এভারকেয়ার হসপিটাল ঢাকায় আপনাকে স্বাগতম
ডায়াবেটিক ফুট কেয়ার: আপনার পায়ের সুরক্ষায় সচেতন হোন


ডা. নাজমুল ইসলাম
লেখক
ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য পায়ের যত্ন নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দীর্ঘদিন রক্তে অতিরিক্ত চিনি থাকলে শরীরের রক্ত চলাচল ব্যাহত হতে পারে এবং স্নায়ুর ক্ষতি (neuropathy) হতে পারে। এর ফলে পায়ে আঘাত, সংক্রমণ বা ঘা সহজে হতে পারে এবং সেগুলো সারতেও সময় লাগে। সঠিকভাবে পায়ের যত্ন নিলে এসব জটিলতা অনেকাংশে প্রতিরোধ করা যায়।
ডায়াবেটিস পায়ে প্রভাব ফেলে কেন
রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা দীর্ঘদিন বেশি থাকলে শরীরের ছোট রক্তনালি ও স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এটি সাধারণত ডায়াবেটিক নিউরোপ্যাথি নামে পরিচিত। এতে পায়ে ঝিনঝিনি, অবশ ভাব বা সংবেদনশক্তি কমে যায়। ফলে ছোট খোঁচা, ফোস্কা বা কাটা জায়গা বোঝা যায় না। একই সঙ্গে রক্ত চলাচল কমে যাওয়ায় ক্ষত সারতে দেরি হয়, যা সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ায় এবং মারাত্মক ক্ষেত্রে গ্যাংগ্রিন বা পা কেটে ফেলতে হতে পারে।
ডায়াবেটিস রোগীদের সাধারণ পায়ের সমস্যা
ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে নিম্নলিখিত সমস্যাগুলো দেখা যায়ঃ
- ফুট আলসার (ঘা): ঘর্ষণ, চাপ বা আঘাতের কারণে পায়ে ক্ষত বা ফোস্কা তৈরি হতে পারে।
- সংক্রমণ: ছোট কাটা বা ফোস্কাও সহজে ইনফেকশন হতে পারে।
- ক্যালাস ও কর্ন: ভুল মাপের জুতা বা অতিরিক্ত চাপের কারণে ত্বকে শক্ত স্তর তৈরি হয়।
- ফাটা ত্বক: এতে ব্যাকটেরিয়া সহজে প্রবেশ করে সংক্রমণ ঘটাতে পারে।
তবে প্রাথমিক পর্যায়ে এসব সমস্যা চিহ্নিত ও যত্ন নিলে বড় জটিলতা এড়ানো যায়।
ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য পায়ের যত্নের টিপস
প্রতিদিন পা পরীক্ষা করুন:
প্রতিদিন আপনার পা ভালোভাবে দেখুন — কোথাও কাটা, ফোস্কা, লালচে ভাব, ফোলাভাব বা রঙ পরিবর্তন হচ্ছে কি না। প্রয়োজনে আয়না ব্যবহার করুন বা পরিবারের কারও সাহায্য নিন।
পা ধুয়ে শুকিয়ে নিন:
গরম নয়, হালকা গরম পানি ও হালকা সাবান দিয়ে প্রতিদিন পা ধুয়ে নিন। তারপর ভালোভাবে শুকিয়ে নিন, বিশেষ করে আঙুলের ফাঁকগুলো।
ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন:
পায়ের ত্বক নরম রাখতে লোশন বা ক্রিম ব্যবহার করুন। তবে আঙুলের ফাঁকে ক্রিম ব্যবহার করবেন না, কারণ সেখানে আর্দ্রতা থেকে ফাঙ্গাল ইনফেকশন হতে পারে।
নখ কাটার সময় সতর্ক থাকুন:
নখ সোজা করে কাটুন এবং প্রান্তগুলো ফাইল করে মসৃণ করে নিন। খুব ছোট করে বা কোণা কেটে ফেলবেন না, এতে ইনগ্রোন নখ হতে পারে।
সঠিক জুতা পরুন:
আরামদায়ক, মাপমতো এবং বায়ু চলাচলযোগ্য জুতা পরুন। শক্ত, টাইট বা হাই হিল জুতা পরিহার করুন। সর্বদা পরিষ্কার ও শুকনো মোজা ব্যবহার করুন।
খালি পায়ে হাঁটবেন না:
ঘরের ভেতরেও খালি পায়ে হাঁটবেন না। পায়ে আঘাত বা কাটা লাগতে পারে।
রক্তে চিনির মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখুন:
সঠিক ডায়েট, ওষুধ ও ব্যায়ামের মাধ্যমে রক্তে গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণে রাখলে স্নায়ু ও রক্তনালির ক্ষতি কমে এবং পায়ের জটিলতা প্রতিরোধ করা যায়।
নিয়মিত পা পরীক্ষা করান:
বছরে অন্তত একবার ডাক্তার বা পডিয়াট্রিস্টের কাছে পা পরীক্ষা করান। পায়ে ঘা, রঙ পরিবর্তন বা অবশ ভাব থাকলে দ্রুত চিকিৎসা নিন।
কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন
যদি পায়ে ফোলা, ব্যথা, ক্ষত না সারার সমস্যা বা ত্বকের রঙ ও তাপমাত্রার পরিবর্তন লক্ষ্য করেন, তাহলে দেরি না করে ডাক্তারের কাছে যান। ছোট সমস্যা অবহেলা করলে তা বড় জটিলতায় রূপ নিতে পারে।
ডায়াবেটিসে পায়ের যত্ন নেওয়া মানেই নিজের সুস্থতার যত্ন নেওয়া। প্রতিদিন পা পরিষ্কার রাখা, পরীক্ষা করা এবং রক্তে চিনির মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখার মাধ্যমে মারাত্মক জটিলতা থেকে নিজেকে রক্ষা করা সম্ভব। মনে রাখুন — সুস্থ পা মানে সুস্থ জীবন।
লেখকঃ
সিনিয়র কনসালটেন্ট
ডায়াবেটলজি এন্ড এন্ডোক্রাইনোলজি
এভারকেয়ার হসপিটাল ঢাকা।
