এভারকেয়ার বিডি
প্রকাশনা
৩০ আগস্ট ২০২৫

স্পাইন টিউমার: কারণ, উপসর্গ ও চিকিৎসা

স্পাইন টিউমার: কারণ, উপসর্গ ও চিকিৎসা

স্পাইন টিউমার হলো মেরুদণ্ড বা মেরুদণ্ডের হাড় (ভার্টিব্রা)-এর ভেতরে বা আশেপাশে অস্বাভাবিক কোষ বৃদ্ধির ফল। শরীরের অন্যান্য অংশের তুলনায় মেরুদণ্ডে টিউমার তুলনামূলকভাবে কম দেখা যায়, তবে এটি মারাত্মক জটিলতা তৈরি করতে পারে, কারণ এটি স্নায়ু ও স্পাইনাল কর্ডকে সরাসরি প্রভাবিত করে। তাই প্রাথমিক পর্যায়ে সঠিকভাবে নির্ণয় ও চিকিৎসা করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

স্পাইন টিউমারের ধরন

সাধারণভাবে স্পাইন টিউমার তিন ভাগে ভাগ করা হয়ঃ

  • ইন্ট্রামেডুলারি টিউমার – এগুলো সরাসরি স্পাইনাল কর্ডের ভেতরে তৈরি হয়, সাধারণত অ্যাস্ট্রোসাইটোমা বা এপেন্ডিমোমা থেকে।
  • ইন্ট্রাডুরাল-এক্সট্রামেডুলারি টিউমার – এগুলো স্পাইনাল কর্ডকে ঘিরে থাকা আবরণ (ডিউরা)-এর ভেতরে হলেও কর্ডের বাইরে গজায়। যেমন মেনিনজিওমা ও শোয়ানোমা।
  • এক্সট্রাডুরাল টিউমার – এগুলো সাধারণত মেরুদণ্ডের হাড়ে তৈরি হয় এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই শরীরের অন্য কোনো অঙ্গের ক্যান্সার থেকে ছড়িয়ে আসে। যেমন ফুসফুস, স্তন বা প্রোস্টেট ক্যান্সার।
কারণ ও ঝুঁকি

প্রাইমারি স্পাইন টিউমারের সঠিক কারণ সবসময় জানা যায় না। তবে জেনেটিক মিউটেশন অনেক সময় কোষকে অনিয়ন্ত্রিতভাবে বাড়তে সাহায্য করে। কিছু বংশগত রোগ যেমন নিউরোফাইব্রোমাটোসিস ও ভন হিপেল-লিনডাউ রোগ ঝুঁকি বাড়ায়। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে স্পাইন টিউমার হয় শরীরের অন্য অঙ্গ থেকে ক্যান্সার ছড়িয়ে আসার কারণে।

উপসর্গ

টিউমারের আকার, অবস্থান ও কত দ্রুত বাড়ছে তার উপর নির্ভর করে উপসর্গ ভিন্ন হতে পারে। সাধারণ লক্ষণগুলো হলো:

  • দীর্ঘস্থায়ী কোমর বা ঘাড় ব্যথা, রাতে বেশি বাড়ে।
  • হাত-পা বা বুকে অসাড়তা ও দুর্বলতা।
  • হাঁটতে অসুবিধা বা ভারসাম্যহীনতা।
  • মলমূত্র নিয়ন্ত্রণে সমস্যা (গুরুতর অবস্থায়)।
  • হাড় দুর্বল হয়ে যাওয়া বা ফ্র্যাকচার।
কারণ সাধারণ কোমর ব্যথাও খুব প্রচলিত, তাই স্পাইন টিউমার অনেক সময় দেরিতে ধরা পড়ে।

নির্ণয়

স্পাইন টিউমার শনাক্ত করতে সাধারণত MRI বা CT স্ক্যান ব্যবহার করা হয়। কিছু ক্ষেত্রে বায়োপসি করে টিউমারটি ক্যান্সারজনিত কিনা তা পরীক্ষা করা হয়। আবার রক্ত পরীক্ষা বা শরীরের অন্য অঙ্গের স্ক্যানও করা হতে পারে।

চিকিৎসা

চিকিৎসা নির্ভর করে টিউমারের ধরন, আকার, অবস্থান ও রোগীর সার্বিক স্বাস্থ্যের উপর। সাধারণ চিকিৎসার পদ্ধতিগুলো হলো:

  • সার্জারি – টিউমার যতটা সম্ভব সম্পূর্ণ অপসারণের চেষ্টা করা হয়। আধুনিক মাইক্রোসার্জারি ও ইমেজিং ব্যবহারে সফলতা বেড়েছে।
  • রেডিয়েশন থেরাপি – যেসব টিউমার সম্পূর্ণ অপসারণ সম্ভব নয় বা মেটাস্ট্যাটিক কেসে।
  • কেমোথেরাপি ও টার্গেটেড থেরাপি – বিশেষ কিছু ক্যান্সারজনিত টিউমারে ব্যবহৃত হয়।
  • স্টেরয়েড ও ওষুধ – প্রদাহ ও ব্যথা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।

রোগের পূর্বাভাস

আধুনিক চিকিৎসার কারণে অনেক স্পাইন টিউমার সফলভাবে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব, বিশেষত যদি প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়ে। তবে চিকিৎসা বিলম্বিত হলে স্থায়ী স্নায়ু ক্ষতি, পক্ষাঘাত বা জীবনহানি ঘটতে পারে।

লেখক:
সিনিয়র কনসালট্যান্ট অ্যান্ড কো-অর্ডিনেটর
এভারকেয়ার হসপিটাল ঢাকা