বাংলাদেশে থাইরয়েড সমস্যা শুধু চিকিৎসা নয়, প্রয়োজন সচেতনতা

বাংলাদেশে থাইরয়েড হরমোনজনিত সমস্যার প্রকোপ আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায় জানা গেছে, দেশে প্রায় ৫ কোটির মতো মানুষ কোনো না কোনোভাবে থাইরয়েডজনিত সমস্যায় ভুগছেন। অথচ এই রোগটি অনেক সময় অদৃশ্য শত্রুর মতো কাজ করে, কারণ বেশিরভাগ মানুষ জানেই না তারা এ রোগে আক্রান্ত।

থাইরয়েড হলো গলার সামনে অবস্থিত একটি প্রজাপতি-আকৃতির গ্রন্থি, যা শরীরের বিপাক প্রক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করে। এই গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত হরমোন শুধু পরিপাক নয়, বরং শারীরিক এবং মানসিক বৃদ্ধির জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

থাইরয়েড হরমোনের ঘাটতির কারণে (হাইপোথাইরয়েডিজম) শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে, ওজন বেড়ে যায়, কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দেয় এবং নারীদের ক্ষেত্রে অনিয়মিত মাসিক চক্র দেখা দিতে পারে। অন্যদিকে অতিরিক্ত হরমোন (হাইপারথাইরয়েডিজম) শরীরকে অতিরিক্ত উত্তেজিত করে তোলে, ওজন হ্রাস পায়, ঘাম বেশি হয় এবং হাত কাঁপতে পারে।

নারীরা পুরুষদের তুলনায় ৪-৫ গুণ বেশি থাইরয়েড সমস্যায় আক্রান্ত হন। বিশেষ করে গর্ভাবস্থায় থাইরয়েড হরমোনের ভারসাম্য রক্ষা না করা হলে নবজাতকের মানসিক ও শারীরিক বিকাশে মারাত্মক প্রভাব পড়ে। তাই গর্ভাবস্থায় থাইরয়েড পরীক্ষা অত্যন্ত জরুরি।

নবজাতকদের ক্ষেত্রেও জন্মের সাত দিনের মধ্যে থাইরয়েড স্ক্রিনিং করা হলে ভবিষ্যৎ প্রতিবন্ধকতা থেকে অনেক শিশুকে রক্ষা করা সম্ভব। অথচ এই পরীক্ষাটি দেশে এখনো বাধ্যতামূলক করা হয়নি, যা একটি বড় চ্যালেঞ্জ।

আয়োডিনের অভাব থাইরয়েড সমস্যার একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ। বাংলাদেশে আয়োডিনযুক্ত লবণ ব্যবহার বাধ্যতামূলক করার ফলে এই সমস্যা অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছে। আয়োডিনের ঘাটতির কারণে ‘গলাফুলা’ বা ঘ্যাগ রোগ দেখা দেয়, যা সময়মতো নিয়ন্ত্রণে না আনলে বড় ধরনের স্বাস্থ্য জটিলতা তৈরি করতে পারে।

থাইরয়েড স্বাস্থ্য রক্ষায় শুধু আয়োডিন নয়, খাদ্যে পর্যাপ্ত সেলেনিয়াম ও আয়রণ নিশ্চিত করাও জরুরি। তাই সুষম খাদ্যাভ্যাসের মাধ্যমে এ সমস্যা অনেকাংশে প্রতিরোধ করা সম্ভব।

চিকিৎসার দিক থেকে ইতিবাচক অগ্রগতি হলো, সরকার বর্তমানে দেশের বিভিন্ন মেডিকেল কলেজে এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগ চালু করেছে। বর্তমানে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে প্রায় ৩০০ জন হরমোন বিশেষজ্ঞ কাজ করছেন। কিন্তু জনসংখ্যার অনুপাতে এই সংখ্যাটি এখনও খুবই অপ্রতুল।

থাইরয়েড সমস্যা সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করাই হচ্ছে প্রধান করণীয়। সঠিক সময়ে পরীক্ষা ও চিকিৎসা গ্রহণ করলে থাইরয়েডজনিত রোগ থেকে সুস্থ থাকা সম্ভব।

 

লেখক:

ডা: আহসানুল হক আমিন

সিনিয়র কনসালটেন্ট

এন্ডোক্রাইনোলজি এন্ড ডায়াবেটলজি ডিপার্টমেন্ট

এভারকেয়ার হসপিটাল ঢাকা।