এভারকেয়ার বিডি
প্রকাশনা
১৪ অক্টোবর ২০২৫

ব্লাড ক্যান্সার: এক নীরব ঘাতক

ব্লাড ক্যান্সার: এক নীরব ঘাতক
Author

ডা. আবু জাফর মোহাম্মদ সালেহ্

লেখক

ব্লাড ক্যান্সার, যাকে হেমাটোলজিক্যাল ক্যান্সারও বলা হয়, রক্ত, অস্থিমজ্জা এবং লিম্ফ্যাটিক সিস্টেমকে আক্রান্ত করে। এটি শরীরের রক্তকণিকা উৎপাদন ও কার্যক্ষমতাকে ব্যাহত করে, যার ফলে বিভিন্ন জটিল সমস্যা দেখা দেয়।

ব্লাড ক্যান্সারের ধরন

ব্লাড ক্যান্সার প্রধানত তিন ধরনের হয়ে থাকে:

  • লিউকেমিয়া: এটি এমন একটি ক্যান্সার যেখানে শরীরের লোহিত ও শ্বেত রক্তকণিকার উৎপাদন অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যায় এবং রক্তস্বল্পতা ও সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ায়। এটি একিউট (তাৎক্ষণিক) ও ক্রনিক (ধীরগতির) ধরনের হতে পারে।
  • লিম্ফোমা: এটি লিম্ফ্যাটিক সিস্টেমের ক্যান্সার, যা শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাকে দুর্বল করে ফেলে। হজকিন’স লিম্ফোমা ও নন-হজকিন’স লিম্ফোমা এর প্রধান দুই ধরন।
  • মাইলোমা: এটি প্লাজমা কোষের ক্যান্সার, যা শরীরের অ্যান্টিবডি উৎপাদনে বাধা সৃষ্টি করে, ফলে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পায়।

ব্লাড ক্যান্সারের কারণ

ব্লাড ক্যান্সারের সঠিক কারণ এখনও পুরোপুরি জানা যায়নি, তবে কিছু কারণ এর ঝুঁকি বাড়াতে পারে, যেমন:

  • জেনেটিক বা বংশগত কারণ
  • তেজস্ক্রিয়তা বা কেমিক্যালের সংস্পর্শে আসা
  • ভাইরাস সংক্রমণ (যেমন: এইচটিএলভি-১)
  • দুর্বল রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা

ব্লাড ক্যান্সারের লক্ষণ

  • অতিরিক্ত ক্লান্তি ও দুর্বলতা
  • শরীরে সহজে ক্ষত সৃষ্টি হওয়া ও দেরিতে শুকানো
  • অস্বাভাবিক রক্তক্ষরণ বা রক্তপাত
  • হাড় ও জয়েন্টে ব্যথা
  • বারবার জ্বর বা সংক্রমণ হওয়া
  • লিম্ফ নোড ফুলে যাওয়া

চিকিৎসা ও প্রতিরোধ

ব্লাড ক্যান্সারের চিকিৎসা নির্ভর করে এর ধরন ও পর্যায়ের ওপর। সাধারণত নিম্নলিখিত চিকিৎসা পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়:

  • কেমোথেরাপি: ক্যান্সার কোষ ধ্বংস করতে ওষুধ ব্যবহার করা হয়।
  • রেডিয়েশন থেরাপি: তেজস্ক্রিয় রশ্মি দিয়ে ক্যান্সার কোষ নষ্ট করা হয়।
  • বোন ম্যারো ট্রান্সপ্লান্টেশন: রোগীর আক্রান্ত অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন করা হয়।
  • ইমিউনোথেরাপি: শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর মাধ্যমে ক্যান্সার কোষের বিরুদ্ধে লড়াই করা হয়।

ব্লাড ক্যান্সার একটি প্রাণঘাতী রোগ হলেও, আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানের অগ্রগতির ফলে এটি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। নিয়মিত স্বাস্থ্যপরীক্ষা, স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন ও ঝুঁকির কারণগুলো এড়িয়ে চলা এই রোগ প্রতিরোধের অন্যতম উপায়। সচেতনতা ও দ্রুত চিকিৎসাই পারে জীবন বাঁচাতে।


লেখকঃ

ডা. আবু জাফর মোহাম্মদ সালেহ্

সিনিয়র কনসালটেন্ট ও কোঅর্ডিনেটর

হেমাটোলজি এন্ড স্টেম সেল ট্রান্সপ্ল‍্যান্ট

এভারকেয়ার হসপিটাল ঢাকা।