এভারকেয়ার হসপিটাল ঢাকায় আপনাকে স্বাগতম
সিওপিডি (COPD) কী? লক্ষণ, কারণ ও কীভাবে নির্ণয় করা হয়


ডা. জিয়াউল হক
লেখক
সিওপিডি (COPD) কী?
ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ বা সিওপিডি হলো একটি দীর্ঘমেয়াদী শ্বাসযন্ত্রের রোগ, যেখানে ফুসফুসের বায়ুনালী ও বায়ুথলিগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর ফলে শ্বাস নিতে এবং বিশেষ করে শ্বাস ছাড়তে কষ্ট হয়। সিওপিডি মূলত দুটি অবস্থার সমন্বয়—ক্রনিক ব্রঙ্কাইটিস এবং এমফাইসেমা। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ফুসফুসের স্থিতিস্থাপকতা কমে যায় এবং বায়ুনালী সংকুচিত হয়ে পড়ে। যদিও সিওপিডি পুরোপুরি নিরাময়যোগ্য নয়, তবে সময়মতো শনাক্তকরণ, সঠিক চিকিৎসা ও জীবনধারা পরিবর্তনের মাধ্যমে রোগটি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
সিওপিডির লক্ষণ কী কী?
সিওপিডি ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পায় এবং লক্ষণগুলো অনেক সময় ফুসফুসের যথেষ্ট ক্ষতি হওয়ার পর স্পষ্ট হয়ে ওঠে। সাধারণ লক্ষণগুলো হলো:
- দীর্ঘস্থায়ী কাশি: মাসের পর মাস বা বছরের পর বছর ধরে থাকা কাশি, যা অনেক সময় কফসহ হয়।
- শ্বাসকষ্ট: প্রথমে হাঁটাচলার সময় বা পরিশ্রমে, পরে বিশ্রামের সময়ও শ্বাস নিতে কষ্ট হয়।
- শ্বাসে বাঁশির মতো শব্দ (wheezing)
- বুকে চাপ বা ভারীভাব অনুভব
- ঘন ঘন ঠান্ডা, ফ্লু বা ফুসফুসের সংক্রমণ
- সহজে ক্লান্তি
- অনিচ্ছাকৃত ওজন কমে যাওয়া – উন্নত পর্যায়ে বেশি দেখা যায়।
লক্ষণগুলো সাধারণত ধীরে ধীরে বাড়ে, এবং অনেক রোগী এগুলোকে বার্ধক্য বা ধূমপানের স্বাভাবিক প্রভাব ভেবে অবহেলা করেন।
সিওপিডি হওয়ার কারণ কী?
সিওপিডি সাধারণত দীর্ঘ সময় ধরে ফুসফুসের ক্ষতিসাধনকারী উপাদানের সংস্পর্শে থাকার ফলে হয়। প্রধান কারণগুলো হলো:
ধূমপান
সিওপিডির সবচেয়ে বড় কারণ হলো দীর্ঘমেয়াদী সিগারেট ধূমপান। তামাকের ধোঁয়া বায়ুনালীকে উত্তেজিত ও প্রদাহ সৃষ্টি করে এবং ফুসফুসের টিস্যু নষ্ট করে। পাইপ, সিগার এবং পরোক্ষ ধূমপানও ঝুঁকি বাড়ায়।
পরিবেশগত দূষণ
বায়ুদূষণ, ধুলো, ধোঁয়া বা রাসায়নিক গ্যাসের দীর্ঘমেয়াদী সংস্পর্শ ফুসফুসকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলের ঘরে কাঠ, কয়লা বা গোবর জ্বালানোর ধোঁয়া একটি বড় কারণ।
জেনেটিক কারণ
আলফা-১ অ্যান্টিট্রিপসিন (AAT) ঘাটতি নামের একটি বিরল বংশগত সমস্যা সিওপিডির ঝুঁকি বাড়ায়, এমনকি যারা ধূমপান করেন না তাদের ক্ষেত্রেও।
কর্মক্ষেত্রের দূষণ
খনি, কারখানা, নির্মাণকাজ বা কৃষিক্ষেত্রে দীর্ঘদিন ধুলো বা রাসায়নিক পদার্থের সংস্পর্শ সিওপিডির ঝুঁকি বৃদ্ধি করে।
সিওপিডি কীভাবে নির্ণয় করা হয়?
রোগটি যত তাড়াতাড়ি শনাক্ত করা যায়, ব্যবস্থাপনা তত সহজ হয়। সিওপিডি নির্ণয়ের প্রধান ধাপগুলো হলো:
রোগীর ইতিহাস ও শারীরিক পরীক্ষা
চিকিৎসক আপনার কাশি, শ্বাসকষ্ট, ধূমপানের অভ্যাস, পরিবেশগত দূষণের সংস্পর্শ এবং পারিবারিক ইতিহাস সম্পর্কে জানতে চাইবেন।
স্পাইরোমেট্রি (ফুসফুসের কার্যক্ষমতা পরীক্ষা)
এটি সিওপিডি নির্ণয়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা। এতে ফুসফুস থেকে কতটা এবং কত দ্রুত বায়ু বের করা যায় তা মাপা হয়। কম বায়ু বের হওয়া মানে বায়ুনালীর বাধা রয়েছে।
বুকের এক্স-রে বা সিটি স্ক্যান
এই পরীক্ষাগুলো ফুসফুসের ক্ষতি, এমফাইসেমা, সংক্রমণ বা অন্যান্য রোগ শনাক্ত করতে সাহায্য করে।
রক্ত পরীক্ষা
রক্তের অক্সিজেনের মাত্রা বা AAT ঘাটতি আছে কিনা তা নির্ণয়ে রক্ত পরীক্ষা করা হতে পারে।
সিওপিডি একটি গুরুতর কিন্তু নিয়ন্ত্রণযোগ্য রোগ। লক্ষণগুলো দ্রুত শনাক্ত করা এবং সময়মতো চিকিৎসা নেওয়া রোগের অগ্রগতি ধীর করতে সাহায্য করে। ধূমপান পরিহার, পরিবেশগত দূষণ থেকে নিজেকে সুরক্ষিত রাখা, নিয়মিত চেকআপ এবং চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলা—এসবই সিওপিডি রোগীদের জীবনমান উন্নত করতে কার্যকর। শ্বাসকষ্ট বা দীর্ঘস্থায়ী কাশি থাকলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
লেখকঃ
সিনিয়র কনসালটেন্ট
রেসপিরেটরি মেডিসিন
এভারকেয়ার হসপিটাল ঢাকা।
