এভারকেয়ার বিডি
প্রকাশনা
১৫ নভেম্বর ২০২৫

ডায়াবেটিসের উপসর্গ: যেগুলো অবহেলা করা উচিত নয়

ডায়াবেটিসের উপসর্গ: যেগুলো অবহেলা করা উচিত নয়
Author

প্রফেসর ডা. আব্দুল মান্নান সরকার

লেখক

ডায়াবেটিস বর্তমানে বিশ্বের অন্যতম সাধারণ দীর্ঘস্থায়ী রোগ, যা প্রতি বছর লাখ লাখ মানুষকে আক্রান্ত করছে। এটি এমন একটি অবস্থা যখন শরীর ইনসুলিন নামক হরমোনের ঘাটতি বা অকার্যকারিতার কারণে রক্তে গ্লুকোজের (চিনি) মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। ডায়াবেটিসের প্রাথমিক উপসর্গগুলো চিহ্নিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ দ্রুত শনাক্ত ও চিকিৎসা শুরু করলে হৃদরোগ, কিডনি বিকল, দৃষ্টিশক্তি হ্রাস, স্নায়ু ক্ষতি ইত্যাদি জটিলতা এড়ানো যায়।

ডায়াবেটিস কেন হয়?

ডায়াবেটিস তখন হয় যখন শরীর পর্যাপ্ত ইনসুলিন তৈরি করতে পারে না (টাইপ-১ ডায়াবেটিস) বা তৈরি করা ইনসুলিন সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারে না (টাইপ-২ ডায়াবেটিস)। ইনসুলিন হলো অগ্ন্যাশয় থেকে উৎপন্ন একটি হরমোন, যা খাবার থেকে পাওয়া গ্লুকোজকে শক্তিতে রূপান্তর করতে সাহায্য করে। ইনসুলিন ঠিকমতো কাজ না করলে গ্লুকোজ রক্তে জমে যায়, যার ফলে রক্তে চিনির পরিমাণ বেড়ে যায়।

ডায়াবেটিসের সাধারণ উপসর্গসমূহ

বারবার প্রস্রাবের প্রবণতা (Polyuria):

রক্তে অতিরিক্ত চিনি জমলে কিডনি সেটি প্রস্রাবের মাধ্যমে বের করার চেষ্টা করে। ফলে বারবার প্রস্রাবের চাপ অনুভূত হয়, বিশেষ করে রাতে।

অতিরিক্ত পিপাসা (Polydipsia):

ঘন ঘন প্রস্রাবের কারণে শরীরে পানির ঘাটতি দেখা দেয়। এর ফলে অতিরিক্ত তৃষ্ণা বা সারাক্ষণ পানি খাওয়ার ইচ্ছা তৈরি হয়।

অকারণে ওজন কমে যাওয়া:

স্বাভাবিকভাবে বা বেশি খাওয়ার পরও হঠাৎ ওজন কমে যেতে পারে। কারণ শরীর যখন গ্লুকোজ ব্যবহার করতে পারে না, তখন শক্তির জন্য চর্বি ও পেশি ভাঙতে শুরু করে।

অতিরিক্ত ক্লান্তি:

কোষে পর্যাপ্ত গ্লুকোজ না পৌঁছালে শরীরে শক্তির অভাব দেখা দেয়। এর ফলে সারাক্ষণ দুর্বলতা, অলসতা ও ক্লান্তি অনুভূত হয়।

দৃষ্টিশক্তি ঝাপসা হওয়া:

রক্তে চিনি বেড়ে গেলে চোখের লেন্স ফুলে যেতে পারে, যার ফলে দৃষ্টিশক্তি ঝাপসা বা বিকৃত দেখায়। দীর্ঘমেয়াদে এটি ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি ও অন্ধত্বের কারণ হতে পারে।

ঘা বা ক্ষত সারতে দেরি হওয়া:

উচ্চ রক্তচাপ ও স্নায়ু ক্ষতির কারণে ক্ষত বা সংক্রমণ সারতে অনেক সময় লাগে।

ঘন ঘন সংক্রমণ:

ডায়াবেটিস রোগীদের ত্বকের ইনফেকশন, প্রস্রাবের সংক্রমণ ও মুখের মাড়ির ইনফেকশন বেশি হয়। কারণ, উচ্চ গ্লুকোজ ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি বাড়িয়ে দেয় এবং রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল করে।

হাত-পা অবশ বা ঝিনঝিনি অনুভব করা:

এটি ডায়াবেটিক নিউরোপ্যাথি নামে পরিচিত, যা দীর্ঘদিন উচ্চ রক্তে চিনি থাকার কারণে স্নায়ুর ক্ষতি থেকে হয়।

কখন চিকিৎসকের কাছে যাবেন

উপরের যেকোনো উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিন এবং রক্তে চিনির মাত্রা পরীক্ষা করুন। প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ শনাক্ত করলে খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত ব্যায়াম এবং ওষুধের মাধ্যমে সহজেই নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।

ডায়াবেটিস একটি দীর্ঘমেয়াদী রোগ হলেও সচেতনতা, সঠিক চিকিৎসা ও জীবনযাপনে পরিবর্তনের মাধ্যমে এটি নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। প্রাথমিক উপসর্গগুলো অবহেলা না করে দ্রুত চিকিৎসা নিলে জটিলতা এড়িয়ে সুস্থ ও সক্রিয় জীবন যাপন করা সম্ভব।


লেখকঃ

প্রফেসর ডা. আব্দুল মান্নান সরকার

কোঅর্ডিনেটর ও সিনিয়র কনসালটেন্ট

ডায়াবেটলজি এন্ড এন্ডোক্রাইনোলজি

এভারকেয়ার হসপিটাল ঢাকা।