এভারকেয়ার বিডি
প্রকাশনা
১২ নভেম্বর ২০২৫

নিউমোনিয়া: যেসব প্রাথমিক লক্ষণ অবহেলা করা উচিত নয়

নিউমোনিয়া: যেসব প্রাথমিক লক্ষণ অবহেলা করা উচিত নয়
Author

ডা. এস এম আবদুল্লাহ আল মামুন

লেখক

নিউমোনিয়া একটি গুরুতর ফুসফুসের সংক্রমণ, যা শিশু থেকে শুরু করে বয়স্ক—সব বয়সের মানুষকে আক্রান্ত করতে পারে। এই রোগে ফুসফুসের বাতাস ভর্তি থলি (alveoli) ফুলে যায় এবং সেখানে তরল বা পুঁজ জমে যায়, ফলে শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। নিউমোনিয়ার প্রাথমিক লক্ষণগুলো দ্রুত শনাক্ত করে চিকিৎসা শুরু করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ অবহেলায় এটি প্রাণঘাতীও হতে পারে।

নিউমোনিয়া কেন হয়

নিউমোনিয়া সাধারণত ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস বা ফাঙ্গাস দ্বারা সৃষ্ট হয়। সবচেয়ে সাধারণ কারণ হলো Streptococcus pneumoniae নামের ব্যাকটেরিয়া, যা ব্যাকটেরিয়াল নিউমোনিয়া সৃষ্টি করে। ভাইরাল নিউমোনিয়া সাধারণত ইনফ্লুয়েঞ্জা (ফ্লু) বা রেসপিরেটরি সিনসিশিয়াল ভাইরাস (RSV)-এর কারণে হয়। অনেক সময় ঠান্ডা বা ফ্লু থেকে দুর্বল প্রতিরোধ ক্ষমতার সুযোগে এটি দেখা দেয়। যাদের ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতা আছে বা যারা ধূমপান করেন — তাদের নিউমোনিয়ার ঝুঁকি বেশি।

নিউমোনিয়ার সাধারণ উপসর্গসমূহ

অবিরাম কাশি:

নিউমোনিয়ার সবচেয়ে সাধারণ উপসর্গ হলো দীর্ঘস্থায়ী কাশি। এই কাশির সঙ্গে ঘন শ্লেষ্মা বা কফ বের হয়, যা হলুদ, সবুজ কিংবা কখনও রক্তমিশ্রিত হতে পারে।

জ্বর ও কাঁপুনি:

হঠাৎ করে উচ্চ জ্বর (১০২°F বা তার বেশি) ওঠে এবং এর সঙ্গে প্রচণ্ড কাঁপুনি ও ঘাম হয়।

বুকের ব্যথা:

বুকের মাঝখানে বা এক পাশে তীব্র ব্যথা অনুভূত হয়, বিশেষ করে কাশি বা গভীর শ্বাস নেওয়ার সময়। এটি ফুসফুসের আস্তরণে প্রদাহের কারণে হয়।

শ্বাসকষ্ট:

ফুসফুসে তরল জমে যাওয়ায় স্বাভাবিকভাবে শ্বাস নেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। অল্প কাজ করলেই বা হাঁটলেই হাঁপ ধরতে পারে।

অতিরিক্ত ক্লান্তি ও দুর্বলতা:

শরীরে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়লে শক্তি কমে যায়, ফলে সারাক্ষণ দুর্বলতা ও অবসন্নতা অনুভূত হয়।

দ্রুত বা অগভীর শ্বাস:

শরীর পর্যাপ্ত অক্সিজেন না পেলে শ্বাসপ্রশ্বাসের গতি বেড়ে যায়, যা হাঁপ ধরা বা অগভীর শ্বাস হিসেবে অনুভূত হয়।

ঠোঁট ও নখ নীলচে হয়ে যাওয়া:

অক্সিজেনের ঘাটতির কারণে ঠোঁট বা আঙুলের নখ নীলচে হয়ে যেতে পারে — এটি বিপজ্জনক সংকেত এবং তাৎক্ষণিক চিকিৎসা প্রয়োজন।

বমি বমি ভাব বা ক্ষুধামন্দা:

বিশেষ করে শিশু ও বয়স্কদের ক্ষেত্রে খাবারের প্রতি অনীহা, বমি বা বমি বমি ভাব দেখা দেয়।

বয়স্কদের মানসিক বিভ্রান্তি:

অনেক বয়স্ক মানুষের ক্ষেত্রে নিউমোনিয়ার সাধারণ লক্ষণ যেমন জ্বর বা কাশি না থেকে বিভ্রান্তি বা আচরণগত পরিবর্তন দেখা দিতে পারে।

কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন

যদি আপনার দীর্ঘস্থায়ী জ্বর, বুকের ব্যথা, শ্বাসকষ্ট বা বিভ্রান্তি দেখা দেয়, তাহলে দেরি না করে চিকিৎসকের কাছে যান। নিউমোনিয়ার চিকিৎসা বিলম্বিত হলে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে এবং ফুসফুসের কার্যক্ষমতা নষ্ট হতে পারে। শিশু, বৃদ্ধ ও দুর্বল প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্কতা প্রয়োজন।

নিউমোনিয়া একটি প্রতিরোধযোগ্য ও চিকিৎসাযোগ্য রোগ, যদি প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত করা যায়। টিকা গ্রহণ, নিয়মিত হাত ধোয়া, ধূমপান পরিহার এবং পুষ্টিকর খাবার ও বিশ্রাম গ্রহণের মাধ্যমে নিউমোনিয়ার ঝুঁকি অনেক কমানো সম্ভব। উপসর্গগুলো দ্রুত চিনে চিকিৎসা শুরু করলে জীবন বাঁচানো যায় — আপনার এবং আপনার প্রিয়জনদের।


লেখকঃ

ডা. এস এম আবদুল্লাহ আল মামুন

সিনিয়র কনসালট্যান্ট অ্যান্ড কো-অর্ডিনেটর

রেসপিরেটরি মেডিসিন

এভারকেয়ার হসপিটাল ঢাকা।