পাকস্থলীর ক্যানসার প্রতিরোধ: সচেতনতা ও করণীয়

পাকস্থলীর ক্যানসার (স্টমাক ক্যানসার) হল পাকস্থলীতে হওয়া একটি মারাত্মক রোগ, যা সময়মতো শনাক্ত না হলে প্রাণঘাতী হতে পারে। তবে কিছু প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করলে এই ক্যানসারের ঝুঁকি কমানো সম্ভব।

পাকস্থলীর ক্যানসারের কারণ

পাকস্থলীর ক্যানসারের মূল কারণ এখনো পুরোপুরি জানা যায়নি, তবে কিছু নির্দিষ্ট কারণ এটির ঝুঁকি বাড়াতে পারে—

  • হেলিকোব্যাক্টর পাইলোরি (H. pylori) সংক্রমণ
  • অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস (ধূমায়িত, অতিরিক্ত লবণাক্ত ও প্রক্রিয়াজাত খাবার)
  • ধূমপান মদ্যপান
  • পারিবারিক ইতিহাস (বংশগত কারণে ক্যানসারের ঝুঁকি বেশি)
  • স্থূলতা অনিয়মিত জীবনযাপন

ক্যানসার প্রতিরোধে করণীয়

পাকস্থলীর ক্যানসার প্রতিরোধের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ জীবনধারা পরিবর্তন ও সচেতনতা জরুরি—

  1. সুষম স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ:
    • প্রচুর শাকসবজি ও ফলমূল খান, যা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ এবং ক্যানসার প্রতিরোধে সাহায্য করে।
    • অতিরিক্ত লবণ ও প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে চলুন।
    • গ্রিল বা ভাজা খাবারের পরিবর্তে সিদ্ধ বা সেদ্ধ খাবার খান।
  2. হেলিকোব্যাক্টর পাইলোরি সংক্রমণ রোধ:
    • এই ব্যাকটেরিয়া দীর্ঘদিন পেটে থাকলে ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ে। তাই সংক্রমণ হলে দ্রুত চিকিৎসা নিন।
  3. ধূমপান মদ্যপান পরিহার করুন:
    • ধূমপান ও অ্যালকোহল পাকস্থলীর ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়, তাই এগুলো পরিহার করা উচিত।
  4. ওজন নিয়ন্ত্রণ শারীরিক কার্যক্রম:
    • অতিরিক্ত ওজন পেটের ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে, তাই নিয়মিত ব্যায়াম করুন।
  5. নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা:
    • যাদের পারিবারিক ইতিহাস আছে বা দীর্ঘদিন গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা রয়েছে, তাদের নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

সুস্থ জীবনধারা ও সচেতনতা পেটের ক্যানসার প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। সঠিক খাদ্যাভ্যাস, ধূমপান-মদ্যপান পরিহার এবং নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করলে এই মরণব্যাধি থেকে দূরে থাকা সম্ভব। তাই সুস্থ থাকতে সচেতন হোন এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করুন।

 

লেখকঃ

ডা. আরমান রেজা চৌধুরী

সিনিয়র কনসালটেন্ট

রেডিয়েশন অনকোলজি

এভারকেয়ার হসপিটাল ঢাকা

ক্যান্সার কেন হয়?

ক্যান্সার হল শরীরের কোষগুলোর অনিয়ন্ত্রিত বৃদ্ধির ফল। সাধারণত কোষগুলো নিয়ন্ত্রিতভাবে বিভাজিত হয়, তবে যখন এই প্রক্রিয়াটি ব্যাহত হয়, তখন অস্বাভাবিক কোষ বেড়ে ওঠে এবং টিউমার গঠন করে। কিছু ক্ষেত্রে, এই কোষগুলো শরীরের অন্যান্য অংশেও ছড়িয়ে পড়তে পারে, যা ম্যালিগন্যান্ট ক্যান্সার নামে পরিচিত।

প্রথমত, জিনগত পরিবর্তন বা মিউটেশন ক্যান্সারের একটি প্রধান কারণ। কিছু ক্ষেত্রে জন্মগতভাবেই জিনগত সমস্যা থাকতে পারে, আবার পরিবেশগত কারণেও মিউটেশন ঘটতে পারে।

দ্বিতীয়ত, অস্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা ক্যান্সারের অন্যতম কারণ। ধূমপান, মদ্যপান, প্রক্রিয়াজাত খাবার গ্রহণ, অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস এবং শরীরচর্চার অভাব ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।

তৃতীয়ত, পরিবেশগত কারণ যেমন দূষিত বায়ু, রাসায়নিক পদার্থ, অতিবেগুনি রশ্মি (UV Ray) এবং তেজস্ক্রিয় বিকিরণ ক্যান্সার সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

চতুর্থত, ভাইরাস সংক্রমণ কিছু নির্দিষ্ট ভাইরাস ক্যান্সারের জন্য দায়ী হতে পারে, যেমন হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস (HPV) এবং হেপাটাইটিস বি ও সি ভাইরাস।

পঞ্চমত, মানসিক চাপ অনিদ্রা দীর্ঘমেয়াদী মানসিক চাপ ও ঘুমের অভাব শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল করে এবং ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।

অতএব, সঠিক জীবনযাত্রা অনুসরণ, স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস এবং নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করালে ক্যান্সার প্রতিরোধ করা সম্ভব।

 

লেখকঃ

ডা. বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য্য

সিনিয়র কনসালটেন্ট ও কোঅর্ডিনেটর

রেডিয়েশন অনকোলজি

এভারকেয়ার হসপিটাল ঢাকা

ক্যান্সার প্রতিরোধের উপায়

ক্যান্সার বর্তমানে বিশ্বের অন্যতম মারাত্মক রোগ। তবে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করে এই রোগের ঝুঁকি অনেকাংশে কমানো সম্ভব। জীবনযাত্রার পরিবর্তন ও স্বাস্থ্যকর অভ্যাস গ্রহণ করলেই ক্যান্সার প্রতিরোধ করা যেতে পারে।

প্রথমত, স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলা জরুরি। প্রতিদিন প্রচুর শাকসবজি, ফলমূল, আঁশযুক্ত খাবার, এবং কম চর্বিযুক্ত প্রোটিন গ্রহণ করতে হবে। প্রক্রিয়াজাত খাবার ও অতিরিক্ত লাল মাংস খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত। পাশাপাশি পর্যাপ্ত পানি পান করাও গুরুত্বপূর্ণ।

দ্বিতীয়ত, ধূমপান অ্যালকোহল পরিহার করা ক্যান্সার প্রতিরোধের অন্যতম কার্যকর উপায়। তামাকজাত পণ্য ফুসফুস, মুখগহ্বর ও গলার ক্যান্সারের প্রধান কারণ। একইভাবে অতিরিক্ত মদ্যপান লিভার ও স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।

তৃতীয়ত, নিয়মিত ব্যায়াম সুস্থ জীবনের চাবিকাঠি। দৈনিক অন্তত ৩০ মিনিট শরীরচর্চা করলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে, যা ক্যান্সারের ঝুঁকি হ্রাস করে।

চতুর্থত, সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি থেকে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা জরুরি। বেশি সময় রোদে থাকলে ত্বকের ক্যান্সারের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। তাই বাইরে বের হলে সানস্ক্রিন ব্যবহার করা ও সুরক্ষামূলক পোশাক পরা উচিত।

অবশেষে, নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো দরকার। প্রাথমিক পর্যায়ে ক্যান্সার শনাক্ত হলে এটি সহজেই নিরাময়যোগ্য হতে পারে। তাই নির্দিষ্ট সময় পরপর চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

সুস্থ জীবনযাত্রা অনুসরণ করলে ক্যান্সারের ঝুঁকি কমানো সম্ভব এবং দীর্ঘস্থায়ী সুস্থতা নিশ্চিত করা যায়।

 

লেখকঃ

ডা. বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য্য

সিনিয়র কনসালটেন্ট ও কোঅর্ডিনেটর

রেডিয়েশন অনকোলজি

এভারকেয়ার হসপিটাল ঢাকা

কিডনি স্টোন (Kidney Stones): কারণ, লক্ষণ ও প্রতিকার

কিডনি স্টোন হলো কঠিন খনিজ ও লবণের সঞ্চয়, যা কিডনিতে গঠিত হয়। এটি মূত্রনালীতে আটকে গিয়ে তীব্র ব্যথার কারণ হতে পারে।

কিডনি স্টোনের কারণ

কিডনি স্টোন সাধারণত বিভিন্ন কারণে হতে পারে, যেমন:

  • পর্যাপ্ত পানি না পান করা
  • অতিরিক্ত সোডিয়াম, ক্যালসিয়াম ও অক্সালেট সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ
  • প্রস্রাবে ইনফেকশন
  • পারিবারিক ইতিহাস বা জিনগত কারণ
  • ইউরিক অ্যাসিডের অতিরিক্ত বৃদ্ধি, ইত্যাদি

কিডনি স্টোনের লক্ষণ

  • তলপেট ও পিঠে ব্যথা
  • প্রস্রাবে রক্ত দেখা যাওয়া
  • প্রস্রাবের সময় ব্যথা বা জ্বালাপোড়া
  • বমি বমি ভাব ও বমি হওয়া
  • ঘন ঘন প্রস্রাবের অনুভূতি

কিডনি স্টোন প্রতিরোধ চিকিৎসা

প্রতিরোধের উপায়:

  • প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা
  • ক্যালসিয়াম ও অক্সালেট সমৃদ্ধ খাবার পরিমিত মাত্রায় গ্রহণ করা
  • প্রস্রাব চেপে না রাখা ও নিয়মিত মূত্রত্যাগ করা
  • অতিরিক্ত লবণ ও প্রক্রিয়াজাত খাবার পরিহার করা এবং শাকসবজি, ফলমূল পর্যাপ্ত খাওয়া
  • নিয়মিত ব্যায়াম করা

চিকিৎসা:

কিডনি স্টোনের আকার, অবস্থান এবং কতটুকু শক্ত তার উপর নির্ভর করে চিকিৎসা পদ্ধতি নির্ধারিত হয়। ছোট পাথর প্রাকৃতিকভাবে প্রস্রাবের মাধ্যমে বের হয়ে যেতে পারে, তবে বড় পাথরের ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ, লিথোট্রিপসি (শক ওয়েভ থেরাপি), বা অস্ত্রোপচার প্রয়োজন হতে পারে।

যদি কিডনি স্টোনের উপসর্গ দেখা দেয়, তবে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি, কারণ অবহেলা করলে এটি কিডনির গুরুতর সমস্যার কারণ হতে পারে।

 

লেখক:

অধ্যাপক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল ডা. এসএম শামীম ওয়াহিদ

সিনিয়র কনসালটেন্ট

ইউরোলজি বিভাগ

এভারকেয়ার হসপিটাল ঢাকা।

পলিসিস্টিক কিডনি ডিজিজ (PKD): একটি জিনগত কিডনি রোগ

পলিসিস্টিক কিডনি ডিজিজ (PKD) হলো একটি জিনগত কিডনি রোগ, যেখানে কিডনিতে অনেকগুলো সিস্ট (ফোসকার মত) তৈরি হয়। সময়ের সঙ্গে এগুলো বড় হতে থাকে এবং কিডনির স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা কমিয়ে দেয়। এই রোগ ক্রনিক কিডনি ডিজিজ (CKD) এবং কিডনি ফেইলিওরের অন্যতম প্রধান কারণ হতে পারে।

PKD-এর কারণ

PKD সাধারণত জেনেটিক (বংশগত) কারণে হয়ে থাকে। এটি দুই ধরনের হতে পারে:
অটোসোমাল ডমিনেন্ট PKD (ADPKD) – এটি সবচেয়ে সাধারণ এবং প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে বেশি দেখা যায়।
অটোসোমাল রিসেসিভ PKD (ARPKD) – এটি শিশুদের মধ্যে বিরল হলেও মারাত্মক হতে পারে।

প্রধান লক্ষণ

  • কোন লক্ষণ নাও থাকতে পারে
  • উচ্চ রক্তচাপ – বিশেষ করে অল্প বয়সে উচ্চ রক্তচাপ
  • পেট ও পাশের অংশে ব্যথা বা ভারী অনুভব করা
  • প্রস্রাবে রক্ত আসা
  • বারবার ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন (UTI) / প্রস্রাবে ইনফেকশন হ‌ওয়া

প্রতিরোধ চিকিৎসা

  • Early সনাক্ত করা গেলে ওষুধের মাধ্যমে চিকিৎসা করা
  • রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা – উচ্চ রক্তচাপ কিডনির ক্ষতি বাড়ায়।
  • পর্যাপ্ত পানি পান করা – কিডনির কার্যকারিতা ঠিক রাখতে সাহায্য করে।
  • সুস্থ খাদ্যাভ্যাস – লবণ, প্রোটিন ও চর্বি কমিয়ে স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া দরকার।
  • ধূমপান অ্যালকোহল পরিহার – এগুলো কিডনির ক্ষতির ঝুঁকি বাড়ায়।
  • নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া – কিডনির কার্যকারিতা পর্যবেক্ষণ করা জরুরি।
  • PKD এর জন্য কিডনি ফেইল করলে কিডনি প্রতিস্থাপন হবে সর্বোত্তম চিকিৎসা।

PKD-এর কোনো নির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই, তবে সঠিক জীবনযাপন চিকিৎসার মাধ্যমে এর জটিলতা কমানো সম্ভবপ্রাথমিক অবস্থায় শনাক্ত করা গেলে কিডনি ফেইলিওর প্রতিরোধ করা যায়।

পরিবারে বা বংশের অন্যান্যদের পরীক্ষা করিয়ে নেয়া প্রয়োজন PKD তাদের ও আছে কিনা।

 

লেখকঃ

ডা. তাবাসসুম সামাদ

কনসালটেন্ট

নেফ্রোলজি (কিডনি) বিভাগ

এভারকেয়ার হসপিটাল ঢাকা।

তামাক ও অ্যালকোহল: ক্যান্সারের অন্যতম প্রধান কারণ

তামাক ও অ্যালকোহল ক্যান্সারের প্রধান কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম। বিশ্বব্যাপী ক্যান্সারের একটি বড় অংশের জন্য তামাক এবং অ্যালকোহল দায়ী। এগুলি ক্যান্সার সৃষ্টির জন্য সরাসরি ও পরোক্ষভাবে কাজ করে, এবং এই অভ্যাসগুলি দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকলে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে।

তামাক – তামাক সেবন, বিশেষ করে সিগারেট ধূমপান, ক্যান্সারের অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে পরিচিত। তামাকে প্রচুর ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদান থাকে, যা শরীরের কোষগুলির ডিএনএ-তে পরিবর্তন ঘটায়। এসব মিউটেশন ক্যান্সারের সৃষ্টি করতে পারে। সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত হয় ফুসফুস, মুখগহ্বর, গলা, কণ্ঠনালী এবং প্যানক্রিয়াসের কোষ। তামাকের ধোঁয়া সরাসরি শ্বাসনালী এবং ফুসফুসে প্রবাহিত হয়, ফলে ফুসফুস ক্যান্সারসহ অন্যান্য ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ে।

অ্যালকোহল – অ্যালকোহলও ক্যান্সারের একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হিসেবে কাজ করে। অ্যালকোহল সেবন বিশেষ করে দীর্ঘকাল ধরে বেশি পরিমাণে করা হলে, এটি শরীরের কোষগুলির মধ্যে অস্বাভাবিক পরিবর্তন ঘটায়, যা ক্যান্সারের সূচনা করতে পারে। অ্যালকোহল লিভার, মস্তিষ্ক, গলা, ফুসফুস, স্তন এবং পাকস্থলীর ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়। একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে যে, মদ্যপান এবং তামাক সেবন একত্রে ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেক বাড়িয়ে দেয়।

তামাক এবং অ্যালকোহল দুটোই শরীরের প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে দুর্বল করে এবং ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। তাই, এগুলি পরিহার করা ক্যান্সার প্রতিরোধে একটি অত্যন্ত কার্যকরী উপায়। সচেতনতা বৃদ্ধি, শিক্ষা এবং সরকারি উদ্যোগের মাধ্যমে তামাক ও অ্যালকোহলের ব্যবহার কমানো সম্ভব, এবং এর ফলে ক্যান্সারের ঝুঁকি কমানো যেতে পারে।

অতএব, তামাক এবং অ্যালকোহল পরিহারের মাধ্যমে ক্যান্সারসহ অনেক ধরনের মারাত্মক রোগের ঝুঁকি কমানো সম্ভব। ক্যান্সার প্রতিরোধে আমাদের সচেতনতা এবং জীবনযাত্রার সঠিক পরিবর্তন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

 

লেখকঃ

ডা. বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য্য

সিনিয়র কনসালটেন্ট ও কোঅর্ডিনেটর

রেডিয়েশন অনকোলজি

এভারকেয়ার হসপিটাল ঢাকা।

হেড-নেক ক্যানসার: কারণ, লক্ষণ ও প্রতিকার

হেড-নেক ক্যানসার হল মাথা ও গলার বিভিন্ন অংশে হওয়া এক ধরনের মারাত্মক ক্যানসার। সাধারণত মুখগহ্বর, গলা, কণ্ঠনালী, নাক ও থাইরয়েড গ্রন্থিতে এই ক্যানসার দেখা যায়। বিশ্বব্যাপী ক্যানসারজনিত মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ এটি।

ক্যানসারের কারণ:

হেড-নেক ক্যানসারের প্রধান কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে—

  • তামাকজাত দ্রব্য (ধূমপান ও পান-জর্দা খাওয়া)
  • অতিরিক্ত মদ্যপান
  • হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস (HPV) সংক্রমণ
  • অতিরিক্ত সূর্যালোকের সংস্পর্শে আসা (বিশেষ করে ঠোঁটের ক্যানসারের ক্ষেত্রে)
  • দীর্ঘস্থায়ী সংক্রমণ ও অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস

লক্ষণসমূহ:

হেড-নেক ক্যানসারের লক্ষণ প্রাথমিক পর্যায়ে বোঝা কঠিন। তবে কিছু সাধারণ লক্ষণ হলো—

  • দীর্ঘদিন ধরে গলার ব্যথা
  • গিলতে কষ্ট হওয়া
  • মুখে বা গলায় কোনো ক্ষত বা ফোলাভাব
  • কণ্ঠস্বরে পরিবর্তন বা স্বরভঙ্গ
  • একপাশের কান বা মাথায় ব্যথা
  • অকারণে ওজন কমে যাওয়া

চিকিৎসা প্রতিকার:

প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত করা গেলে হেড-নেক ক্যানসারের চিকিৎসা তুলনামূলকভাবে সহজ। চিকিৎসার মধ্যে রেডিওথেরাপি, কেমোথেরাপি এবং অস্ত্রোপচার প্রধান। তবে সচেতনতা ও প্রতিরোধই এই ক্যানসার থেকে বাঁচার মূল উপায়। ধূমপান ও মদ্যপান ত্যাগ করা, সঠিক খাদ্যাভ্যাস গঠন করা এবং নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো জরুরি।

হেড-নেক ক্যানসার জীবনঘাতী হলেও সচেতনতা ও প্রাথমিক পর্যায়ে চিকিৎসা গ্রহণের মাধ্যমে এটি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। তাই উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

 

লেখকঃ

ডা. আরমান রেজা চৌধুরী

সিনিয়র কনসালটেন্ট

রেডিয়েশন অনকোলজি

এভারকেয়ার হসপিটাল ঢাকা

মূত্রনালী সংক্রমণ (UTI): কারণ, লক্ষণ ও প্রতিকার

মূত্রনালী সংক্রমণ (Urinary Tract Infection বা UTI) হলো এক ধরনের সংক্রমণ যা প্রধানত ব্যাকটেরিয়ার কারণে ঘটে। এটি মূত্রথলি, মূত্রনালী বা কিডনিতে সংক্রমণ ঘটাতে পারে।

মূত্রনালী সংক্রমণ এর কারণ

UTI সাধারণত ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সৃষ্ট হয়, বিশেষত Escherichia coli (E. coli) ব্যাকটেরিয়ার কারণে। সংক্রমণের অন্যান্য কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে:

  • অপর্যাপ্ত পানি পান করা
  • ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতার অভাব
  • দীর্ঘ সময় ধরে প্রস্রাব চেপে রাখা
  • ডায়াবেটিস বা অন্য কোন কারণে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া
  • গর্ভাবস্থা ও মেনোপজের ফলে হরমোনের পরিবর্তন
  • অস্বাস্থ্যকর যৌন মিলন

মূত্রনালী সংক্রমণ এর লক্ষণ

  • ঘন ঘন প্রস্রাবের চাপ অনুভব করা
  • প্রস্রাবের সময় জ্বালাপোড়া
  • প্রস্রাবের গন্ধ পরিবর্তন বা মেঘাচ্ছন্ন হওয়া
  • তলপেটে ব্যথা বা অস্বস্তি
  • জ্বর ও কাঁপুনি (সংক্রমণ গুরুতর হলে)

মূত্রনালী সংক্রমণ এর প্রতিরোধ চিকিৎসা

প্রতিরোধের উপায়:

  • প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা
  • প্রস্রাব চেপে না রাখা
  • শারীরিক পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা
  • সংক্রমণের ঝুঁকি কমাতে যৌন সম্পর্কের আগে ও পরে পরিষ্কার থাকা

 

চিকিৎসা:

UTI-এর চিকিৎসার জন্য সাধারণত অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ ব্যবহার করা হয়। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ গ্রহণ করা উচিত নয়। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন সংক্রমণ প্রতিরোধে সহায়ক হতে পারে।

সঠিক সময়ে চিকিৎসা না করালে সংক্রমণ কিডনি পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়তে পারে, যা গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যার কারণ হতে পারে। তাই উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

 

লেখক:

অধ্যাপক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল ডা. এসএম শামীম ওয়াহিদ

সিনিয়র কনসালটেন্ট

ইউরোলজি বিভাগ

এভারকেয়ার হসপিটাল ঢাকা।

ফুসফুসের ক্যান্সার: কারণ ও প্রতিকার

ফুসফুসের ক্যান্সার হল এক ধরনের মরণব্যাধি রোগ, যা প্রধানত ধূমপান ও বায়ু দূষণের কারণে হয়ে থাকে। এটি ফুসফুসের কোষের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি এবং টিউমার গঠনের মাধ্যমে শরীরে ছড়িয়ে পড়তে পারে।

কারণ:

  • ধূমপান: এটি ফুসফুসের ক্যান্সারের প্রধান কারণ। দীর্ঘমেয়াদী ধূমপানে আক্রান্তদের মধ্যে এই ক্যান্সারের ঝুঁকি বেশি থাকে।
  • পরোক্ষ ধূমপান: ধূমপায়ীদের পাশে থাকলে পরোক্ষভাবে ধোঁয়ার সংস্পর্শেও ঝুঁকি বেড়ে যায়।
  • বায়ু দূষণ: দূষিত বায়ু ও রাসায়নিক পদার্থের সংস্পর্শে আসাও ক্যান্সারের কারণ হতে পারে।
  • জেনেটিক কারণ: পারিবারিক ইতিহাস থাকলে ঝুঁকি বেড়ে যায়।
  • রেডিয়েশন: অতিরিক্ত রেডিয়েশনের সংস্পর্শে আসাও ঝুঁকিপূর্ণ।

প্রতিকার:

  • ধূমপান পরিহার: এটি ফুসফুসের ক্যান্সার প্রতিরোধের সবচেয়ে কার্যকর উপায়।
  • পর্যাপ্ত বিশুদ্ধ বাতাস গ্রহণ: দূষিত স্থান এড়িয়ে চলা উচিত।
  • স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস: ভিটামিন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টযুক্ত খাবার গ্রহণ করা দরকার।
  • নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা: প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পড়লে চিকিৎসার কার্যকারিতা বেড়ে যায়।
  • ব্যায়াম: শরীরকে সুস্থ রাখার জন্য নিয়মিত ব্যায়াম করা জরুরি।

ফুসফুসের ক্যান্সার প্রতিরোধে সচেতনতা ও স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

 

লেখকঃ

ডা. বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য্য

সিনিয়র কনসালটেন্ট ও কোঅর্ডিনেটর

রেডিয়েশন অনকোলজি

এভারকেয়ার হসপিটাল ঢাকা

ডায়াবেটিক নেফ্রোপ্যাথি: ডায়াবেটিস জনিত কিডনি রোগ

ডায়াবেটিক নেফ্রোপ্যাথি হলো ডায়াবেটিস জনিত কিডনি রোগ, যা দীর্ঘদিনের ডায়াবেটিসের ফলে হয়। এটি ক্রনিক কিডনি ডিজিজের (CKD) অন্যতম প্রধান কারণ এবং সময়মতো চিকিৎসা না করলে কিডনি ফেইলিওর হতে পারে।

ডায়াবেটিক নেফ্রোপ্যাথির কারণ

ডায়াবেটিস হলে উচ্চ রক্তে শর্করা কিডনির গ্লোমেরুলাস (ফিল্টারিং ইউনিট) ক্ষতিগ্রস্ত করে। ফলে কিডনি ধীরে ধীরে প্রোটিন এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ উপাদান প্রস্রাবের মাধ্যমে বের করে দিতে শুরু করে, যা কিডনির কার্যকারিতা কমিয়ে দেয়।

প্রধান লক্ষণ

  • প্রস্রাবে প্রোটিনের উপস্থিতি (প্রোটিনিউরিয়া)
  • হাত-পা ও চোখের চারপাশে পানি জমা (এডিমা)
  • উচ্চ রক্তচাপ
  • ক্লান্তি ও দুর্বলতা

প্রতিরোধ চিকিৎসা

  • ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা – রক্তে শর্করার মাত্রা স্বাভাবিক রাখা জরুরি।
  • ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা।
  • উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করা – রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য ওষুধ সেবন করা প্রয়োজন।
  • সুষম খাদ্যাভ্যাস – লবণ ও প্রোটিন কমিয়ে স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া উচিত।
  • ধূমপান অ্যালকোহল পরিহার – এগুলো কিডনির ক্ষতি বাড়ায়।
  • নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ – কিডনির কার্যকারিতা পর্যবেক্ষণ করা জরুরি। এখন অনেক উন্নত ঔষধ আছে যা গ্রহণে প্রোটিন যাবার পরিমাণ কমানো সম্ভব।

ডায়াবেটিক নেফ্রোপ্যাথি নীরবে কিডনির ক্ষতি করে, তাই ডায়াবেটিস থাকলে নিয়মিত পরীক্ষা করানো এবং জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনা অত্যন্ত জরুরি।

 

লেখকঃ

ডা. তাবাসসুম সামাদ

কনসালটেন্ট

নেফ্রোলজি (কিডনি) বিভাগ

এভারকেয়ার হসপিটাল ঢাকা