এভারকেয়ার হসপিটাল ঢাকায় আপনাকে স্বাগতম
ডায়াবেটিস প্রতিরোধে করণীয়: সুস্থ ভবিষ্যতের জন্য সহজ জীবনধারার পরিবর্তন


ডা. আহসানুল হক আমিন
লেখক
ডায়াবেটিস বর্তমানে সারা বিশ্বের দ্রুত বর্ধনশীল স্বাস্থ্যসমস্যাগুলোর একটি। এটি এমন একটি অবস্থা, যেখানে শরীর রক্তে গ্লুকোজের (চিনি) মাত্রা সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। ফলস্বরূপ, হৃদরোগ, কিডনি বিকল, স্নায়ু ক্ষতি এবং দৃষ্টিশক্তি হ্রাসের মতো জটিলতা দেখা দিতে পারে। তবে সুখবর হলো — টাইপ–২ ডায়াবেটিস বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই প্রতিরোধযোগ্য। কিছু সচেতন জীবনধারার পরিবর্তনের মাধ্যমে আপনি ডায়াবেটিসের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে কমাতে পারেন এবং রক্তে চিনির ভারসাম্য বজায় রাখতে পারেন।
স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখুন
অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতা টাইপ–২ ডায়াবেটিসের অন্যতম প্রধান ঝুঁকির কারণ। বিশেষ করে পেটের চারপাশে অতিরিক্ত চর্বি ইনসুলিন প্রতিরোধ বাড়ায়, ফলে শরীরের রক্তে চিনি নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়ে। শরীরের মাত্র ৫–১০% ওজন কমালেও ঝুঁকি অনেকটা হ্রাস পায়। ধীরে ধীরে ওজন কমানোর জন্য সুষম খাদ্যাভ্যাস ও নিয়মিত ব্যায়ামের অভ্যাস গড়ে তুলুন।
সুষম খাদ্য গ্রহণ করুন
ডায়াবেটিস প্রতিরোধে খাদ্যাভ্যাস সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। আঁশ, ভিটামিন ও খনিজসমৃদ্ধ খাবার যেমন— শাকসবজি, ফল, ডাল, পুরো দানা শস্য ও লীন প্রোটিন বেছে নিন। অতিরিক্ত মিষ্টি পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাবার ও অতিরিক্ত তেলে ভাজা পদ এড়িয়ে চলুন। সাদা চাল বা পাউরুটির পরিবর্তে ব্রাউন রাইস বা আটার রুটি খান। নিয়মিত সময়ে ছোট ছোট পরিমাণে খাবার গ্রহণ করলে রক্তে চিনির মাত্রা স্থিতিশীল থাকে।
নিয়মিত ব্যায়াম করুন
শরীরচর্চা রক্তে গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে, ইনসুলিনের কার্যকারিতা বাড়ায় এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখে। সপ্তাহে অন্তত ৫ দিন ৩০ মিনিট করে মাঝারি মাত্রার ব্যায়াম করুন— যেমন দ্রুত হাঁটা, সাইকেল চালানো, সাঁতার কাটা বা যোগব্যায়াম। লিফটের পরিবর্তে সিঁড়ি ব্যবহার করা বা কাছাকাছি দূরত্বে হাঁটা — ছোট এই পরিবর্তনগুলোও অনেক উপকারে আসে।
পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করুন
অপর্যাপ্ত ঘুম শরীরের ইনসুলিন নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা কমিয়ে দেয় এবং ক্ষুধা হরমোন বাড়ায়, ফলে অতিরিক্ত খাওয়ার প্রবণতা দেখা দেয়। প্রাপ্তবয়স্কদের প্রতিদিন ৭–৮ ঘণ্টা ভালো ঘুমানো উচিত, যাতে শরীর ও মন উভয়ই সুস্থ থাকে।
মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করুন
দীর্ঘমেয়াদি মানসিক চাপ রক্তে চিনি বাড়িয়ে দেয় এবং অস্বাস্থ্যকর অভ্যাসের দিকে ঠেলে দেয়, যেমন অতিরিক্ত খাওয়া বা ধূমপান। মানসিক চাপ কমাতে গভীর শ্বাস-প্রশ্বাস, ধ্যান বা মেডিটেশন অনুশীলন করুন। পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানো, শখের কাজ করা বা বিশ্রাম নেওয়াও কার্যকর উপায়।
নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করুন
যদি আপনার ওজন বেশি হয়, পরিবারের কারও ডায়াবেটিস থাকে, বা রক্তচাপ বেশি থাকে — তাহলে নিয়মিত রক্তে চিনির মাত্রা পরীক্ষা করুন। প্রিডায়াবেটিস ধরা পড়লে সময়মতো পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব, যা ভবিষ্যতে ডায়াবেটিস প্রতিরোধে সহায়ক।
ডায়াবেটিস প্রতিরোধ মানে কঠোর ডায়েট বা অতিরিক্ত ব্যায়াম নয়; বরং এটি সচেতন জীবনধারার ধারাবাহিক প্রয়োগ। সুষম খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত শরীরচর্চা, মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন এবং সময়মতো স্বাস্থ্য পরীক্ষা— এই অভ্যাসগুলো রক্তে চিনির ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। আজ থেকেই ছোট ছোট পরিবর্তন শুরু করুন — সুস্থ, ডায়াবেটিসমুক্ত ভবিষ্যতের জন্য।
লেখকঃ
সিনিয়র কনসালট্যান্ট
ডায়াবেটলজি এন্ড এন্ডোক্রাইনোলজি
এভারকেয়ার হসপিটাল ঢাকা।
