এভারকেয়ার হসপিটাল ঢাকায় আপনাকে স্বাগতম
ভিটামিন ডি: সুস্থতায় এক অপরিহার্য পুষ্টি উপাদান

ভিটামিন ডি শরীরের জন্য একটি অপরিহার্য পুষ্টি উপাদান। এটি চর্বিতে দ্রবণীয় একধরনের স্টেরয়েড হরমোন, যা প্রতিদিন সামান্য পরিমাণে প্রতিটি মানুষের প্রয়োজন। মানুষের শরীরে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাসের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখে ভিটামিন ডি, যা হাড়, মাংসপেশী ও দাঁতের সুরক্ষায় অপরিহার্য ভূমিকা রাখে।
এর অভাবে শিশুদের রিকেট রোগ হতে পারে, যেখানে হাড় নরম ও দুর্বল হয়ে যায়, হাতের কব্জি ফুলে যায়, পা বেঁকে যায় এবং শিশুর বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে ভিটামিন ডি এর ঘাটতি অস্টিওম্যালাসিয়া সৃষ্টি করে—যেখানে হাড় নরম ও দুর্বল হওয়ার পাশাপাশি হাড়ে ব্যথা ও পেশী দুর্বলতা দেখা দেয়। গুরুতর ক্যালসিয়াম ঘাটতির ফলে খিঁচুনিও হতে পারে।
এছাড়া, এই ভিটামিন দেহে নানা জৈবিক প্রক্রিয়ায় প্রভাব ফেলে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এটি নিউমোনিয়া, এজমা এবং মৌসুমি ফ্লু থেকে সুরক্ষা দেয়। গবেষণায় দেখা গেছে, পর্যাপ্ত ভিটামিন ডি হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস ও স্থূলতার ঝুঁকি কমায়। এমনকি উদ্বেগ, বিষণ্ণতা ও ক্যান্সার নিয়ন্ত্রণেও এর ভূমিকা রয়েছে। এর ঘাটতিতে ক্লান্তি ও অবসাদ দেখা দেয়।
গর্ভবতী মায়ের শরীরে ভিটামিন ডি এর অভাব থাকলে প্রি-টার্ম ডেলিভারি, স্বল্প ওজনের শিশু জন্ম, প্রি-এক্লাম্পসিয়া এবং ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বেড়ে যায়। সব বয়সেই এই ঘাটতি স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। কিন্তু উদ্বেগের বিষয় হলো, বাংলাদেশে প্রায় ৮৫–৯০% মানুষের শরীরে ভিটামিন ডি এর অভাব রয়েছে।
ভিটামিন ডি একমাত্র ভিটামিন যা খাদ্যে খুব অল্প পরিমাণে থাকে। এর প্রায় ৯০% উৎস প্রাকৃতিক সূর্যের আলো। সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৩টার মধ্যে শরীরের অন্তত ২০% অংশ সরাসরি সূর্যের আলোতে ১৫–৩০ মিনিট থাকলে ত্বকে প্রাকৃতিকভাবে পর্যাপ্ত ভিটামিন ডি তৈরি হয়। পরে তা লিভার ও কিডনিতে প্রক্রিয়াজাত হয়ে কার্যকর হয়। তবে ভৌগলিক অবস্থান, ঋতু ও গায়ের রঙের কারণে উৎপাদনের পরিমাণ ভিন্ন হতে পারে। শহর ও গ্রামীণ অঞ্চলের মানুষের মধ্যেও এই পার্থক্য থাকে, এবং শীতে এর ঘাটতি প্রায় দ্বিগুণ হয়।
ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবারের মধ্যে রয়েছে সামুদ্রিক তৈলাক্ত মাছ (সেমন, টুনা, রূপচাঁদা, সার্ডিন), ডিমের কুসুম, দুধ, দই, পনির, ভিটামিন-ফর্টিফাইড সিরিয়াল, মাশরুম, ব্রকলি ও কমলার রস। এছাড়াও রয়েছে বাজারজাত ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্ট।
সূর্যের আলোতে না আসা, সানস্ক্রিন ব্যবহার, অধিকাংশ সময় ঘরে থাকা, সম্পূর্ণ শরীর ঢাকা পোশাক পরা, বা ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার কম খাওয়া—এসব কারণে ঘাটতি দেখা দিতে পারে। দীর্ঘদিন লিভার, কিডনি বা হজমের সমস্যা থাকা, জেনেটিক কারণ, কিছু ওষুধ সেবন, ওবেসিটি বা অতিরিক্ত চর্বি জমে থাকা—এসব কারণেও শরীরে ভিটামিন ডি ঠিকভাবে কাজ করতে পারে না।
তাই সব বয়সের মানুষকে নিয়মিত সূর্যের আলোতে সময় কাটাতে এবং ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। ঘাটতির লক্ষণ দেখা দিলে রক্ত পরীক্ষা করে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সাপ্লিমেন্ট ও ক্যালসিয়াম গ্রহণ করা উচিত। বিশেষ করে গর্ভবতী মা, নবজাতক ও দুই বছরের নিচের শিশুদের জন্য নিয়মিত ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্ট খুবই জরুরি। তবে অতিরিক্ত গ্রহণেও ঝুঁকি রয়েছে—হাইপারভিটামিনোসিস ডি বা ভিটামিন ডি টক্সিসিটি হতে পারে।
সুতরাং আসুন, আমরা ভিটামিন ডি এর প্রয়োজনীয়তা ও উৎস সম্পর্কে সচেতন হই এবং এর ঘাটতির লক্ষণ দেখা দিলে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শমত সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করি।
সিনিয়র কনসালটেন্ট
পেডিয়াট্রিক ও নিওনেটোলজি বিভাগ
এভারকেয়ার হসপিটাল ঢাকা