বাংলাদেশে গ্রীষ্মকালে অনেক সময়ই থাকে অসহনীয় গরম আবহাওয়া। গরম ও প্রচণ্ড তাপমাত্রায় নিজেকে সুস্থ রাখতে প্রয়োজন বিশেষ যত্ন। গ্রীষ্মকালে প্রচণ্ড গরমে মানুষ অস্থির থাকে। কিন্তু সবাই চায় সুস্থভাবে এই ঋতুকে উপভোগ করতে। গরমের কারনে কিছু শারীরিক সমস্যা, যেমন- মাথা ব্যথা, ঠান্ডা -কাশি, জ্বর, হিটস্ট্রোক, এলার্জি, কোস্টকাঠিন্য, পানিশূন্যতা দেখা দেয়। আবার কলেরা, জন্ডিস, ডায়রিয়া, ফুড পয়জনিংয়ের মতো রোগের মাত্রাও বেড়ে যায়। তাই সুষম ও সঠিক খাদ্যাভ্যাস এই সময়ে অনেক জরুরী। গ্রীষ্মকালে নিজেকে সুস্থ রাখতে যেসব বিষয়গুলো মেনে চলতে হবে তা হলো;
নিজেকে হাইড্রেটেড রাখুন:
গ্রীষ্মে পানিশূন্যতা খুব ঘন ঘন হতে দেখা যায়। অতিরিক্ত তাপে শরীর ঘেমে এই পানিশূন্যতা দেখা যায়। পানিশূন্যতা হলে শরীরে অনেক ক্ষতি হতে পারে। তাই গ্রীষ্মে তরল খাবারের পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে হয়। সব তরলের মধ্যে পানি হচ্ছে শ্রেষ্ঠ। এই সময় ২-৩ লিটার বিশুদ্ধ পানি দৈনিক কমপক্ষে পান করা উচিত। তরলের মধ্যে কফি, চা, কোল্ড ড্রিংকস অবশ্যই এড়িয়ে যাওয়া উচিত। প্রচণ্ড গরমে খুব ঠাণ্ডা পানি কোনভাবেই খাওয়া উচিত নয়। প্রচণ্ড গরম থেকে ঘরে ফিরে একটু বিশ্রাম নিয়ে পানি পান করলে শরীরের জন্য ভালো। ডাবের পানি, লেবু – কাঁচা আম – বেলের শরবত, বাড়িতে তৈরি মাঠা – লাচ্ছি ইত্যাদি স্বাস্থ্যকর পানীয়। এসব পানীয় শরীরে তরলের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি রক্তে ইলেক্ট্রোলাইটসের ঘাটতিপূরণে সাহায্য করে।
গ্রীষ্মকালীন ফল ও সবজি খান;
তরমুজ, বাঙ্গি, লিচু, কাঠাল, আম, জাম, তাল, তালের শ্বাস ইত্যাদি গ্রীষ্মকালীন ফল, যা পুষ্টি উপাদান সরবরাহ ও শরীরকে সতেজ রাখবে। আনারসও এই সময় অনেক পাওয়া যায়, যার থেকে ভিটামিন সি, কপার ও পটাশিয়াম পাওয়া যায়। এই পুষ্টি উপাদান একত্রে কাজ করে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। কাঁচা আমের জুস শরীর থেকে বের হয়ে যাওয়া সোডিয়ামের ঘাটতি পূরণে সাহায্য করে। পাকা আমে থাকে ভিটামিন এ এবং সি। পাকা আমের ক্যারোটিন ত্বক মসৃণ রাখতে সাহায্য করে। লিচুতে রয়েছে পটাশিয়াম ও অক্সালেট। জাম অনেক এন্টি অক্সিডেণ্ট পাওয়া যায়, যা ত্বক ভালো রাখে ও শরীরের নানা উপকারে আসে।
অন্যদিকে গ্রীষ্মকালীন সবজির মধ্যে বেগুন, ঢেঁড়স, মিষ্টিকুমড়া, কাকরোল, করলা, পটল, শসা, ধুন্দল, কলমি শাক ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। সহজে হজমযোগ্য এসব সবজি শরীরে পুষ্টি উপাদান ছাড়াও পানির চাহিদা মেটাতে সাহায্য করে। শশাতে ৯০ শতাংশই পানি। গরমে ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে শসার জুড়ি নেই। জ্বর ও ঠাণ্ডা কাশি নিরাময়ে পটল ঔষধের মত কাজ করে। এছাড়া, ঝিঙ্গা শরীরে পানির মাত্রা বজায় রাখতে সাহায্য করবে। যাদের গ্যাস বা অ্যাসিডিটির সমস্যা রয়েছে, তাদের জন্য গ্রীষ্মকালীন সবজি খুবই উপকারি।
গ্রীষ্মকালে সঠিক প্রোটিনযুক্ত খাবার খান;
মাছ, ছোট মুরগীর মাংস, টক দই, ডিম ইত্যাদি গ্রীষ্মকালে অতি প্রয়োজনীয় প্রোটিন সরবরাহ করে। এগুলো অল্প তেল মশলার মাধ্যমে রান্না করলে অনেক সহজে হজম হয়। অনেকেই গরমের মধ্যে দুধ খেতে পছন্দ করেন না, তবে লো ফ্যাট ঠান্ডা দুধ, দই, লাচ্ছি ও মাঠা গরমে বেশ উপকারী।
গ্রীষ্মকালে যা যা এড়িয়ে চলবেন:
গ্রীষ্মকালে অতিরিক্ত মশলা ও তেল অবশ্যই এড়িয়ে যেতে হবে। ভাজা পোড়া খাবার গ্রীষ্মকালে না খাওয়াই শ্রেয়। এছাড়া গরু-খাসির ভুঁড়ি, কলিজা, পায়া ইত্যাদি এড়িয়ে চলা উচিত। গ্রীষ্মে এগুলো হজমে অসুবিধা দেখা দেয়। রুটি, তন্দুর রুটি, বাটার বান, ব্রেড ইত্যাদি গ্রীষ্মকালে এড়িয়ে চলা উচিত। ধূমপান ও অ্যালকোহল এসময়ে এড়িয়ে চলা উচিত। শুষ্ক ফল এই সময় না খাওয়া উত্তম।
আরাম নিশ্চিতে যা করবেন:
এই সময় সঠিক খাওয়া দাওয়ার পাশাপাশি শরীরের অনেক যত্ন নিতে হয়। ঢিলেঢালা সুতির কাপড় এসময়ে উপযোগী পোশাক। প্রতিদিন গোসল করলে শরীরের জন্যে অনেক ভালো হয়। সানগ্লাস পরে রোদে বের হলে চোখের ক্ষতি হয়না। ত্বকের সুরক্ষার জন্যে সান্সক্রিন অবশ্যই ব্যবহার করতে হবে। মুখ ফেসওয়াশ দিয়ে দিনে দুইবার কমপক্ষে পরিষ্কার করতে হবে।
গ্রীষ্মের বৈচিত্র্য উপভোগ করার পাশাপাশি সুস্থ থাকতে তাই সবাইকে সচেতন হতে হবে।
লেখকঃ
প্রিন্সিপাল ডায়েটিশিয়ান