এভারকেয়ার বিডি
প্রকাশনা
১৭ ডিসেম্বর ২০২৫

সিস্টেমিক স্ক্লেরোসিস: বিরল হলেও গুরুতর এক অটোইমিউন রোগ

সিস্টেমিক স্ক্লেরোসিস: বিরল হলেও গুরুতর এক অটোইমিউন রোগ
Author

ডা. ফারজানা সুমি

লেখক

সিস্টেমিক স্ক্লেরোসিস (Systemic Sclerosis), যা স্ক্লেরোডার্মা (Scleroderma) নামেও পরিচিত, একটি বিরল অটোইমিউন রোগ। এটি মূলত ত্বককে প্রভাবিত করে, তবে ফুসফুস, হৃদপিণ্ড, কিডনি ও পরিপাকতন্ত্রসহ শরীরের বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ অঙ্গেও এর প্রভাব পড়তে পারে। যদিও রোগটি বিরল, এটি যথেষ্ট গুরুতর এবং দ্রুত সনাক্তকরণ ও সঠিক ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

সিস্টেমিক স্ক্লেরোসিস কী?

“স্ক্লেরোডার্মা” শব্দের অর্থ হলো “কঠিন ত্বক” । এই রোগে শরীরের ইমিউন সিস্টেম অতিসক্রিয় হয়ে অতিরিক্ত কোলাজেন (collagen) উৎপাদন করে। এর ফলে ত্বক মোটা ও টানটান হয়ে যায় এবং গুরুতর অবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোতে ফাইব্রোসিস (scarring) সৃষ্টি হয়। এটি সাধারণত ৩০ থেকে ৫০ বছর বয়সী নারীদের মধ্যে বেশি দেখা যায়, তবে পুরুষ ও শিশুদেরও আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

উপসর্গ ও সতর্ক সংকেত

রোগের প্রাথমিক লক্ষণ হিসেবে অনেকেই প্রথমে লক্ষ্য করেন, ঠান্ডায় হাত-পা সাদা বা নীলচে হয়ে যাওয়া ও ঠান্ডা অনুভব করা—এটি রে-নো ফেনোমেনন (Raynaud’s phenomenon) নামে পরিচিত।

  • অন্যান্য সাধারণ উপসর্গগুলোর মধ্যে রয়েছে:
  • হাতে ও মুখে ত্বক মোটা, টানটান বা চকচকে হয়ে যাওয়া
  • জয়েন্টে শক্তভাব ও পেশির দুর্বলতা
  • গিলতে অসুবিধা বা হার্টবার্ন
  • শ্বাসকষ্ট বা দীর্ঘস্থায়ী কাশি (যদি ফুসফুস আক্রান্ত হয়)
  • কিডনি আক্রান্ত হলে উচ্চ রক্তচাপ

রোগের উপসর্গ ব্যক্তি ভেদে ভিন্ন হওয়ায় প্রাথমিক পর্যায়ে সঠিকভাবে শনাক্ত করা কঠিন হতে পারে।

কেন প্রাথমিক শনাক্তকরণ জরুরি

যদিও এই রোগের স্থায়ী চিকিৎসা নেই, আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থার মাধ্যমে এর গতি ধীর করা ও জীবনমান উন্নত করা সম্ভব। প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ শনাক্ত করা গেলে ফুসফুস, হৃদপিণ্ড ও কিডনির জটিলতা প্রতিরোধ করা যায় এবং চিকিৎসা শুরু করা যায় অঙ্গগুলোতে স্থায়ী ক্ষতি হওয়ার আগেই।

চিকিৎসা ও যত্ন

চিকিৎসার মূল লক্ষ্য হলো উপসর্গ নিয়ন্ত্রণ, জটিলতা প্রতিরোধ, এবং দৈনন্দিন কার্যক্ষমতা বজায় রাখা। চিকিৎসায় অন্তর্ভুক্ত হতে পারে:

  • ইমিউন সিস্টেম নিয়ন্ত্রণে রাখার ওষুধ
  • রে-নো ফেনোমেননের চিকিৎসায় রক্ত সঞ্চালন উন্নতকারী ওষুধ
  • ফুসফুসে জটিলতা থাকলে লক্ষ্যভিত্তিক থেরাপি, যেমন বায়োলজিক ড্রাগ বা অ্যান্টিফাইব্রোটিক এজেন্ট
  • সহায়ক চিকিৎসা যেমন ফিজিওথেরাপি, ত্বকের যত্ন ও খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন
  • নিয়মিত ফুসফুস, হৃদপিণ্ড ও কিডনির পরীক্ষা

জীবনধারাগত যত্নও সমান গুরুত্বপূর্ণ—যেমন ঠান্ডা এড়িয়ে চলা, ধূমপান থেকে বিরত থাকা এবং ভারসাম্যপূর্ণ জীবনযাপন বজায় রাখা।

সিস্টেমিক স্ক্লেরোসিস নিয়ে জীবন

সঠিক চিকিৎসা, সচেতনতা ও নিয়মিত পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে অধিকাংশ রোগীই স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারেন। মানসিক সহায়তা এবং কাউন্সেলিং এই রোগের মানসিক ও শারীরিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।


লেখক: 

ডা. ফারজানা সুমি

এমডি (রিউমাটোলজি), এমআরসিপি (ইউকে), এফসিপিএস (মেডিসিন),

এফআরসিপি (এডিন), এফএসিআর ফেলো (আমেরিকা),

এপ্লার  ফেলোশিপ (রিউমাটোলজি), ইউলার  সার্টিফায়েড (রিউমাটোলজি)

কনসালট্যান্ট – রিউমাটোলজি

এভারকেয়ার হসপিটাল ঢাকা