এভারকেয়ার হসপিটাল ঢাকায় আপনাকে স্বাগতম
ব্রেস্ট ক্যান্সার সচেতনতা: প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত করলে বাঁচানো যায় জীবন

ব্রেস্ট ক্যান্সার বিশ্বজুড়ে মহিলাদের মধ্যে সবচেয়ে সাধারণ ক্যান্সারের মধ্যে একটি, যদিও পুরুষরাও কখনও কখনও এতে আক্রান্ত হতে পারেন। এটি তখন শুরু হয় যখন স্তনের কোষগুলো অস্বাভাবিকভাবে এবং নিয়ন্ত্রণের বাইরে বৃদ্ধি পেতে থাকে, যার ফলে গাঁট বা টিউমার তৈরি হয়। এই অস্বাভাবিক কোষগুলো আশেপাশের টিস্যুতে আক্রমণ করতে পারে বা রক্ত বা লিম্ফ্যাটিক সিস্টেমের মাধ্যমে শরীরের অন্য অংশে ছড়িয়ে পড়তে পারে। সময়মতো সনাক্তকরণ এবং চিকিৎসা রোগীর জীবদ্দশা বাড়ায়।
কারণ ও ঝুঁকি
ব্রেস্ট ক্যান্সারের সঠিক কারণ সব সময় স্পষ্ট নয়, তবে কিছু ঝুঁকি বাড়ায়। বয়স একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ; বয়স্ক মহিলাদের ঝুঁকি বেশি। পরিবারে ব্রেস্ট বা ওভারিয়ান ক্যান্সারের ইতিহাস থাকা এবং জিনে পরিবর্তন (যেমন BRCA1 ও BRCA2) থাকার ফলে ঝুঁকি বেড়ে যায়। হরমোন সংক্রান্ত বিষয় যেমন ১২ বছরের আগে মাসিক শুরু হওয়া, ৫৫ বছরের পরে মেনোপজ হওয়া বা মেনোপজের পরে হরমোন থেরাপি গ্রহণও প্রভাব ফেলতে পারে। স্থূলতা, শারীরিক পরিশ্রমের অভাব এবং অ্যালকোহল সেবনও ঝুঁকি বাড়ায়।
লক্ষণগুলো
প্রাথমিক পর্যায়ে লক্ষণ শনাক্ত করা জীবন রক্ষা করতে পারে। সাধারণ লক্ষণগুলো হলো স্তন বা বাহুর নিচে গাঁট বা শক্ত ভাব, স্তনের আকার বা আকৃতিতে পরিবর্তন, ত্বকে ভাঁজ বা ডিম্পল পড়া, নিপল থেকে স্রাব (বিশেষ করে রক্তযুক্ত), লালচেভাব, ফোলা বা জ্বালাপোড়া এবং নিপল ভেতরের দিকে ঢুকে যাওয়া। এই ধরনের কোনো পরিবর্তন দেখা দিলে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
সনাক্তকরণ ও স্ক্রিনিং
প্রারম্ভিক সনাক্তকরণ কার্যকর চিকিৎসার চাবিকাঠি। নিয়মিত স্ব-পরীক্ষা (BSE) এবং ক্লিনিক্যাল ব্রেস্ট এক্সাম (CBE) অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ৪০ বছরের বেশি বা উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ মহিলাদের জন্য ম্যামোগ্রাম গুরুত্বপূর্ণ। প্রয়োজনে আল্ট্রাসাউন্ড বা এমআরআই ব্যবহার করে সন্দেহজনক এলাকার বিস্তারিত পরীক্ষা করা যেতে পারে।
চিকিৎসা ও সম্ভাবনা
ব্রেস্ট ক্যান্সারের চিকিৎসা এর ধরন, স্তর এবং রোগীর পরিস্থিতি অনুযায়ী নির্ধারিত হয়। সাধারণ চিকিৎসায় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে সার্জারি, রেডিয়েশন থেরাপি, কেমোথেরাপি, হরমোন থেরাপি এবং টার্গেটেড থেরাপি। প্রাথমিক পর্যায়ে সনাক্তকৃত ব্রেস্ট ক্যান্সার প্রায়ই নিরাময়যোগ্য, এবং রোগীরা স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারেন। উন্নত পর্যায়ের ক্ষেত্রে রোগ নিয়ন্ত্রণ, লক্ষণ প্রশমন এবং জীবনমান উন্নত করার জন্য চিকিৎসা করা হয়।
সচেতনতা, প্রারম্ভিক সনাক্তকরণ এবং সময়মতো চিকিৎসাই ব্রেস্ট ক্যান্সারের বিরুদ্ধে সবচেয়ে কার্যকর হাতিয়ার। নিয়মিত স্ক্রিনিং, স্বাস্থ্যকর জীবনধারা এবং স্তনের পরিবর্তনের প্রতি মনোযোগ জীবন রক্ষা করতে সহায়ক।
লেখকঃ
সিনিয়র কনসালটেন্ট ও কোঅর্ডিনেটর
রেডিয়েশন অনকোলজি
এভারকেয়ার হসপিটাল ঢাকা।
