এভারকেয়ার বিডি
প্রকাশনা
২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫

ফুসফুস ভালো রাখার উপায়

ফুসফুস ভালো রাখার উপায়

ফুসফুস মানবদেহের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ, যা শ্বাসপ্রশ্বাসের মাধ্যমে রক্তে অক্সিজেন সরবরাহ করে এবং কার্বন ডাইঅক্সাইড বের করে দেয়। সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য এ অঙ্গটির গুরুত্ব অপরিসীম। ফুসফুস সুস্থ থাকলে শুধু শ্বাস নেওয়া সহজ হয় না, বরং শরীরের সার্বিক কর্মক্ষমতা, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গের কার্যকারিতাও বজায় থাকে।

ফুসফুস ভালো রাখার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপায় হলো ধূমপান এবং পরোক্ষ ধূমপান থেকে দূরে থাকা। সিগারেটের ধোঁয়ায় হাজারো ক্ষতিকর রাসায়নিক থাকে যা ফুসফুসের টিস্যু ক্ষতিগ্রস্ত করে, ফুসফুসের ক্ষমতা কমিয়ে দেয় এবং দীর্ঘস্থায়ী শ্বাসকষ্টজনিত রোগ (COPD) ও ফুসফুসের ক্যান্সারের কারণ হতে পারে। একইভাবে পরিবেশ দূষণ, শিল্পের রাসায়নিক পদার্থ কিংবা ঘরের ভেতরের দূষণ যেমন ধুলো, ছত্রাক বা জ্বালানির ধোঁয়া ফুসফুসের জন্য ক্ষতিকর। তাই এসব থেকে রক্ষা পেতে ঘরে পর্যাপ্ত বাতাস চলাচল নিশ্চিত করা এবং প্রয়োজন হলে মাস্ক ব্যবহার করা জরুরি।

ক্ষতিকর পদার্থ থেকে দূরে থাকার পাশাপাশি নিয়মিত শারীরিক অনুশীলন ফুসফুসকে শক্তিশালী রাখতে সাহায্য করে। দৌড়ানো, হাঁটা, সাঁতার কাটা বা সাইকেল চালানোর মতো ব্যায়াম গভীর শ্বাস নেওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলে এবং ফুসফুসের ক্ষমতা বাড়ায়। এর পাশাপাশি এরোবিক ব্যায়াম শরীরে বেশি অক্সিজেন সরবরাহ করতে সাহায্য করে। বিশেষ কিছু শ্বাসপ্রশ্বাসের অনুশীলন যেমন ডায়াফ্র্যাগম্যাটিক ব্রিদিং বা যোগব্যায়ামের প্রাণায়াম ফুসফুসকে আরও নমনীয় করে, মানসিক চাপ কমায় এবং শরীরে অক্সিজেনের প্রবাহ বাড়ায়।

সুস্থ ফুসফুসের জন্য পুষ্টিকর খাদ্যও সমান গুরুত্বপূর্ণ। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন ও খনিজ সমৃদ্ধ ফল, শাকসবজি, বাদাম, বীজ এবং সম্পূর্ণ শস্য ফুসফুসের কোষকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে। এছাড়া মাছ বা তিসির বীজে পাওয়া ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড শ্বাসনালীর প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। পর্যাপ্ত পানি পান করাও জরুরি, কারণ পানি ফুসফুসের শ্লেষ্মা স্তরকে পাতলা রাখে, ফলে ফুসফুস সহজে কাজ করতে পারে এবং অপ্রয়োজনীয় কণাগুলো বের করে দিতে সক্ষম হয়।

ফুসফুস সুস্থ রাখার আরেকটি উপায় হলো প্রতিরোধমূলক স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ করা। নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা, ফুসফুসের কার্যকারিতা পরীক্ষা এবং ইনফ্লুয়েঞ্জা বা নিউমোনিয়ার মতো রোগ প্রতিরোধে ভ্যাকসিন নেওয়া গুরুতর ফুসফুসজনিত সমস্যার ঝুঁকি কমাতে পারে। পাশাপাশি নিয়মিত হাত ধোয়া, মৌসুমি ভাইরাসের সময় মাস্ক ব্যবহার এবং সংক্রামক রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির কাছ থেকে দূরে থাকা ফুসফুসকে সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে।

পেশাগত পরিবেশেও সচেতন থাকা জরুরি। যারা ধুলা, অ্যাসবেস্টস বা ক্ষতিকর কণার সংস্পর্শে কাজ করেন তাদের অবশ্যই সুরক্ষার নিয়মগুলো মেনে চলা উচিত। সঠিক ভঙ্গিমায় বসা বা দাঁড়ানো এবং দীর্ঘ সময় ঝুঁকে না থাকা ফুসফুসকে সহজে প্রসারিত হতে সাহায্য করে। পাশাপাশি অতিরিক্ত ওজন না রাখা ফুসফুসের ওপর অপ্রয়োজনীয় চাপ কমায়।

মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করাও ফুসফুসের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। দীর্ঘমেয়াদি মানসিক চাপ শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল করে এবং শ্বাস নেওয়ার ধরনকে প্রভাবিত করে। ধ্যান, প্রকৃতির মাঝে সময় কাটানো বা মাইন্ডফুলনেসের অনুশীলন মানসিক চাপ কমায় এবং শ্বাস-প্রশ্বাসকে স্বাভাবিক রাখে।

যাদের ইতোমধ্যেই হাঁপানি, ব্রংকাইটিস বা অন্যান্য ফুসফুসের রোগ রয়েছে, তাদের উচিত চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলা, পরিচিত ট্রিগারগুলো এড়িয়ে চলা এবং নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা।

সব মিলিয়ে বলা যায়, ফুসফুস ভালো রাখা কোনো একক অভ্যাসের ওপর নির্ভর করে না; বরং এটি হলো একগুচ্ছ সচেতন জীবনধারার ফল। ক্ষতিকর পদার্থ থেকে দূরে থাকা, নিয়মিত শরীরচর্চা করা, স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া, শ্বাসপ্রশ্বাসের অনুশীলন করা এবং প্রতিরোধমূলক চিকিৎসা নেওয়া—এসব অভ্যাস মেনে চললে ফুসফুস অনেকদিন সুস্থ, শক্তিশালী ও কর্মক্ষম থাকবে। এর মাধ্যমে একজন মানুষ দীর্ঘ, সক্রিয় এবং সুস্থ জীবন উপভোগ করতে পারবেন।

লেখকঃ

ডা. জিয়াউল হক

সিনিয়র কনসালটেন্ট

রেডিয়েশন অনকোলজি

এভারকেয়ার হসপিটাল ঢাকা।