এভারকেয়ার বিডি
প্রকাশনা
১৬ অক্টোবর ২০২৫

রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস (RA): একটি জটিল কিন্তু নিয়ন্ত্রণযোগ্য রোগ

রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস (RA): একটি জটিল কিন্তু নিয়ন্ত্রণযোগ্য রোগ

রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস একটি দীর্ঘমেয়াদী অটোইমিউন রোগ, যেখানে দেহের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভুলবশত নিজের অস্থিসন্ধিগুলোর ওপর আক্রমণ করে। এটি সাধারণ টাইপ আর্থ্রাইটিসের (অস্টিওআর্থ্রাইটিস) মতো নয়; বরং রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস অস্থিসন্ধির আবরণে প্রদাহ সৃষ্টি করে, যার ফলে ফোলাভাব, ব্যথা, জড়তা এবং সময়মতো চিকিৎসা না হলে স্থায়ী ক্ষতি হতে পারে।

এই রোগ সাধারণত হাত ও পায়ের ছোট ছোট অস্থিসন্ধিগুলোতে শুরু হয়, তবে বড় অস্থিসন্ধি এমনকি ফুসফুস, হৃদপিণ্ড ও চোখের মতো অভ্যন্তরীণ অঙ্গও এতে আক্রান্ত হতে পারে।

কে আক্রান্ত হন এবং কখন?

রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস সাধারণত ৩০ থেকে ৬০ বছর বয়সের মধ্যে শুরু হয় এবং মহিলারা এই রোগে পুরুষদের চেয়ে বেশি আক্রান্ত হন। শুরুতে যেসব লক্ষণ দেখা যেতে পারে তা হলো:

  • সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর ৩০ মিনিটের বেশি সময় ধরে অস্থিসন্ধিতে জড়তা বা শক্তভাব
  • একাধিক অস্থিসন্ধিতে ফোলাভাব ও ব্যথা
  • ক্লান্তিভাব এবং অজানা কারণে জ্বর

এই রোগ ধীরে ধীরে ও কখনো কখনো নিঃশব্দে (বিনা লক্ষণে) অগ্রসর হতে পারে, তাই প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ শনাক্ত করা এবং রিউমাটোলজিস্টের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।

চিকিৎসা ও ব্যবস্থাপনা

আধুনিক চিকিৎসাব্যবস্থার কল্যাণে এখন রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস নিয়ন্ত্রণ করা অনেকটাই সম্ভব। ডিজিজ-মডিফাইং অ্যান্টিরিউম্যাটিক ড্রাগস (DMARDs) এবং বায়োলজিক ওষুধ প্রদাহ কমাতে, অস্থিসন্ধি রক্ষা করতে এবং রোগীর জীবনমান উন্নত করতে ব্যাপকভাবে কার্যকর।

ওষুধের পাশাপাশি, নিয়মিত ফিজিওথেরাপি, ব্যায়াম, ধূমপান ত্যাগ, ওজন নিয়ন্ত্রণ এবং স্বাস্থ্যকর জীবনধারা অনুসরণ করাও রোগ ব্যবস্থাপনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস নিয়ে বাঁচা – এক নতুন সম্ভাবনা

রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস নিয়ে জীবনযাপন সহজ নয়, তবে সঠিক সময়ে রোগ নির্ণয় এবং সঠিক চিকিৎসা পেলে অধিকাংশ রোগীই স্বাভাবিক ও কর্মক্ষম জীবনযাপন করতে পারেন। সচেতনতা এখানে মূল চাবিকাঠি—আপনি অথবা আপনার পরিচিত কেউ যদি দীর্ঘস্থায়ী অস্থিসন্ধির ব্যথা ও জড়তায় ভোগেন, তাহলে অবহেলা না করে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। সময়মতো চিকিৎসাই পারে ভবিষ্যতের জটিলতা থেকে মুক্তি দিতে।


লেখক: 

ডা. ফারজানা সুমি

এমডি (রিউমাটোলজি), এমআরসিপি (ইউকে), এফসিপিএস (মেডিসিন),

এফআরসিপি (এডিন), এফএসিআর ফেলো (আমেরিকা),

এপ্লার  ফেলোশিপ (রিউমাটোলজি), ইউলার  সার্টিফায়েড (রিউমাটোলজি)

কনসালট্যান্ট – রিউমাটোলজি

এভারকেয়ার হসপিটাল ঢাকা