এভারকেয়ার বিডি
প্রকাশনা
২৯ অক্টোবর ২০২৫

স্ট্রোক কেন হয়, লক্ষণ কী এবং কীভাবে প্রতিরোধ করা যায়

স্ট্রোক কেন হয়, লক্ষণ কী এবং কীভাবে প্রতিরোধ করা যায়
Author

প্রফেসর ডা. আনোয়ার ইসরাইল

লেখক

স্ট্রোক হলো এমন একটি মারাত্মক শারীরিক অবস্থা, যা বিশ্বজুড়ে মৃত্যু ও অক্ষমতার অন্যতম প্রধান কারণ। এটি ঘটে যখন মস্তিষ্কের কোনো অংশে রক্ত প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয় বা কমে যায়, ফলে মস্তিষ্কে পর্যাপ্ত অক্সিজেন ও পুষ্টি পৌঁছায় না। কয়েক মিনিটের মধ্যেই মস্তিষ্কের কোষ মারা যেতে শুরু করে। তাই স্ট্রোকের ক্ষেত্রে দ্রুত চিকিৎসা নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।

স্ট্রোক কেন হয়?

স্ট্রোক মূলত মস্তিষ্কে রক্ত প্রবাহের সমস্যা থেকে ঘটে। এর দুইটি প্রধান ধরন আছে — ইস্কেমিক (Ischemic) এবং হেমোরেজিক (Hemorrhagic) স্ট্রোক।

ইস্কেমিক স্ট্রোক:

প্রায় ৮০–৮৫% স্ট্রোক এই ধরনের হয়। এটি ঘটে যখন কোনো রক্তনালী রক্ত জমাট (clot) বা চর্বি জমে সংকুচিত বা বন্ধ হয়ে যায়, ফলে রক্ত মস্তিষ্কে পৌঁছাতে পারে না।

হেমোরেজিক স্ট্রোক:

এটি ঘটে যখন মস্তিষ্কের কোনো দুর্বল রক্তনালী ফেটে যায় এবং মস্তিষ্কের ভেতরে বা আশপাশে রক্তক্ষরণ হয়। উচ্চ রক্তচাপ, মস্তিষ্কে ফোলা (aneurysm), বা আঘাত এর সাধারণ কারণ।

স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায় এমন কিছু কারণ হলো:

  • উচ্চ রক্তচাপ (Hypertension)
  • ডায়াবেটিস
  • উচ্চ কোলেস্টেরল
  • ধূমপান ও অতিরিক্ত মদ্যপান
  • হৃদরোগ বা অনিয়মিত হৃদস্পন্দন
  • স্থূলতা ও অনিয়মিত জীবনযাপন
  • বয়স ও পারিবারিক ইতিহাস

 স্ট্রোকের লক্ষণ কী কী?

স্ট্রোকের লক্ষণ দ্রুত চিনে ফেলা জীবন রক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ডাক্তাররা সাধারণত FAST সূত্রটি মনে রাখার পরামর্শ দেন —

  • F – Face Drooping (মুখ বেকে যাওয়া): মুখের এক পাশ বেঁকে যায় বা অবশ লাগে।
  • A – Arm Weakness (হাতে দুর্বলতা): এক হাত দুর্বল হয়ে পড়ে বা নিচে নেমে আসে।
  • S – Speech Difficulty (কথা জড়িয়ে যাওয়া): কথা অস্পষ্ট হয় বা রোগী কিছু বলতে পারে না।
  • T – Time to Call for Help (তৎক্ষণাৎ সাহায্য নিন): এসব লক্ষণ দেখা দিলে অবিলম্বে হাসপাতালে যোগাযোগ করুন।

এছাড়াও আরও কিছু লক্ষণ হতে পারে —

  • শরীরের এক পাশ অবশ বা দুর্বল হয়ে যাওয়া
  • হঠাৎ চোখে ঝাপসা দেখা বা দৃষ্টি হারানো
  • মাথা ঘোরা, ভারসাম্য হারানো বা হাঁটতে কষ্ট হওয়া
  • হঠাৎ তীব্র মাথাব্যথা, যার কোনো স্পষ্ট কারণ নেই

মনে রাখবেন — একটি মুহূর্তও দেরি করা বিপজ্জনক হতে পারে।

 স্ট্রোক প্রতিরোধের উপায়

সুখবর হলো, প্রায় ৮০% স্ট্রোকই সঠিক জীবনধারা ও নিয়মিত স্বাস্থ্যপরিচর্যার মাধ্যমে প্রতিরোধ করা সম্ভব।

  • রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করুন: উচ্চ রক্তচাপ স্ট্রোকের প্রধান কারণ। নিয়মিত রক্তচাপ পরীক্ষা করুন, ওষুধ খাওয়ার নিয়ম মানুন এবং লবণ কম খান।
  • ডায়াবেটিস ও কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করুন: সুষম খাদ্য গ্রহণ করুন এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ গ্রহণ করুন।
  • ধূমপান ত্যাগ ও মদ্যপান সীমিত করুন: ধূমপান ও অতিরিক্ত মদ্যপান রক্তনালী ক্ষতিগ্রস্ত করে ও রক্ত ঘন করে তোলে, ফলে স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে।
  • নিয়মিত ব্যায়াম করুন: সপ্তাহে অন্তত পাঁচ দিন ৩০ মিনিটের মাঝারি মাত্রার ব্যায়াম করুন। যেমন — হাঁটা, সাঁতার, বা সাইক্লিং।
  • সুষম খাদ্য গ্রহণ করুন: ফল, শাকসবজি, সম্পূর্ণ শস্য ও মাছজাতীয় খাবার বেশি খান। ট্রান্সফ্যাট ও প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে চলুন।
  • হৃদরোগের যত্ন নিন: হৃদস্পন্দনের অনিয়ম বা হার্টের ভালভের সমস্যা থাকলে নিয়মিত চিকিৎসা নিন।
  • মানসিক চাপ ও ঘুম নিয়ন্ত্রণ করুন: পর্যাপ্ত ঘুম ও মানসিক প্রশান্তি রক্তচাপ ও হৃদস্বাস্থ্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।

স্ট্রোক একটি হঠাৎ ঘটে যাওয়া জটিল অবস্থা, কিন্তু সঠিক সচেতনতা ও জীবনধারা পরিবর্তনের মাধ্যমে এটি প্রতিরোধ করা যায়। প্রাথমিক লক্ষণগুলো চিনে দ্রুত চিকিৎসা নিলে জীবন রক্ষা সম্ভব। নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা, সঠিক খাদ্যাভ্যাস, এবং মানসিক সুস্থতা বজায় রাখাই হলো স্ট্রোক প্রতিরোধের মূল চাবিকাঠি।

মনে রাখবেন — সময়মতো পদক্ষেপই বাঁচাতে পারে জীবন।


লেখকঃ


প্রফেসর ডা. আনোয়ার ইসরাইল

সিনিয়র কনসালটেন্ট 

নিউরোলজি

এভারকেয়ার হসপিটাল ঢাকা।