কবজির রোগ, কার্পাল টানেল সিনড্রোম

দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করলে হাতে চাপ পড়ে কবজিতে দেখা দিতে পারে প্রদাহ। এর নাম কার্পাল টানেল সিনড্রোম।

রান্না থেকে কম্পিউটারের কাজ—হাতের সঠিক কার্যকারিতা ছাড়া কোনো কাজই সহজে করা যায় না। যেসব কাজে প্রতিনিয়ত কবজিতে বাড়তি চাপ পড়ে, সেগুলো থেকে দেখা দিতে পারে কার্পাল টানেল সিনড্রোম। এতে হাতে ব্যথা, ঝিঝি, অবশভাব বা শক্তি হারিয়ে যাওয়ার মতো উপসর্গ দেখা দেয়। কবজির প্রদাহজনিত এই রোগ যেকোনো বয়সেই দেখা দিতে পারে।

কেন হয়

কবজির অভ্যন্তরে একটি সরু সুড়ঙ্গের নাম কার্পাল টানেল। এর ভেতর দিয়ে হাতের অন্যান্য অংশে মিডিয়ান নার্ভ নামের এক স্নায়ু ও কিছু টেনডন প্রবেশ করে। কবজির অত্যধিক ব্যবহারে এই সুড়ঙ্গের মধ্যকার নার্ভটিতে চাপ পড়ে এবং শুরু হয় অবশভাব, যন্ত্রণাদায়ক অনুভূতি ও মাঝে মাঝে আঙুলের দুর্বলতা। একেই চিকিৎসাবিজ্ঞানে বলা হয় কার্পাল টানেল সিনড্রোম (সিটিএস)।

উপসর্গ

এই রোগের উপসর্গগুলো প্রাথমিক অবস্থায় খুব সূক্ষ্ম হতে পারে। মধ্যমা, তর্জনী ও বুড়ো আঙুলে অবশভাব, ঝিনঝিনে অনুভূতি দেখা দিয়ে থাকে, বিশেষ করে রাতে হালকা ব্যথা অনুভব করে কেউ কেউ। অনেক রোগীর ক্ষেত্রে ঘুম ভাঙার পর কিছু সময় হাত ব্যথা করে, অবশ হয়ে থাকে। অবস্থার অবনতি হলে ছোটখাটো জিনিস ধরাও কষ্টকর হয়। এমনকি হাত থেকে কোনো কিছু পড়েও যেতে পারে। মধ্যম পর্যায়ে ব্যথা দিনে-রাতে থাকে, কোনো কিছু ধরা কঠিন হয়। জটিল পর্যায়ে রোগীর হাতের পেশি শুকিয়ে যেতে পারে, আঙুলে দেখা দিতে পারে স্থায়ী অসাড়তা।

 

কারণ

বেশ কিছু কারণে হতে পারে রোগটি। যেমন—

♦ দীর্ঘক্ষণ এক ধরনের হাতের কাজ, যেমন—স্মার্টফোন ধরে থাকা, দীর্ঘ সময় টাইপ বা সেলাই করা

♦ বাতজনিত বা ডায়াবেটিস

♦ প্রেগন্যান্সির সময় হরমোনজনিত কবজি ফুলে যাওয়া

♦ কবজিতে আঘাত বা হাড়ের গঠনগত ত্রুটি ইত্যাদি।

 

ঝুঁকি

দীর্ঘ সময় কম্পিউটারে কাজ করে যারা, যেমন—ডেটা এন্ট্রি অপারেটর, কম্পিউটার প্রোগ্রামার, গ্রাফিক ডিজাইনাররা এই রোগের ঝুঁকিতে থাকেন। এ ছাড়াও দর্জি, কাঠমিস্ত্রি, দোকানের ক্যাশিয়ার বা যারা বারবার বারকোড স্ক্যানার ব্যবহার করেন, গৃহিণীরা যারা রান্নার কাজ দীর্ঘ সময় করেন তারাও আছেন ঝুঁকিতে।

 

চিকিৎসা

যদি দুই সপ্তাহ বা তার বেশি সময় ধরে হাত অবশ লাগে, ব্যথায় রাতে ঘুম ভেঙে যায় বা হাতের জোর কমে যেতে থাকে, শুকিয়ে যাওয়া ইত্যাদি দেখা দিলে অবশ্যই একজন ফিজিক্যাল মেডিসিন, অর্থোপেডিক সার্জন বা নিউরোলোজিস্টের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।

প্রথম অবস্থায় বিশ্রাম, কবজির ব্রেস বা স্প্লিন্ট ব্যবহার, ব্যথার ওষুধ, শুরুতে আইস ও পরে হট থেরাপি, লোকাল ইনজেকশন, ব্যায়াম, ফিজিওথেরাপি ইত্যাদির মাধ্যমে বেশ উপকার পাওয়া যায়। তবে গুরুতর ক্ষেত্রে কার্পাল টানেল রিলিজ সার্জারি নামক একটি ছোট অপারেশনের মাধ্যমে নার্ভের ওপর চাপ কমিয়ে রোগীর চিকিৎসা করা হয়।

 

প্রতিরোধ

সচেতনতা ও কিছু সহজ অভ্যাস এই রোগ প্রতিরোধে সহায়ক। যেমন—

♦ কাজের মাঝে বিরতি নিন।

♦ কি-বোর্ড ব্যবহারে কবজির নিচে সাপোর্ট রাখুন। আর্গোনমিক কি-বোর্ড ব্যবহার করুন।

♦ কবজি ও হাতের ব্যায়াম করুন।

♦ ভারী কাজ করার সময় হাতে প্রোটেকশন ব্যবহার করুন।

 

কিছু সহজ ব্যায়াম

♦ কবজি ওপর-নিচে বাঁকানোর অভ্যাস করুন।

♦ আঙুল ছড়িয়ে আবার মুঠো করুন।

♦ হাত শিথিল করে বৃত্তাকারে ঘোরান।

দিনে দুই-তিনবার কয়েক মিনিট এ ব্যায়ামগুলো করলেই যথেষ্ট।

 

 

লেখক:

 ডা. মোহাম্মদ মহিউদ্দিন আরাফ

 সিনিয়র কনসালট্যান্ট কোঅর্ডিনেটর

ফিজিক্যাল মেডিসিন রিহ্যাবিলিটেশন ডিপার্টমেন্ট

এভারকেয়ার হসপিটাল ঢাকা