এভারকেয়ার হসপিটাল ঢাকায় আপনাকে স্বাগতম
স্তন ক্যান্সার সচেতনতা: সময়মতো সনাক্তকরণই বাঁচাতে পারে জীবন

স্তন ক্যান্সার বিশ্বের অন্যতম সবচেয়ে সাধারণ এবং ভয়ানক রোগগুলোর মধ্যে একটি। বিশেষ করে মহিলাদের মধ্যে এটি প্রায়ই দেখা যায়, তবে পুরুষদের মধ্যে এটি খুব কম হলেও হতে পারে। স্তন ক্যান্সারকে সফলভাবে মোকাবেলা করার মূল চাবিকাঠি হল তার প্রাথমিক সনাক্তকরণ, সচেতনতা এবং যথাযথ চিকিৎসা। সচেতনতা বৃদ্ধি এবং সঠিক সময়ে পরীক্ষা করা জীবন বাঁচাতে পারে।
স্তন ক্যান্সার হল স্তনের কোষগুলির অস্বাভাবিক বৃদ্ধি বা অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়া। এই অস্বাভাবিক কোষগুলির মধ্যে কিছু টিউমার তৈরি করতে পারে, যা শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়তে পারে। ক্যান্সারের ধরন এবং স্তরের উপর নির্ভর করে চিকিৎসা পদ্ধতি ভিন্ন হতে পারে, তবে প্রাথমিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা অনেক সময় পুরোপুরি নিরাময় সম্ভব।
প্রাথমিক সনাক্তকরণ স্তন ক্যান্সারের চিকিৎসায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রাথমিক পর্যায়ে স্তন ক্যান্সার সনাক্ত হলে চিকিৎসার সফলতার হার অনেক বেশি। এর জন্য প্রয়োজন নিয়মিত স্ক্রীনিং এবং নিজের শরীরের প্রতি সচেতনতা।
১. স্তন স্ব-পরীক্ষা
স্তন স্ব-পরীক্ষা একটি সহজ এবং কার্যকর পদ্ধতি যা আপনি নিজেই করতে পারেন। এটি প্রতিমাসে একবার করা উচিত, বিশেষ করে ২০ বছর বয়সের পর। এই পরীক্ষা করে আপনি আপনার স্তনে কোনো গাঁথ, কষ্ট বা অস্বাভাবিক পরিবর্তন দেখতে বা অনুভব করতে পারেন। স্ব-পরীক্ষার মাধ্যমে যদি কোনো অস্বাভাবিকতা অনুভব করেন, তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
২. ম্যামোগ্রাম
ম্যামোগ্রাম হল স্তনের এক ধরনের এক্স-রে পরীক্ষা, যা স্তনে ছোটো টিউমার বা অস্বাভাবিকতা সনাক্ত করতে সাহায্য করে। এটি বিশেষ করে ৪০ বছর বয়সের পর মহিলাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যদি আপনার পরিবারে স্তন ক্যান্সারের ইতিহাস থাকে, তবে আপনাকে আরও আগে এই পরীক্ষা করানো উচিত।
৩. স্তন-এর এমআরআই স্ক্রীনিং
যদি কোনো মহিলার পরিবারে স্তন ক্যান্সারের ইতিহাস থাকে, তাহলে তাদের প্রাথমিক বয়সেই স্তন-এর এমআরআই স্ক্রীনিং করা উচিত। এটি ব্রেস্ট ক্যান্সারের ঝুঁকি আগে থেকেই চিহ্নিত করতে সহায়তা করে এবং সাধারণ স্ক্রীনিং পদ্ধতির তুলনায় আরও নির্ভরযোগ্য ফলাফল প্রদান করে।
৪. ক্লিনিক্যাল স্তন পরীক্ষা
এটি একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসক দ্বারা করা হয়, যেখানে স্তনের শারীরিক পরীক্ষা করে কোনো অস্বাভাবিকতা বা টিউমার খুঁজে দেখা হয়। এটি মাসে একবার বা বছরে অন্তত একবার করা উচিত।
স্তন ক্যান্সারের লক্ষণ
স্তন ক্যান্সারের সাধারণ লক্ষণগুলো হল:
- স্তনে কোনো চাকা অনুভব হওয়া।
- স্তনের ত্বকে পরিবর্তন (যেমন, চামড়ার রুক্ষতা, শুষ্কতা বা লালচে ভাব)
- স্তনের বোঁটা থেকে তরল নির্গমন।
- স্তনের আকার বা গঠনে পরিবর্তন আসা।
অক্টোবর মাসে বিশ্বজুড়ে স্তন ক্যান্সার সচেতনতা মাস পালন করা হয়। এই মাসে নানা ধরনের ইভেন্ট, ক্যাম্পেইন, এবং সচেতনতা প্রচার করা হয় যাতে মানুষ স্তন ক্যান্সারের গুরুত্ব এবং প্রাথমিক সনাক্তকরণের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সচেতন হয়। এর মাধ্যমে স্তন ক্যান্সার সম্পর্কিত ভুল ধারণাগুলো ভাঙা এবং আরও বেশি মানুষকে পরীক্ষা করার জন্য উদ্বুদ্ধ করা যায়।
সচেতনতার কারণে অনেকেই তাদের শারীরিক পরিবর্তনগুলি দ্রুত সনাক্ত করতে পারেন, যা তাদের জীবন বাঁচাতে সাহায্য করে।
স্তন ক্যান্সার শুধু শারীরিক নয়, মানসিকভাবে অত্যন্ত চাপ সৃষ্টি করতে পারে। রোগীরা সাধারণত একাকীত্ব এবং দুঃখে ভোগেন। তাদের জন্য প্রয়োজন গভীর মানসিক সমর্থন। এ কারণে পরিবারের সদস্যরা এবং বন্ধুদের সাহায্য অপরিহার্য। পাশাপাশি, বিভিন্ন সংগঠন এবং হাসপাতালগুলো মানসিক সেবা এবং অন্যান্য সহায়তা প্রদান করে, যা রোগীদের চিকিৎসার প্রক্রিয়া সহজ এবং কম বিপদজনক করে তোলে।
স্তন ক্যান্সারের বিরুদ্ধে সচেতনতা, প্রাথমিক সনাক্তকরণ এবং দ্রুত চিকিৎসা গ্রহণ অনেক সময় জীবন বাঁচাতে পারে। এক্ষেত্রে সচেতনতা সবচেয়ে বড় হাতিয়ার। তাই, স্তন ক্যান্সারের লক্ষণ, প্রাথমিক সনাক্তকরণ পদ্ধতি এবং চিকিৎসা সম্পর্কে সবাইকে জানানো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আপনার নিজের এবং আপনার প্রিয়জনদের জন্য সময়মতো পরীক্ষা করানো এবং সচেতনতা বৃদ্ধি করা হবে এই রোগের বিরুদ্ধে বড় এক পদক্ষেপ।
লেখক:
সিনিয়র কনসালট্যান্ট অ্যান্ড কোঅর্ডিনেটর
মেডিকেল অনকোলজি
এভারকেয়ার হসপিটাল ঢাকা
