময়ে মা হাঁটাচলা করতে, কথাবার্তা বলতে, এমনকি হালকা খাবারও খেতে পারেন। আবার সন্তানের নড়াচড়াও মা বুঝতে পারেন।

এই সময়ে ব্যথা কমানোর জন্য ওষুধ খেলে তা মা থেকে শিশুর রক্তে প্রবাহিত হওয়ার কোন ঝুঁকি নেই, নেই পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়াও। এই পদ্ধতি ব্যবহারে দ্রুত ও দীর্ঘসময়ের জন্য ব্যথা কমানো যায়। এমনকি অস্ত্রোপচারের প্রয়োজনে হলেও দ্রুত অবশ করা যায়। আবার স্বাভাবিক প্রসবের পর মা তাৎক্ষণিকভাবে নবজাতককে বুকের দুধ খাওয়াতে পারেন।

ব্যথামুক্ত স্বাভাবিক প্রসবের জন্য অত্যাধুনিক প্রি-ডেলিভারি, ডেলিভারি ও পোস্ট-ডেলিভারি ব্যবস্থা, সিনক্রোনাইজড অভিজ্ঞ লেবার ও অ্যানেসথেসিয়া টিম, ক্লোজ মনিটরিং, জরুরি চিকিৎসা ব্যবস্থা ইত্যাদি সুবিধা থাকা আবশ্যক। তবেই সুস্থ ও নিরাপদ প্রসবের নিশ্চয়তা দেওয়া যায়। এই পদ্ধতিতে যেই ওষুধ ব্যবহৃত হয়, সেটি এপিডিউরাল অ্যানেসথেসিয়া নামে পরিচিত। মেরুদণ্ডের ভেতরে ছোট একটি ক্যাথেটার ঢুকিয়ে এই ওষুধ দেওয়া হয়।

এটি অনেকটা সাধারণত সিজারিয়ান অপারেশনের সময় ব্যবহৃত স্পাইনাল অ্যানেসথেসিয়া মতো, তবে এই সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটির জন্য চাই বিশেষ প্রশিক্ষণ। এছাড়াও, নবজাতকের নিবিড় পরিচর্যার জন্য বিশ্বমানের এনআইসিইউ ও ইনফেকশন কন্ট্রোল প্রোটোকল ঝুঁকিমুক্ত প্রসব নিশ্চিত করে।

বিগত বছরেগুলোর তুলনায় বর্তমানে প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে বেশ উন্নতি করেছে বাংলাদেশ। পিছিয়ে নেই স্বাস্থ্য বা চিকিৎসা খাতেও। উন্নত প্রযুক্তি, অভিজ্ঞ চিকিৎসক, আধুনিক চিকিৎসা-সরঞ্জামের মাধ্যমে দেশেই এখন বিশ্বমানের স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া যাচ্ছে। এদের মধ্যে বন্দরনগরীর সর্ববৃহৎ হাসপাতাল এভারকেয়ার হসপিটাল চট্টগ্রাম অন্যতম। বিশ্বমানের স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের সকল ব্যবস্থাই রয়েছে এই হাসপাতালে। তাই প্রসব ব্যথা নিয়ে আতঙ্কিত নয়, বরং মাতৃত্বের আশীর্বাদে হোন উচ্ছ্বসিত।

ডাঃ সানজিদা কবির
কনসালটেন্ট- অবস্ এন্ড গাইনী
এভারকেয়ার হসপিটাল চট্টগ্রাম।

রমজানে হাইড্রেটেড থাকবেন কীভাবে

রমজানে নিরাপদে হাইড্রেটেড থাকার উপায়, ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা এড়ানোর পরামর্শ এভারকেয়ার হাসপাতাল, চট্টগ্রাম থেকে।

রমজানে হাইড্রেটেড থাকবেন কীভাবে

পবিত্র রমজান মাসে সকলেই তুলনামূলক কম পানি পান করেন। তার ওপর এবারের রমজান পড়েছে বৈশাখ মাসে। এই সময়টায় প্রায়ই অসহনীয় গরম আবহাওয়া বিরাজ করে। গরমের তীব্রতা হোক কিংবা সিয়াম সাধনা, অনেকেই এই সময়ে ডিহাইড্রেশন বা পানিশূন্যতায় ভোগেন, যা শরীরের জন্য কোনোভাবেই ভালো লক্ষণ নয়।

গলা শুকিয়ে যাওয়া, প্রস্রাব কমে যাওয়া, ক্লান্ত লাগা, কোষ্ঠকাঠিন্য, দুর্বলতা, বমিভাব, মাথাব্যথা, ত্বক শুষ্ক হয়ে যাওয়া ইত্যাদি ডিহাইড্রেশনের অন্যতম কিছু লক্ষণ। ডিহাইড্রেশনের কারণে কিডনি, মস্তিষ্ক, লিভার, পাকস্থলী, ফুসফুসের মতো অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলোতে ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে।

শরীরে প্রয়োজনীয়তার দিক দিয়ে অক্সিজেনের পরই পানির স্থান। একজন ব্যক্তিকে প্রতিদিন কমপক্ষে ২.৭ লিটার বা ৮-১০ গ্লাস পানি পান করার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু সারাদিন রোজা রাখার ফলে দিনের অর্ধেক সময় আমরা পানি পান করি না। ফলে সাধারণ দিনে শরীর যে পরিমাণ পানি পেত, তা না পাওয়ায় শরীরে পানির ঘাটতি দেখা দেয়। আমরা যখন বাইরে যাই তখন আমাদের শরীর তুলনামূলক বেশি সক্রিয় থাকে।

গরম এবং আর্দ্র আবহাওয়ায় শরীর অনবরত ঘামতে থাকে, ফলে শরীরে পানি ও লবণের মাত্রা কমে গিয়ে পানিশূন্যতা দেখা দেয়। আপনার শরীরে পানির পরিমাণ ঠিক আছে কিনা তা বোঝার সবচেয়ে ভালো উপায় হলো প্রস্রাবের রং কেমন আছে সেটি লক্ষ্য করা। যদি প্রস্রাবের রং হলুদ হয়, তাহলে বুঝতে হবে আপনার শরীরে পানি স্বল্পতার সৃষ্টি হয়েছে।

যতক্ষণে আমরা তৃষ্ণা অনুভব করি, ততক্ষণে আমাদের শরীর থেকে প্রায় ২ কাপের মত পানি বের হয়ে যায়। শরীরে পানির অভাব দেখা দিলে কোষগুলো হাইপোথ্যালামাসে একটি সংকেত প্রেরণ করে, যা ভ্যাসোপ্রেসিন নামক হরমোন নিঃসরণ করে। পর্যাপ্ত পানি পানের ফলে শরীরে ইলেক্ট্রোলাইটের ভারসাম্য ঠিক থাকে। শরীরে রক্ত তৈরি করতেও প্রয়োজন হয় তরল পদার্থ। শরীরে পানির অভাব দেখা দিলে রক্তের স্তরও হ্রাস পায়। যার ফলে নিম্ন রক্তচাপ, দুর্বলতা ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিতে পারে।

ডিহাইড্রেশন থেকে বাঁচার জন্যে আমাদের ইফতারে কোমল পানীয়, চা-কফি জাতীয় পানীয় যথাসম্ভব বর্জন করতে হবে। কারণ এসবে বিদ্যমান চিনি, সোডিয়াম এবং অন্যান্য উপাদান শরীরের টিস্যু থেকে পানি শুষে নেয়। রমজানে আমাদের এমন খাদ্যদ্রব্য নির্বাচন করা উচিত যা আমাদের শরীরের পানির ঘাটতি পূরণে সক্ষম।

ইফতারে শসা, টমেটো, বাঁধাকপি, ফুলকপি, লেটুসপাতা ইত্যাদি সবজি এবং আখ, তরমুজ, ডাবের পানি, স্ট্রবেরি, আপেল, কমলা/ মাল্টা ইত্যাদি ফলমূল শরীরে পানির ঘাটতি পূরণে ভীষণ কার্যকরী। এসব সবজি এবং ফলমূলের অধিকাংশই পানি দ্বারা পূর্ণ। এছাড়া বিভিন্ন ফলের জুসও পান করা যেতে পারে। তাই রমজানে সুস্থ-সবল ও হাইড্রেটেড থাকতে ইফতারের পর ঘন ঘন পানি পান করার অভ্যাস করুন।

ডা. মোহাম্মদ ফয়সাল আজিজ
সিনিয়র কনসালটেন্ট, ইন্টারনাল মেডিসিন অ্যান্ড ক্রিটিক্যাল কেয়ার
এভারকেয়ার হসপিটাল চট্টগ্রাম

যেমন হতে পারে স্ট্রোকের চিকিৎসা

স্ট্রোকের চিকিৎসা Stroke Treatment

যেমন হতে পারে স্ট্রোকের চিকিৎসা

বিশ্বব্যাপি স্ট্রোকে আক্রান্তের হার দিন দিন বেড়েই চলেছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে সচেতনতার অভাবেই স্ট্রোকে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশে বর্তমানে ১৫ থেকে ২০ লক্ষ রোগী স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়েছে বা ঝুঁকিতে রয়েছে এবং প্রতি হাজারে গড়ে ৩ থেকে ৫ জন রোগী স্ট্রোকের শিকার হচ্ছে।

এছাড়া, নন কমিউনিকেবল ডিজিজ হিসেবে স্ট্রোক এখন দ্বিতীয় মৃত্যুর কারণ হিসেবে গণ্য হয় এবং যারা জীবিত থাকেন তারাও নানান শারীরিক প্রতিবন্ধিতায় ভুগেন বা ঝুঁকিতে থাকেন।

মস্তিষ্কের অভ্যন্তরীণ রক্তনালীগুলোর মধ্যে রক্ত সঞ্চালন কমে গেলে বা রক্তনালীতে চর্বি জমা হলে (মূলত থ্রম্বো এম্বোলিজমের কারণে হয়ে থাকে) তা ইস্কেমিক স্ট্রোক হিসেবে পরিচিত। অন্যদিকে, মস্তিষ্কের অভ্যন্তরীণ রক্তনালী ছিঁড়ে গিয়ে রক্তক্ষরণ হলে ও আক্রান্ত স্থানের টিস্যুগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করলে তাকে হেমোরেজিক স্ট্রোক বলা হয়। এটি রোগীর বিভিন্ন শারীরিক সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

স্ট্রোকের উপসর্গ

ইস্কেমিক ও হেমোরেজিক উভয়েরই স্ট্রোকের উপসর্গই এক, যা প্রাথমিকভাবে পার্থক্য করা সম্ভব হয়ে ওঠেনা। শরীরের এক পাশে ঝিম ঝিম করা বা অবশ মনে হওয়া, দুর্বল অনুভব করা, হঠাৎ করে জ্ঞান হারিয়ে ফেলা, মুখ বেঁকে যাওয়া বা আক্রান্ত পাশের হাত-পা নাড়াতে সমস্যা হওয়া ইত্যাদি উভয় স্ট্রোকেরই প্রাথমিক কিছু উপসর্গ। এমতাবস্থায় তাই রোগ নির্ণয়ের জন্য সিটি স্ক্যান বা এমআরআই করা অতিব জরুরি। কারণ উপসর্গ এক হলেও দুই রোগের চিকিৎসা সম্পূর্ণ ভিন্ন।

ইস্কেমিক স্ট্রোকের ক্ষেত্রে মেডিসিন বা সার্জারির মাধ্যমে রোগীর মস্তিষ্কে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক বা বৃদ্ধি করা যেতে পারে। তবে হোমোরেজিক স্ট্রোকের ক্ষেত্রে রক্ত জমাট ভাঙার জন্য অপারেশনের প্রয়োজন পড়তে পারে। রিহ্যাবিলিটেশন চিকিৎসার ক্ষেত্রে যেমন রোগীর ফিজিক্যাল বিহ্যাবিলিটেশন প্রয়োজন, তেমনই প্রয়োজন অকুপেশনাল রিহ্যাবিলিটেশন।

আবার অনেক সময় দেখা যায় রোগীর কথা বলতে অসুবিধা দেখা দেয়, যা মেডিকেল পরিভাষার এফাশিয়া হিসেবে পরিচিত। সেক্ষেত্রে প্রয়োজন স্পিচ অ্যান্ড ল্যাঙ্গুয়েজ রিহ্যাবিলিটেশন। রিহ্যাবিলিটেশন চিকিৎসা মাল্টিডিসিপ্লিনারি টিমের তত্ত্বাবধায়নে হওয়া উচিৎ, যা রোগীর সার্বিক অবস্থা ও অসুবিধা অনুযায়ী উপকারী এবং এর মাধ্যমে রোগীর দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠার সম্ভাবনা বেশি থাকে।

স্ট্রোকের কারণে রোগী অজ্ঞান হয়ে গেলে তাৎক্ষণিকভাবে রোগীর শ্বাসনালি, শ্বাস-প্রশ্বাস ও রক্ত সঞ্চালন সচল রাখার (সিপিআর থেরাপি এক্ষেত্রে বিশেষ কার্যকরী) চেষ্টা করতে হবে। রোগীকে একদিকে কাত করেবালিশ ছাড়া মাথা নিচু করে শোয়াতে হবে। চোখ ও চোখের প্রতিক্রিয়া বা সংকেতের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। মূত্রথলির যত্ন নিতে হবে ও প্রয়োজনে ক্যাথেটার ব্যবহার করতে হবে। স্ট্রোকের রোগীর দীর্ঘমেয়াদী সুরক্ষা নিশ্চিত করতে ফিজিওথেরাপি অন্যতম সেরা সমাধান।

যথাযথ পর্যবেক্ষণ এবং সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে, জটিলতার ঝুঁকি ছাড়াই স্ট্রোক আক্রান্ত রোগীকে সুস্থ করে তোলা সম্ভব। তবে কেউ যেন স্ট্রোক আক্রান্ত হয়ে জীবন ঝুঁকিতে না পড়ে সেই বিষয়েও বাড়তি সতর্কতা প্রয়োজন। একদিকে যেমন যথা সম্ভব নিজেকে দুশ্চিন্তামুক্ত রাখা প্রয়োজন, অন্যদিকে পরিবার-পরিজন, বন্ধু-আত্মীয়দের উচিৎ সর্বদা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত ব্যক্তির পাশে থাকা। ভয় নয়, সচেতনতাই বাঁচাতে পারে জীবন।

 

ডা. মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন
কনসালটেন্ট, নিউরোলজি বিভাগ
এভারকেয়ার হসপিটাল চট্টগ্রাম

 

কিডনি জটিলতা নিরাময়ে চাই সচেতনতা

কিডনি জটিলতা Kidney complications

কিডনি জটিলতা নিরাময়ে চাই সচেতনতা

বিশ্বের ৮৫০ মিলিয়ন মানুষ দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগে আক্রান্ত, যার মধ্যে প্রতিবছর ২.৪ মিলিয়ন মানুষ মৃত্যুবরণ করেন। বিশ্বব্যাপি প্রতি ১০ জনে ১ জন এবং বাংলাদেশে প্রতি ৭ জনে ১ জন কিডনি রোগে আক্রান্ত। দিন দিন বিভিন্ন কারণে কিডনি রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পাচ্ছে। অথচ একটু সচেতন হলেই আমরা কিডনি সুস্থ রাখতে পারি

কিডনির মানবশরীরে রক্ত প্রবাহ পরিচালনা করে। কিডনিতে প্রায় ১০ লক্ষ নেফ্রন নামক উপাদান থাকে, যা রক্তে জমে থাকা দূষিত ও ক্ষতিকারক পদার্থ আলাদা করে প্রস্রাবের মাধ্যমে শরীর থেকে বের করে দেয়। এর পাশাপাশি শরীরের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করা, বিভিন্ন হরমোন তৈরি বা তৈরিতে সাহায্য করা, রক্তকনা তৈরিতে সাহায্য করা, শরীরের হাড় সুস্থ রাখা ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ কাজও কিডনি দ্বারা হয়। তাই কিডনি যদি সুস্থ না থাকে তাহলে এসব কাজে বিঘ্ন সৃষ্ট হয় এবং শারীরিক বিপর্যয় দেখা দেয়।

কিডনি রোগীদের অধিকাংশই ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। অনিয়ন্ত্রিত ও দীর্ঘকালীন ডায়াবেটিস কিডনি বিকলের অন্যতম কারণ। উচ্চ-রক্তচাপ আরেকটি কারণ। এটিও ডায়াবেটিসের মতোই নীরব ঘাতক। গ্লোমেরুলোনেফ্রাইটিস, পলিসিস্টিক-এর মতো কিডনি জটিলতার কারণে উচ্চ-রক্তচাপ হতে পারে। ফলে উচ্চ-রক্তচাপের কারণ খুঁজতে গিয়ে কিডনির অন্তর্নিহিত আরেকটি রোগও ধরা পড়তে পারে। অন্যদিকে, শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দিলে কিডনি বিকল হয়ে পড়তে পারে। পানিশূন্যতার অন্যতম কারণ হলো ডায়ারিয়া, বমি ইত্যাদি।

তবে অতিরিক্ত গরম, শরীর পুড়ে যাওয়া, অতিরিক্ত রক্তপাত ইত্যাদি কারণে শরীর থেকে অনেক লবণ পানি বেরিয়ে যায়। ফলে পানিশূন্যতা দেখা দেয় এবং কিডনি বিকলতার ঝুঁকি থাকে। পরিবারে কিডনি রোগের ইতিহাস থাকলেও কিডনি রোগ দেখা দিতে পারে। এছাড়া প্রস্রাবের চাপ আটকে রাখা, অপুষ্টি, ধূমপান, অতিরিক্ত বা ভুল ঔষধ খাওয়া ইত্যাদি কারণেও কিডনি ক্ষতিগ্রস্থ হয়। সাধারণত ৭০-৮০ ভাগ কিডনির কর্মক্ষমতা নষ্ট বা বিকল হওয়ার আগে রোগের উপসর্গ বোঝা যায় না।

তবে প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া, ঘন ঘন প্রস্রাব, প্রস্রাব লাল হওয়া, প্রস্রাবে দুর্গন্ধ, কোমরের দুই পাশে ও তলপেটে ব্যথা, শরীর-মুখ ফোলা ইত্যাদি কিডনি রোগেরই সংকেত দেয়। এসব সমস্যা দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে। চিকিৎসার তিন মাসের মধ্যে রোগ না সারলে এটিকে দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগ হিসেবে ধরা হয়। ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ও নেফ্রাইটিসের (কিডনির বিভিন্ন সমস্যা) কারণে শতকরা ৮০ ভাগ রোগীর কিডনি বিকল হয় বা ঝুঁকি থাকে।

আমাদের দেশেই এখন কিডনি রোগের আধুনিক পদ্ধতিতে রোগ নির্ণয়, পরামর্শ এবং বিশ্বমানের চিকিৎসা সম্পন্ন হচ্ছে। সিটি স্ক্যান, এমআরআই এবং কিডনি বায়োপসি ছাড়াও আধুনিক পদ্ধতি যেমন; ইউআরই (প্রস্রাবের রুটিন পরীক্ষা); ইউরিন অ্যালবুমিন; ক্রিয়েটিনাইন রেশিও (এসিআর); ইজিএফআর; কেইউবি এরিয়ার আল্ট্রাসাউন্ড ইত্যাদি পরীক্ষার মাধ্যমে কিডনি রোগ নির্ণয় করা হয়।

কিডনি রোগের চিকিৎসা কিছুটা ব্যয়বহুল বটে, তবে একটু সচেতন হলে ৫০-৬০ ভাগ ক্ষেত্রে সেই ঝুঁকি প্রতিরোধ করা সম্ভব। পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান, বছরে একবার কিডনি পরীক্ষা, ডায়াবেটিস ও উচ্চ-রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা, চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ঔষধ না খাওয়া; অপুষ্টিকর ও ভেজাল খাবার পরিহার করা; নিয়মিত হাঁটাসহ শারীরিক পরিশ্রম করা কিডনিকে সুস্থ রাখতে ও রোগের ঝুঁকি প্রতিরোধে সাহায্য ব্যাপক করে।

কিডনির একটি জটিল রোগ হলো সিকেডি, যা অন্যান্য অবস্থার তুলনায় কিছুটা গুরুতর। তবে এক্ষেত্রে সর্বপ্রথম করণীয় হল অস্বাভাবিক জীবনযাপন ত্যাগ করা, যতটা সম্ভব সতর্ক থাকা, সময়মতো ঔষধ খাওয়া, শারীরিক-মানসিকভাবে সুস্থ থাকার চেষ্টা করা। এছাড়া, উচ্চ-রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, উচ্চ-কোলেস্টেরল ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণে রাখা। সিকেডি’র অবস্থা গুরুত্বর (স্টেজ ৫) হলে ডায়ালাইসিস অথবা কিডনি প্রতিস্থাপনেরও প্রয়োজন হতে পারে। তাই এসময় রোগীর বাড়তি যত্ন নিশ্চিত ও সচেতন থাকা খুব জরুরি।

 

স্ট্রোক পরবর্তী সার্জারির প্রয়োজনীয়তা

স্ট্রোক পরবর্তী সার্জারি | Surgery after Stroke

স্ট্রোক পরবর্তী সার্জারির প্রয়োজনীয়তা

আমরা মূলত দুই ধরণের স্ট্রোকের সাথে পরিচিত; ‘হেমোরেজিক’ ও ‘ইস্কিমিক’। হেমোরেজিক স্ট্রোক ব্রেন হ্যামারেজ নামেও পরিচিত। এর ফলে সাধারণত মস্তিষ্কের রক্ত চলাচলের নালী ছিঁড়ে যায়, যার ফলে অবস্থা মুহূর্তের মধ্যেই জটিল হতে পারে। অপরদিকে, ইস্কিমিক স্ট্রোকে মস্তিষ্কে রক্ত চলাচল বাধাপ্রাপ্ত হয়, এমনকি বন্ধও হয়ে যায়।

সহজভাবে বললে, যখন মস্তিষ্কের কোন অংশে রক্ত সরবরাহ ব‌ন্ধ হয়ে গিয়ে মস্তিষ্কের কোষগুলো ক্ষতিগ্রস্থ হয়, তখন তাকে ইস্কেমিক স্ট্রোক বলে। স্ট্রোকের চিকিৎসা কখনো কখনো যেমন সহজ, কখনো আবার কিছুটা জটিল। তবে সেটি নির্ভর করে রোগীর অবস্থা এবং তাৎক্ষনিক পদক্ষেপের উপর। স্ট্রোকের পর রোগী অজ্ঞান হয়ে গেলে ভয় না পেয়ে তাৎক্ষণিক চিকিৎসকের পরামর্শ অথবা নিকটস্থ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া উচিৎ।

প্রাথমিক ভাবে কিছু পদক্ষেপ:

প্রাথমিক ভাবেও কিছু পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে, যার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো শ্বাসনালী, শ্বাস-প্রশ্বাস ও রক্ত সঞ্চালন সচল রাখা। এছাড়া রোগীকে একদিকে কাত করে, বালিশ ছাড়া মাথা নিচু করে শোয়ানো, চোখের প্রতি লক্ষ্য রাখা, মূত্রথলির যত্ন নেওয়া, প্রয়োজনে ক্যাথেটার ব্যবহার করা ইত্যাদি বিষয়গুলো নিশ্চিত করা প্রয়োজন। প্রাথমিকভাবে উল্লেখিত পদক্ষেপগুলো গ্রহণের মাধ্যমে রোগীকে যেকোন বড় জটিলতা থেকে সুরক্ষিত রাখা সম্ভব।

তবে রোগীর অবস্থাভেদে যদি সার্জারির প্রয়োজন হয় তবে তা অবহেলা করা উচিৎ নয়। মধ্যবয়স্ক রোগী বা যাদের বয়স ৪০ এর কম, তাদের ক্ষেত্রে মূলত সার্জারি প্রয়োজন হয়। রক্ত জমাট বাঁধলে তা যত দ্রুত সম্ভব ক্রেনিয়েক্টমি (মাথার খুলি কেটে) করে সাবধানতার সাথে সার্জারি করতে হয়, নাহলে ঝুঁকি বেড়ে যায়। অনেক রোগীই প্রাথমিক পর্যায়ে গাইডলাইন ফলো করে না, ফলে তারা স্বাস্থ্যঝুঁকিতে ভোগেন। সুতরাং, এই বিষয়গুলো অবহেলা করা যাবে না।

স্ট্রোকের ক্ষেত্রে ফিজিওথেরাপি অন্যতম একটি চিকিৎসা পদ্ধতি। অনেক সময় দেখা যায়, বিশেষ করে গ্রামাঞ্চল বা প্রান্তিক অঞ্চলগুলোয় ফিজিওথেরাপি নিয়ে জনমনে সচেতনতা খুবই কম। অনেক রোগীরই স্ট্রোকের পর হাত-পা বেঁকে যায় এবং বাকি জীবন এভাবেই থেকে যায়। সেসব রোগীদের জন্য ফিজিওথেরাপী ভীষণ উপকারী। অনেকে ভাবেন ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা কোন কাজে আসে না। তবে ধারণাটি সম্পূর্ণ ভুল। তবে সঠিক স্থানে ও সঠিকভাবে চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে।

 

ডা. মো: আনিসুল ইসলাম খান
সিনিয়র কনসালটেন্ট ও কো-অর্ডিনেটর, নিউরোসার্জারি বিভাগ
এভারকেয়ার হসপিটাল চট্টগ্রাম

হৃদরোগের কারণ ও চিকিৎসা

Heart disease হৃদরোগের কারণ ও চিকিৎসা

হৃদরোগের কারণ ও চিকিৎসা

হৃদযন্ত্রের নিজস্ব রক্তনালীতে চর্বি জমে রক্ত চলাচল বাধাগ্রস্ত হলে বিভিন্ন উপসর্গ দেখা দিতে পারে, যা হৃদরোগ হিসেবে পরিচিত। যেকেউই হৃদরোগের শিকার হতে পারেন। কিশোর বয়স থেকে সূত্রপাত হলেও সাধারণত মধ্যবয়স থেকে রোগ প্রকাশ পেয়ে থাকে। পুরুষদের হৃদরোগের প্রবণতা তুলনামূলক বেশি, তবে নারীরাও বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে হৃদরোগ বা হার্ট অ্যাটাকের বাড়তি ঝুঁকিতে থাকেন।

যারা ধূমপান করেন এবং ডায়াবেটিস, উচ্চ-রক্তচাপ, রক্তে উচ্চ-মাত্রায় কোলেস্টেরল জনিত সমস্যায় ভুগছেন তাদের হৃদরোগে আক্রান্তের ঝুঁকি বেশি। পরিবারে পূর্বে হৃৎপিণ্ডের রক্তনালীর সমস্যা বা ইসকেমিক ডিজিজ থাকলে পরিবারের অন্যান্যদের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।

হৃদরোগের শুরুতে শুয়ে-বসে থাকলে কোন উপসর্গ দেখা না দিলেও শারীরিক পরিশ্রমের সাথে সাথে বুকের মাঝখানে ব্যাথা বা অসস্তি অনুভূত হতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে বুক ভারী, বুকে চাপ, বাম হাত-ঘাড় বা চোয়ালে, বুকের পেছনে ইত্যাদি জায়গায় ব্যথা অনুভূত হতে পারে। পেটের উপরিভাগে ব্যথাও অনেক ক্ষেত্রে হার্ট অ্যাটাকের উপসর্গ হতে পারে।

হৃদরোগের চূড়ান্ত পর্যায়ে অতিরিক্ত ঘাম, শ্বাসকষ্ট, বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া, মাথা ঝিমঝিম করা, জ্ঞান হারানো ইত্যাদি সমস্যাও দেখা দিতে পারে। সেক্ষেত্রে, বুকে ব্যথা অনুভূত হলে রোগীকে দ্রুতই নিকটস্থ হাসপাতালে নিতে হবে এবং দ্রুত ই.সি.জি ও রক্ত পরীক্ষা করে হার্ট অ্যাটাকের বিষয়টি নিশ্চিত হতে হবে।

হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি

হৃদরোগে আক্রান্তরা যেকোনো মূহুর্তেই হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকিতে থাকেন। হৃৎপিণ্ডের রক্তনালীতে রক্ত চলাচল পুনঃপ্রতিষ্ঠা করাই হলো এর প্রধান চিকিৎসা। যত দ্রুত চিকিৎসা প্রদান করা যায়, রোগীর সুস্থ হয়ে ওঠার সম্ভাবনা তত বেশি। এনজিওগ্রাম-এর মাধ্যমে হার্টের ব্লক সনাক্ত করে দ্রুত তা অপসারণ করে রক্ত চলাচল পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা হলো হার্ট অ্যাটাকের সর্বাধুনিক চিকিৎসা। তবে এজন্য প্রয়োজন আধুনিক সরঞ্জামসমৃদ্ধ ক্যাথল্যাব ও সার্বক্ষণিক দক্ষ জনশক্তি।

আবার বিকল্প হিসেবে ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে রক্ত জমাট ভেঙ্গে দিয়ে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক করা যেতে পারে। উভয় পদ্ধতিই হার্ট অ্যাটাকের স্বীকৃত চিকিৎসা। কোন পদ্ধতি কোন রোগীর ক্ষেত্রে অধিক কার্যকরী তা নির্ভর করে রোগীর অবস্থা ও চিকিৎসকের পরামর্শের উপর।

স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপন করলে হৃদরোগ বা হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি অনেকাংশে প্রতিরোধ করা সম্ভব। ধূমপান ত্যাগ করা, ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা, চর্বিজাতীয় খাবার পরিহার করা, নিয়মিত শরীরচর্চা করা, ফাস্টফুড ও জাঙ্কফুড পরিহার করা, যথাসম্ভব দুশ্চিন্তা ও মানসিক চাপমুক্ত থাকা ইত্যাদি অভ্যাসের মাধ্যমে এই রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব। আর ইতোমধ্যেই হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত ব্যক্তিরা যদি নিয়মিত মেডিকেল চেকআপ ও চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলেন, তাহলে হৃদরোগ নিয়েও দীর্ঘসময় স্বাভাবিক জীবনযাপন করা সম্ভব।

 

ডা: মো: তারিক বিন আব্দুর রশিদ
সিনিয়র কনসালটেন্ট, ক্লিনিক্যাল ও ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজি
এভারকেয়ার হসপিটাল চট্টগ্রাম।