এভারকেয়ার বিডি
প্রকাশনা
২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫

আনকা (ANCA) - অ্যাসোসিয়েটেড ভাসকুলাইটিস: নীরব কিন্তু গুরুতর একটি রোগ

আনকা (ANCA) - অ্যাসোসিয়েটেড ভাসকুলাইটিস: নীরব কিন্তু গুরুতর একটি রোগ

ভাসকুলাইটিস (Vasculitis) হল এক ধরনের বিরল রোগসমষ্টি, যেখানে শরীরের নিজস্ব রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থা রক্তনালীগুলিকে আক্রমণ করে এবং সেগুলোতে প্রদাহ সৃষ্টি করে। এর একটি গুরুত্বপূর্ণ ধরন হলো আনকা - অ্যাসোসিয়েটেড ভাসকুলাইটিস, যা শরীরের ছোট ও মাঝারি আকারের রক্তনালীগুলিকে আক্রান্ত করতে পারে। যথাযথ চিকিৎসা না হলে এই রোগ কিডনি, ফুসফুস, স্নায়ু, ত্বক ও সাইনাস-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলিকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।

আনকা কী?

আনকা (ANCA) মানে হলো অ্যান্টি- নিউট্রোফিল সাইটোপ্লাজমিক অটোঅ্যান্টিবডি  (Anti-Neutrophil Cytoplasmic Antibody), এটি এক ধরনের অটোঅ্যান্টিবডি, যা ভুলবশত ব্যক্তির নিজের সাদা রক্তকণিকাকে (white blood cells) লক্ষ্য করে আক্রমণ করে। সক্রিয় হওয়া এই সাদা রক্তকণিকাগুলো তখন রক্তনালীর প্রাচীরে আঘাত করে, যার ফলে প্রদাহ ও সংকোচন সৃষ্টি হয় এবং টিস্যুগুলিতে রক্তপ্রবাহ কমে যায়।

কে এই রোগে আক্রান্ত হতে পারে?

এই রোগ যেকোনো বয়সেই হতে পারে, তবে সাধারণত ৪০ বছর বা তার বেশি বয়সীদের মধ্যে এটি বেশি দেখা যায়। নারী ও পুরুষ উভয়েই এতে আক্রান্ত হতে পারেন।

রোগটি অনেক সময় ধীরে ধীরে শুরু হয়, যেমন: অবসাদ, জ্বর, ওজন হ্রাস বা জয়েন্টের ব্যথা—এইসব অস্পষ্ট উপসর্গ দিয়ে, পরে তা বিভিন্ন অঙ্গে ছড়িয়ে পড়ে।

যে লক্ষণগুলোর প্রতি খেয়াল রাখা জরুরি:

  • কিডনি: প্রস্রাবে রক্ত বা প্রোটিন, কিডনি বিকল হয়ে যাওয়া
  • ফুসফুস: কাশি, নিঃশ্বাসে কষ্ট, রক্ত উঠা
  • নাক, কান ও সাইনাস: নাক বন্ধ থাকা, নাক থেকে রক্ত পড়া, কানে পুঁজ বা শোনা কমে যাওয়া
  • স্নায়ু: অবশভাব, দুর্বলতা
  • ত্বক: চুলকানি, বেগুনি দাগ বা ফুসকুড়ি

উপসর্গগুলো ব্যক্তি ভেদে ভিন্ন হতে পারে, তাই রোগ নির্ণয়ে বিলম্ব হতে পারে। সাধারণত রক্ত পরীক্ষা (ANCA সহ), প্রস্রাব পরীক্ষা, বুকের এক্স-রে বা সিটি স্ক্যান, এমনকি কখনো টিস্যু বায়োপসি-র মাধ্যমে রোগটি নিশ্চিত করা হয়।

চিকিৎসা ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা:

গত দুই দশকে চিকিৎসায় অভূতপূর্ব উন্নতি হয়েছে। চিকিৎসা দুই ধাপে হয়:

  • ইনডাকশন ফেজ (প্রাথমিক নিয়ন্ত্রণ): এখানে কর্টিকোস্টেরয়েড (corticosteroid) এবং ইমিউনোসাপ্রেসিভ (immunosuppressive) ওষুধ দিয়ে রোগের অগ্রগতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়।
  • মেইনটেন্যান্স ফেজ (রোগ প্রতিরোধ বজায় রাখা): রোগ নিয়ন্ত্রণে আসার পর কম ডোজে ওষুধ চালিয়ে যাওয়া হয় যাতে রোগ আবার না ফিরে আসে।

সঠিক সময়ে চিকিৎসা শুরু করা হলে, অনেক রোগী পূর্ণ রেমিশন-এ যেতে পারেন, তবে দীর্ঘমেয়াদী ফলোআপ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

নির্বাক ও নীরব এই রোগটি সময়মতো ধরা না পড়লে ভয়াবহ পরিণতির দিকে নিয়ে যেতে পারে। তাই উপসর্গ দেখা দিলে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াই শ্রেয়।

লেখক: 
এমডি (রিউমাটোলজি), এমআরসিপি (ইউকে), এফসিপিএস (মেডিসিন),
এফআরসিপি (এডিন), এফএসিআর ফেলো (আমেরিকা),
এপ্লার  ফেলোশিপ (রিউমাটোলজি), ইউলার  সার্টিফায়েড (রিউমাটোলজি)
কনসালট্যান্ট – রিউমাটোলজি
এভারকেয়ার হসপিটাল ঢাকা