Evercarebd
15 December 2024

ক্রিটিকাল কেয়ার ইউনিট: জীবন বাঁচানোর যুদ্ধক্ষেত্র

ক্রিটিকাল কেয়ার ইউনিট: জীবন বাঁচানোর যুদ্ধক্ষেত্র
Author

Dr. Rivu Raj Chakraborty

Author

আপনি যখন কোনো হাসপাতালে যান, তখন আপনি হয়তো বিভিন্ন বিভাগ দেখতে পান। এর মধ্যে একটি বিভাগ হল ক্রিটিকাল কেয়ার ইউনিট (আইসিইউ)। এই বিভাগটি হাসপাতালের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যেখানে গুরুতর অসুস্থ রোগীদের নিবিড় পর্যবেক্ষণ ও চিকিৎসা দেওয়া হয়।

 

ক্রিটিকাল কেয়ার ইউনিট কী?

ক্রিটিকাল কেয়ার ইউনিট হলো হাসপাতালের একটি বিশেষ বিভাগ যেখানে জীবন-মৃত্যুর সীমানায় থাকা রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হয়। এই ইউনিটে বিশেষ ধরনের যন্ত্রপাতি ও ওষুধের মাধ্যমে রোগীদের শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল করার চেষ্টা করা হয়।

 

কাদের ক্রিটিকাল কেয়ার ইউনিটে রাখা হয়?

যেসব রোগীর শারীরিক অবস্থা খুবই গুরুতর, তাদেরকে ক্রিটিকাল কেয়ার ইউনিটে রাখা হয়। এর মধ্যে রয়েছে:

  • হৃদরোগে আক্রান্ত রোগী: হার্ট অ্যাটাক, হার্ট ফেইলিউর ইত্যাদি।
  • স্ট্রোকের রোগী: মস্তিষ্কের রক্তনালী ফেটে গেলে বা বন্ধ হয়ে গেলে।
  • শ্বাসকষ্টের রোগী: ফুসফুসের সংক্রমণ, অ্যাস্থমা ইত্যাদি।
  • কিডনি ফেইলিউরের রোগী: কিডনি কাজ করা বন্ধ করে দিলে।
  • গুরুতর আঘাতের শিকার রোগী: সড়ক দুর্ঘটনা, পড়ে যাওয়া ইত্যাদি।
  • অস্ত্রোপচারের পর জটিলতায় ভোগা রোগী: বড় ধরনের অস্ত্রোপচারের পর।
  • কোমাগ্রস্ত রোগী: চেতনা হারানো রোগী।

 

ক্রিটিকাল কেয়ার ইউনিটে কী ধরনের চিকিৎসা দেওয়া হয়?

ক্রিটিকাল কেয়ার ইউনিটে রোগীদের বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসা দেওয়া হয়। এর মধ্যে রয়েছে:

  • শ্বাস সহায়তা: যন্ত্রের সাহায্যে শ্বাস দেওয়া।
  • রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ: ওষুধের মাধ্যমে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করা।
  • হৃদ্স্পন্দন নিয়ন্ত্রণ: পেসমেকার ব্যবহার করে হৃদ্স্পন্দন নিয়ন্ত্রণ করা।
  • রক্ত পরিশোধন: কিডনি ফেইলিউরের ক্ষেত্রে রক্ত পরিশোধন করা।
  • সংক্রমণ প্রতিরোধ: অ্যান্টিবায়োটিক ও অন্যান্য ওষুধের মাধ্যমে সংক্রমণ প্রতিরোধ করা।
  • পুষ্টি সরবরাহ: নাসাগাস্ট্রিক টিউব বা ভেনাস সেন্ট্রাল লাইনের মাধ্যমে পুষ্টি সরবরাহ করা।

 

ক্রিটিকাল কেয়ার ইউনিটে কাজ করা চিকিৎসক নার্সদের ভূমিকা

ক্রিটিকাল কেয়ার ইউনিটে কাজ করা চিকিৎসক ও নার্সরা অত্যন্ত দক্ষ ও প্রশিক্ষিত হয়ে থাকেন। তারা দিনরাত কাজ করে রোগীদের জীবন বাঁচানোর চেষ্টা করেন। তাদের ভূমিকা হল:

  • রোগীর অবস্থার ক্রমাগত পর্যবেক্ষণ: রোগীর শারীরিক চিহ্ন, হৃদ্স্পন্দন, রক্তচাপ ইত্যাদি ক্রমাগত পর্যবেক্ষণ করা।
  • জীবন রক্ষাকারী যন্ত্রপাতি পরিচালনা: ভেন্টিলেটর, মনিটর ইত্যাদি যন্ত্রপাতি পরিচালনা করা।
  • ওষুধ প্রয়োগ: চিকিৎসকের নির্দেশ অনুযায়ী রোগীকে ওষুধ প্রয়োগ করা।
  • রোগীর পরিবারের সাথে যোগাযোগ রাখা: রোগীর পরিবারকে রোগীর অবস্থা সম্পর্কে অবহিত করা।

 

ক্রিটিকাল কেয়ার ইউনিটে ভর্তি হওয়ার অভিজ্ঞতা কেমন হয়?

ক্রিটিকাল কেয়ার ইউনিটে ভর্তি হওয়া একজন রোগী এবং তার পরিবারের জন্য একটি কঠিন সময়। রোগীকে বিভিন্ন ধরনের যন্ত্রপাতিতে সংযুক্ত থাকতে হয় এবং নার্স ও চিকিৎসকরা তাকে ক্রমাগত পর্যবেক্ষণ করেন। পরিবারের সদস্যরাও এই সময়টিতে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়তে পারেন।

 

ক্রিটিকাল কেয়ার ইউনিটে ভর্তি হওয়ার আগে

  • আপনার সাথে আপনার ওষুধের তালিকা রাখুন।
  • আপনার রক্তের গ্রুপ জানা থাকলে তা জানান।
  • আপনার সাথে আপনার পরিচয়পত্র রাখুন।

 

ক্রিটিকাল কেয়ার ইউনিটে ভর্তি হওয়া কেন গুরুত্বপূর্ণ?

  • দ্রুত চিকিৎসা পাওয়া যায়।
  • জীবন বাঁচানো সম্ভব হয়।
  • জটিলতা এড়ানো যায়।

সর্বশেষ কথা

ক্রিটিকাল কেয়ার ইউনিট হল জীবন বাঁচানোর একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান। তাই, যদি আপনি বা আপনার পরিবারের কেউ গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন, তাহলে দেরি না করে ক্রিটিকাল কেয়ার ইউনিটে ভর্তি করান।

আপনার স্বাস্থ্যের যত্ন নিন এবং নিরাপদ থাকুন।