এভারকেয়ার বিডি
প্রকাশনা
৩০ অক্টোবর ২০২৫

সচেতন হোন, পরীক্ষা করুন: স্তন ক্যান্সার চিকিৎসাযোগ্য ও নিরাময়যোগ্য

সচেতন হোন, পরীক্ষা করুন: স্তন ক্যান্সার চিকিৎসাযোগ্য ও নিরাময়যোগ্য
Author

ডা. আরমান রেজা চৌধুরী

লেখক

স্তন ক্যান্সার বিশ্বের নারীদের মধ্যে অন্যতম সাধারণ ক্যান্সার। যদিও “ক্যান্সার” শব্দটি অনেকের মনে ভয় তৈরি করে, বাস্তবতা হলো — স্তন ক্যান্সার নিরাময়যোগ্য, বিশেষ করে যদি তা প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত ও চিকিৎসা করা যায়। আধুনিক চিকিৎসা প্রযুক্তি, সচেতনতা এবং প্রাথমিক নির্ণয়ের ফলে আজ বহু নারী সম্পূর্ণ সুস্থ জীবনযাপন করছেন।

স্তন ক্যান্সার কীভাবে হয়

স্তনের টিস্যুতে অস্বাভাবিক কোষ অনিয়ন্ত্রিতভাবে বৃদ্ধি পেলে স্তন ক্যান্সার হয়। এসব কোষ একসময় একটি গাঁট (লাম্প) তৈরি করে এবং চিকিৎসা না হলে শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়তে পারে। তবে বেশিরভাগ স্তন ক্যান্সার স্তনের দুধনালী বা লোবিউল থেকে শুরু হয়, যা প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়লে সহজেই নিরাময় সম্ভব।

প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্তকরণ কেন গুরুত্বপূর্ণ

স্তন ক্যান্সার নিরাময়ের মূল চাবিকাঠি হলো প্রাথমিক শনাক্তকরণ। রোগটি যদি প্রথম বা দ্বিতীয় পর্যায়ে ধরা যায়, তাহলে নিরাময়ের সম্ভাবনা ৯০% বা তারও বেশি। এজন্য নিয়মিত স্তন স্ব-পরীক্ষা (Breast Self-Examination), চিকিৎসকের ক্লিনিক্যাল পরীক্ষা, এবং ম্যামোগ্রাম স্ক্রিনিং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ৪০ বছরের বেশি বয়সী নারীদের প্রতি বছর একবার ম্যামোগ্রাম করার পরামর্শ দেওয়া হয়। তরুণ নারীরাও নিজেদের স্তনে কোনো অস্বাভাবিক পরিবর্তন লক্ষ্য করলে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি

বর্তমানে স্তন ক্যান্সারের চিকিৎসা অনেক উন্নত হয়েছে। রোগের ধরণ ও পর্যায় অনুযায়ী চিকিৎসক সার্জারি, রেডিয়েশন থেরাপি, কেমোথেরাপি, হরমোন থেরাপি বা টার্গেটেড থেরাপির সমন্বয়ে চিকিৎসা প্রদান করেন।

  • সার্জারির মাধ্যমে আক্রান্ত টিস্যু অপসারণ করা হয় এবং অনেক ক্ষেত্রেই পুরো স্তন সংরক্ষণ সম্ভব।
  • রেডিয়েশন থেরাপি অপারেশনের পর অবশিষ্ট ক্যান্সার কোষ ধ্বংস করে।
  • কেমোথেরাপি ও হরমোন থেরাপি শরীরে ছড়িয়ে থাকা ক্যান্সার কোষ নষ্ট করে এবং পুনরায় হওয়ার ঝুঁকি কমায়।
  • ব্যক্তিকেন্দ্রিক চিকিৎসা পরিকল্পনা ও আধুনিক প্রযুক্তির ফলে এখন বহু রোগী চিকিৎসার পর সম্পূর্ণ সুস্থ জীবন যাপন করছেন।

জীবনযাপন ও মানসিক সহায়তা

শুধু চিকিৎসাই নয়, মানসিক শক্তি, পরিবার ও বন্ধুবান্ধবের সহায়তা এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনও সুস্থতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ, নিয়মিত ব্যায়াম, ওজন নিয়ন্ত্রণ, মদ্যপান ও ধূমপান থেকে বিরত থাকা — এসবই পুনরায় ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি কমায়। এছাড়া সাপোর্ট গ্রুপ বা ক্যান্সার সারভাইভারদের সঙ্গে কথা বললে মানসিকভাবে ইতিবাচক থাকা সহজ হয়।

আশা ও সচেতনতা

মনে রাখতে হবে — স্তন ক্যান্সার মানেই মৃত্যু নয়। সচেতনতা, সময়মতো পরীক্ষা ও সঠিক চিকিৎসা গ্রহণের মাধ্যমে হাজারো নারী এখন সম্পূর্ণ সুস্থ জীবন কাটাচ্ছেন। প্রতি বছর অক্টোবর মাসে পালিত স্তন ক্যান্সার সচেতনতা মাস আমাদের মনে করিয়ে দেয় — সময়মতো পরীক্ষা ও সচেতনতা জীবন বাঁচাতে পারে।

স্তন ক্যান্সার নিরাময়যোগ্য, যদি তা প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত ও সঠিকভাবে চিকিৎসা করা যায়। জ্ঞান, সচেতনতা এবং নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা — এই তিনটি বিষয়ই স্তন ক্যান্সারের বিরুদ্ধে আমাদের সবচেয়ে বড় অস্ত্র। মনে রাখবেন — সময়মতো সনাক্তকরণই বাঁচাতে পারে জীবন। স্তনে কোনো পরিবর্তন বা অস্বাভাবিকতা দেখলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।


লেখকঃ

ডা. আরমান রেজা চৌধুরী

সিনিয়র কনসালটেন্ট

রেডিয়েশন অনকোলজি

এভারকেয়ার হসপিটাল ঢাকা।