এভারকেয়ার হসপিটাল ঢাকায় আপনাকে স্বাগতম
সিওপিডি কি সম্পূর্ণ নিরাময়যোগ্য? চিকিৎসার মাধ্যমে কীভাবে রোগ নিয়ন্ত্রণ করা যায়


ডা. এস এম আবদুল্লাহ আল মামুন
লেখক
ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ (COPD) একটি দীর্ঘমেয়াদী ও প্রগতিশীল শ্বাসযন্ত্রের রোগ, যেখানে রোগীর শ্বাস নিতে ক্রমশ অসুবিধা বাড়তে থাকে। সিওপিডি পুরোপুরি নিরাময়যোগ্য নয়। তবে সুখবর হলো, সঠিক চিকিৎসা ও জীবনধারার পরিবর্তনের মাধ্যমে সিওপিডি খুব ভালোভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়, এবং রোগীরা স্বাভাবিক ও সক্রিয় জীবন যাপন করতে পারেন।
সিওপিডি ফুসফুসের বায়ুনালী ও বায়ুথলিতে স্থায়ী ক্ষতি সৃষ্টি করে। একবার এই ক্ষতি হয়ে গেলে তা আর আগের মতো ফিরে আসে না। রোগটি ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে এবং ধূমপান বা দূষণের সংস্পর্শে থাকলে রোগের গতি আরও দ্রুত বৃদ্ধি পায়।
যদিও সিওপিডি পুরোপুরি নিরাময়যোগ্য নয়, আধুনিক চিকিৎসা রোগের অগ্রগতি কমিয়ে দেয়, লক্ষণগুলো নিয়ন্ত্রণ করে এবং রোগীর জীবনমান অনেক উন্নত করে। অনেক রোগী চিকিৎসা মেনে চললে কম কষ্টে তাদের দৈনন্দিন কাজ স্বাভাবিকভাবে করতে পারেন।
সিওপিডির চিকিৎসা কী?
সিওপিডির চিকিৎসার মূল লক্ষ্য হলো—শ্বাসকষ্ট কমানো, ফুসফুসের কার্যক্ষমতা উন্নত করা, সংক্রমণ প্রতিরোধ করা এবং রোগীর স্বাভাবিক জীবন বজায় রাখা। চিকিৎসা সাধারণত জীবনধারা পরিবর্তন, ওষুধ, থেরাপি এবং কখনও কখনও সার্জারি অন্তর্ভুক্ত করে।
ধূমপান বন্ধ করা
যদি রোগী ধূমপান করেন, তবে সিওপিডি নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে এটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। ধূমপান বন্ধ করলে ফুসফুসের ক্ষতি কমে যায় এবং রোগের অগ্রগতি ধীর হয়। নিকোটিন রিপ্লেসমেন্ট, কাউন্সেলিং বা ওষুধের সাহায্যে ধূমপান ছাড়তে সহায়তা পাওয়া যায়।
ওষুধ
সিওপিডি নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন ওষুধ ব্যবহার করা হয়, যা বায়ুনালী প্রসারিত করে, প্রদাহ কমায় এবং শ্বাস নিতে সহজ করে।
- ব্রঙ্কোডাইলেটর: বায়ুনালীর পেশি শিথিল করে, ফলে বায়ু চলাচল সহজ হয়। কিছু দ্রুত কাজ করে, কিছু দীর্ঘমেয়াদে কাজ করে।
- ইনহেলড স্টেরয়েড: বায়ুনালীর প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে এবং সংক্রমণজনিত জটিলতা কমায়।
- কম্বিনেশন ইনহেলার:দুটি বা তিনটি ওষুধের সংমিশ্রণ, যা আরও ভালো ফল দেয়।
- ফসফোডাইস্টারেজ-৪ ইনহিবিটর: গুরুতর সিওপিডিতে প্রদাহ কমাতে ব্যবহৃত হয়।
- অ্যান্টিবায়োটিক/অ্যান্টিভাইরাল: সংক্রমণ হলে বা সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি থাকলে দেওয়া হয়।
পালমোনারি রিহ্যাবিলিটেশন
এটি একটি বিশেষায়িত প্রোগ্রাম, যেখানে ব্যায়াম, শ্বাস-প্রশ্বাসের প্রশিক্ষণ, পুষ্টি পরামর্শ ও মানসিক সহায়তা দেওয়া হয়। এটি রোগীর শক্তি বাড়ায়, শ্বাসকষ্ট কমায় এবং জীবনমান উন্নত করে।
অক্সিজেন থেরাপি
যেসব রোগীর রক্তে অক্সিজেন কম থাকে, তাদের অতিরিক্ত অক্সিজেন দিতে হয়। এটি উন্নত পর্যায়ের সিওপিডিতে অত্যন্ত কার্যকর।
টিকা
সিওপিডি রোগীরা সহজে সংক্রমণে আক্রান্ত হন। ইনফ্লুয়েঞ্জা, নিউমোনিয়া এবং কোভিড-১৯ টিকা সংক্রমণের ঝুঁকি কমায়।
সার্জারি ও উন্নত চিকিৎসা
অত্যন্ত গুরুতর অবস্থায় লাং ভলিউম রিডাকশন সার্জারি, বুলেকটমি বা লাং ট্রান্সপ্লান্ট বিবেচনা করা হতে পারে।
যদিও সিওপিডি পুরোপুরি সারানো যায় না, তবে সঠিক চিকিৎসা ও জীবনধারা পরিবর্তনের মাধ্যমে রোগটিকে কার্যকরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। ধূমপান বন্ধ করা, নিয়মিত ওষুধ সেবন, পালমোনারি রিহ্যাব প্রোগ্রামে অংশ নেওয়া এবং চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলা রোগীর জীবনমানকে অনেক উন্নত করে। সঠিক সময়ে নির্ণয় ও ধারাবাহিক চিকিৎসাই সিওপিডি ব্যবস্থাপনার মূল চাবিকাঠি।
লেখকঃ
সিনিয়র কনসালট্যান্ট অ্যান্ড কো-অর্ডিনেটর
রেসপিরেটরি মেডিসিন
এভারকেয়ার হসপিটাল ঢাকা।
