এভারকেয়ার হসপিটাল ঢাকায় আপনাকে স্বাগতম
শিশুদের ডেঙ্গু মোকাবেলায় প্রাথমিক সনাক্তকরণ ও সতর্কতা

বাংলাদেশে বর্ষাকাল ও তার পরবর্তী সময়ে ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ দেখা দেয়। ডেঙ্গু একটি ভাইরাসজনিত রোগ যা এডিস মশার কামড়ের মাধ্যমে ছড়ায়। শিশুরা ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে তা অনেক সময় জটিল রূপ নিতে পারে। তাই অভিভাবকদের সচেতনতা, সতর্কতা ও সঠিক সময়ে চিকিৎসা নেওয়া খুবই জরুরি।
ডেঙ্গুর কারণ ও বিস্তার:
ডেঙ্গু ভাইরাস চারটি প্রধান ধরনে (DENV-1, DENV-2, DENV-3, DENV-4) বিদ্যমান। কোনো একজন ব্যক্তি একবার আক্রান্ত হলে পরবর্তীবার অন্য ধরনে আক্রান্ত হলে পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে। সাধারণত দিনের বেলা বিশেষ করে সকালে ও বিকেলে সক্রিয় এডিস মশা পরিষ্কার পানিতে জন্মায় — যেমন ফুলদানি, টব, পরিত্যক্ত টায়ার, পানির ট্যাংক বা জমে থাকা বৃষ্টির পানি।
শিশুদের মধ্যে উপসর্গ:
শিশুরা অনেক সময় উপসর্গ ঠিকভাবে প্রকাশ করতে না পারায় ডেঙ্গু চিহ্নিত করা কঠিন হয়। নিচের উপসর্গগুলো থাকলে ডেঙ্গুর সম্ভাবনা থাকে—
• ১০১°F বা তার বেশি জ্বর
• মাথা ও চোখের পেছনে ব্যথা
• মাংসপেশি ও হাড়ে ব্যথা
• বমি বা বমির ভাব
• ক্ষুধামান্দ্য
• পাতলা পায়খানা
• শরীরে র্যাশ বা লালচে দাগ
• অস্বাভাবিক ক্লান্তি বা নিস্তেজতা
• গাঁটের ব্যথা বা ফোলাভাব
• মাড়ি বা নাক দিয়ে রক্তপাত (গুরুতর ক্ষেত্রে)
ঝুঁকি ও জটিলতা:
শিশুদের মধ্যে ডেঙ্গু দ্রুত জটিল হতে পারে। হেমোরেজিক ফিভার ও ডেঙ্গু শক সিনড্রোমের ঝুঁকি বেশি, যার ফলে রক্তচাপ কমে যায়, অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ হয় এবং হাসপাতালে ভর্তি প্রয়োজন হতে পারে।
চিকিৎসা:
ডেঙ্গুর কোনও নির্দিষ্ট অ্যান্টিভাইরাল চিকিৎসা নেই। সাধারণত উপসর্গ অনুযায়ী চিকিৎসা দেওয়া হয়। শিশুর শরীরে পানিশূন্যতা ঠেকাতে পর্যাপ্ত তরল ও বিশ্রাম গুরুত্বপূর্ণ। প্যারাসিটামল ব্যবহার করা যেতে পারে তবে অ্যাসপিরিন ও আইবুপ্রোফেন এড়িয়ে চলা উচিত।
প্রতিরোধ ও সচেতনতা:
• এডিস মশার প্রজননস্থল ধ্বংস করতে হবে
• শিশুদের দিনে মশার কামড় থেকে বাঁচাতে ফুলহাতা জামা, মশারি ও মশা তাড়ানোর ক্রিম ব্যবহার করা
• ঘরের ভেতর ও বাইরে পানি জমে থাকতে না দেওয়া
• সপ্তাহে অন্তত একবার পানির পাত্র পরিষ্কার করা
• স্কুল ও খেলাধুলার জায়গায়ও মশা প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেওয়া
শিশুদের মধ্যে ডেঙ্গু একটি গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করতে পারে। তাই প্রতিরোধ ও প্রাথমিক উপসর্গে সতর্কতা অবলম্বনই হতে পারে শিশুর জীবন রক্ষার অন্যতম উপায়। অভিভাবকদের উচিত শিশুর প্রতিটি পরিবর্তন খেয়াল রাখা এবং প্রয়োজনে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া।
লেখক:
সিনিয়র কনসালটেন্ট
পেডিয়াট্রিক্স ও নিওন্যাটোলজি
নিওনেটাল ইন্টেনসেভিস্ট, ফেলো নিওন্যাটোলজি (সিঙ্গাপুর)
এভারকেয়ার হসপিটাল ঢাকা