ব্রেইন টিউমার: যথাযথ চিকিৎসায় নিরাময়

ব্রেইন টিউমার হলো মস্তিষ্কে অস্বাভাবিক কোষের বৃদ্ধি, যা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে মস্তিষ্কের কার্যকারিতায় প্রভাব ফেলতে পারে। এটি দুটি ধরণের হতে পারে— (Benign), যা ধীরে বৃদ্ধি পায় এবং সাধারণত ক্ষতিকর নয়, এবং (Malignant), যা দ্রুত বৃদ্ধি পায় ক্ষতিকর এবং শরীরে দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে।।

ব্রেইন টিউমারের সুনির্দিষ্ট কারণ এখনো পুরোপুরি জানা যায়নি, তবে জেনেটিক মিউটেশন, মস্তিষ্কে তেজস্ক্রিয়তার প্রভাব, এবং কিছু ভাইরাল সংক্রমণকে এটি হওয়ার সম্ভাব্য কারণ হিসেবে ধরা হয়।

মস্তিষ্ক (Brain) মাথার শক্ত খুলি অর্থাৎ হাড়ের বদ্ধ প্রকোষ্ঠে সুরক্ষিত। টিউমার যখন বদ্ধ প্রকোষ্ঠে ক্রমান্বয়ে বড় হতে থাকে তার কারণে ব্রেইনের প্রেসার বেড়ে যায়। মস্তিষ্কের ক্ষমতা লোপ পেতে থাকে। মস্তিষ্কের যে অংশে টিউমার হয় সেই অংশের কার্যকারিতা বিনষ্ট হতে থাকে এবং সে অনুযায়ী উপসর্গ হয়। ব্রেইনে টিউমার ধরা পড়লে দ্রুত চিকিৎসার প্রয়োজন। যত দ্রুত অপারেশন বা সার্জারি এর মাধ্যমে টিউমার অপসারণ হবে তত‌ই ব্রেইন নষ্ট হ‌ওয়ার সম্ভাবনা কমবে।

উপসর্গ সমূহ

  • মাথাব্যথা
  • বমিভাব বা বমি হওয়া
  • খিঁচুনি
  • দৃষ্টিশক্তির সমস্যা
  • অজ্ঞান হয়ে যাওয়া
  • স্মৃতিভ্রংশ বা বিভ্রান্তি বা এলোমেলো কথা বলা
  • শরীরের কোনো অংশ দুর্বল বা নিষ্ক্রিয় হয়ে যাওয়া বা পক্ষাঘাতগ্রস্ত হ‌ওয়া

চিকিৎসা নিরাময়

যদি কোনো ব্যক্তির উপরে উল্লেখিত উপসর্গগুলো দেখা দেয়, তাহলে দ্রুত নিউরোসার্জন বা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। সময়মতো রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসা গ্রহণ করলে ব্রেইন টিউমারের ঝুঁকি কমানো সম্ভব।

ব্রেইন টিউমারের চিকিৎসা নির্ভর করে টিউমারের ধরণ, আকার এবং অবস্থানের ওপর। প্রধান চিকিৎসা পদ্ধতির মধ্যে রয়েছে সার্জারি, রেডিওথেরাপি, কেমোথেরাপি এবং টার্গেটেড থেরাপি। আধুনিক চিকিৎসার ফলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই রোগীরা সুস্থ জীবনে ফিরতে পারেন।

 

লেখকঃ

প্রফেসর (কর্নেল) ডাঃ মুঃ আমিনুল ইসলাম (অবঃ)

সিনিয়র কনসালটেন্ট

নিউরোসার্জারী বিভাগ

এভারকেয়ার হসপিটাল ঢাকা।

রোজায় সাস্থ্যকর পানীয়

চলছে পবিত্র মাহে রমজান।এই রোজায় আমাদের সুস্থ ভাবে রোজা সম্পন্ন করা, এনার্জিটিক থাকা ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা উন্নতি করার লক্ষ্যে সঠিক পুষ্টি উপাদান সমৃদ্ধ খাবার নির্বাচন অনেক জরুরি।

রোজা ভাঙার পর প্রথম খাবার হলো ইফতার। রকমারি ও সুষম পুষ্টি উপাদান দিয়ে সাজাতে হয় তাই ইফতার। পানি ও খেজুর দিয়ে রোজা ভেংগে সবাইকে একটি তরল খাবার খেতে হয়। এই তরল খাবারটি  পুষ্টি উপাদান সমৃদ্ধ, সহজলভ্য,  সঠিক ও স্বাস্থ্যকর তরল হওয়া জরুরি।

এনার্জি ও পুষ্টি সমৃদ্ধ নীচে বেশ কিছু সাস্থ্যকর তরল খাবার তুলে ধরা হলো।

ফলের রস

মৌসুমী ফল দিয়ে ঘরে করা ফলের জুস এনার্জি আর ইলেক্ট্রলাইটস এর একটি দারুণ উৎস। এক্ষেত্রে সহজলভ্য যেকোনো মৌসুমি ফল দিয়ে জুস করে খেলে পর্যাপ্ত ভিটামিন, মিনারেল ও ইন্সট্যান্ট এনার্জি পাওয়া যাবে। এক্ষেত্রে নরম পাকা ফল বেছে নিলে ভালো। ব্লেন্ডারে না করে হাতে চটকিয়ে বা ম্যানুয়াল মেশিনে করলে ফলের ফাইবার কিছুটা থাকে। চটকানো ফলের সাথে বিশুদ্ধ পানি মিশিয়ে বানানো হয় ফলের রস। ব্লেন্ডারে করলে না ছেঁকে বানাতে হয় ফলের জুস। বড়দের জন্য চিনি না মেশানো ভালো তবে বাড়ির ছোট সদস্যদের জন্য ফলের রসে গুড় বা লাল চিনি বা তাল মিস্রি বা মধু মেশালে ভালো।

একটু লেবুর রস মেশালে যেকোন ফলের রসে ভিটামিন সি যুক্ত হয় আর স্বাদ অনুযায়ী সামান্য লবন মিশালে শরীরে সোডিয়াম এর ঘাটতি পূরন হয়।

ডায়বেটিক রোগীরা পরিমান মত ফল পানির সাথে মিশিয়ে চিনি ছাড়া জুস করে পরিমিত পারিমানে খেতে পারবে।

নানা রকম ফল দিয়ে করা হয় জুস।আম, বাংগি,  তরমুজ,  পাকা পেপে,  বেল,  লেবু, কমলা,  মালটা,  আনারস,  জাম্বুরা ইত্যাদি ফলের রস খুব উপকারী। লেবুর শরবত মধু বা আখের গুড় দিয়ে খাওয়া যেতে পারে।ফলের জুসে তোকমা বা চিয়া সিডস মিশিয়ে নিলে তা আরো পুষ্টিকর হয়।

ডাবের পানি

এটি সতন্ত্র একটি সাস্থ্যকর পানিয়। যাতে কিছু মেশানোর প্রয়োজন হয়না। ব্যালেন্স ক্যালরি আর পর্যাপ্ত পটাশিয়াম এ ভরপুর এই ডাবের পানি রোজায় মেডিসিনের কাজ করে। রোজায় অনেকের রক্তে পটাশিয়াম কমে যাওয়ার প্রবনতা দেখা দেয়। তাদের জন্য ইফতারে এটি খুব ভালো পানিয়। যাদের ডায়বেটিস অনিয়ন্ত্রিত তাদের জন্য খুব ভালো কারন এতে ক্যালরি কম আর সেই জন্য যারা ওজন কমানোর ডায়েটে আছে তাদের জন্য এই পারফেক্ট তরল। উচ্চরক্তচাপ, হৃদরোগ, ওবেসিটি ও ডায়বেটিক রোগীদের জন্য এটি খুব হেলদি।

লাচ্ছি

টক ও মিষ্টি দুই ধরনের লাচ্ছি খুব উপকারী। লাচ্ছিতে পানির সাথে টক বা মিষ্টি দই, পানি ও লবন বা বীট লবন, চাট মশলা ইত্যাদি দিয়ে করা হয়। দই এর লাচ্ছিতে দই মূল উপাদান তাই এই রেসিপি থেকে পর্যাপ্ত প্রোটিন,  ক্যালসিয়াম,  ফসফরাস,  প্রো বায়োটিক সহ অন্যান্য ভিটামিন ও মিনারেল পাওয়া যায়।

অনেকে দুধ সহ্য না করতে পারলেও লাচ্ছি হজম করতে পারে তাই তাদের জন্য রোজায় এটি পারফেক্ট তরল। ডায়বেটিক রোগী, হার্টের রোগী, অস্টিওপরোসিস বা যারা ওজন সমস্যায় ভুগছে তাদের জন্য টক দই এর লাচ্ছি ভালো। গর্ভবতী মা, কম বয়সী,  যাদের ওজন কম, যাদের দূর্বলতা আছে তাদের জন্য মিষ্টি লাচ্ছি উপকারী।

কলার স্মুদি

দুধ বা দই এর সাথে কলা ব্লেন্ড করে মূলত ঘন স্মুদি করা হয়। কলার পুষ্টির পাশাপাশি দই বা দুধের সব পুষ্টি এই  এক গ্লাস স্মুদি থেকে পাওয়া সম্ভব।  এই স্মুদিকে আরো পুষ্টিকর করতে এর সাথে মধু যুক্ত করা যেতে পারে। এই রেসিপিটি থেকে প্রোবায়োটিক এর পাশাপাশি জিংক,  ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম,  ক্যালসিয়াম ও এন্টি অক্সিডেন্ট পাওয়া যাবে, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়ক।

লেবু আর পুদিনার জুস

কুচি লেবু,  লেবুর রস, পুদিনা,  লবন,  সামান্য সুগার সিরাপ বা মধু মিক্স করে করা হয় লেমন মিন্ট লেমনেড বা লেবু পুদিনার জুস। এই তরল খুবই রিফ্রেশমেন্ট দেয়। পটাসিয়াম ও এন্টি অক্সিডেন্ট এর এক পারফেক্ট তরল। তবে যাদের ডায়বেটিস আছে তারা সুগার বাদ দিয়ে ডায়েট চিনি দিয়ে এটি উপভোগ করতে পারবে। এসিডিটি বা গ্যাসের সমস্যা আছে তারা এড়িয়ে চলাই ভালো।

রুহাফজার শরবত

রুহাফজা অনেককাল থেকেই বাংগালীদের রোজায় এক প্রিয় শরবত। সব শ্রেণির মানুষের জন্য এটি সাধারণ পানিয়। রুহাফজা অনেক ফলের ঘন সিরাপ তাই এতে পানি ছাড়া আর কিছু মিশাতে হয়না। তবে এই রুহাফজাকে সাস্থ্যকর করতে এর সাথে ইসুবগুল বা তোকমা মেশানো হলে তা অনেক উপকারী হয়। যাদের এনার্জি কম, কোষ্ঠকাঠিন্য আছে তাদের জন্য এই উপায়ে খেলে ভালো।

আখের গুড়ের শরবত

এটিও সকল শ্রেণির মানুষের কাছে গ্রহনযোগ্য একটি পানীয়। আখের গুড়ের সাথে পানি ও সামান্য লেবু ও চাইলে এক চিমটি লবন দিয়ে তৈরি করা যেতে পারে এই শরবত। প্রায় স্যালাইন এর মত কাজ করবে এই শরবত। যাদের রোজাতে দূর্বল লাগে, মাংসপেশিতে টান লাগে, রক্তের সোডিয়াম বা সুগার কমে যায় তাদের জন্য এটি খুব উপকারী।

তরল খাবারটি সাস্থ্যকর করার জন্য ঘরের তৈরি তরলের কোন বিকল্প নেই। কমার্শিয়াল ক্যান বা বোতল জাত তরল এড়িয়ে চললে ভালো। যেকোন তরল খাবারকে হেলদি করতে চিনি ও রঙ পরিহার করুন।

মধু, তোকমা, ইসুবগুল, লেবুর রস, পুদিনা পাতা,সামান্য লবন ইত্যাদি খাদ্য উপাদান যোগ করে আপনার বানানো তরলকে আরো হেলদি করুন।  পরিবারের সবাই যাতে এই রোজায় হাইড্রেট থাকে সেই চেষ্টাই করুন।

 

লেখকঃ

তামান্না চৌধুরী

প্রিন্সিপাল ডায়েটিশিয়ান

ডায়েটিক্স এবং পুষ্টিবিভাগ

এভারকেয়ার হসপিটাল ঢাকা।

কোলন ক্যান্সার: লক্ষণ ও চিকিৎসা

কোলন ক্যান্সার অন্ত্রের ক্যান্সারের একটি ধরন, যা প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত করা গেলে নিরাময়ের সম্ভাবনা বেশি থাকে।

লক্ষণ:

  • মলত্যাগের অভ্যাসের পরিবর্তন: পরিবর্তনশীল কোষ্ঠকাঠিন্য এবং ডায়রিয়া।
  • রক্তক্ষরণ: মলের সাথে রক্ত আসা।
  • পেটে ব্যথা: দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা ও অস্বস্তি অনুভব করা।
  • ওজন কমে যাওয়া: অকারণে ওজন হ্রাস।
  • শক্তি হ্রাস: সহজেই ক্লান্তি অনুভব করা।

চিকিৎসা:

  • সার্জারি: আক্রান্ত টিউমার অপসারণ করা।
  • কেমোথেরাপি: ওষুধের মাধ্যমে ক্যান্সার কোষ ধ্বংস করা।
  • রেডিওথেরাপি: ক্যান্সার কোষ ধ্বংসের জন্য রেডিয়েশন ব্যবহার করা।
  • ইমিউনোথেরাপি: রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে ক্যান্সার কোষ ধ্বংস করা।

প্রাথমিক পর্যায়ে কোলন ক্যান্সার শনাক্ত করতে পারলে চিকিৎসা সহজ হয়, তাই নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা গুরুত্বপূর্ণ।

লেখকঃ
ডা. আরমান রেজা চৌধুরী
সিনিয়র কনসালটেন্ট
রেডিয়েশন অনকোলজি
এভারকেয়ার হসপিটাল ঢাকা

বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার ও তাদের লক্ষণ

ক্যান্সার বিভিন্ন প্রকারের হতে পারে, এবং প্রতিটি ধরনের ক্যান্সারের ভিন্ন লক্ষণ ও প্রভাব থাকতে পারে। নিম্নে কিছু সাধারণ ক্যান্সারের ধরন এবং তাদের লক্ষণ তুলে ধরা হলো:

  • ফুসফুসের ক্যান্সার: ক্রমাগত কাশি, শ্বাসকষ্ট, বুকে ব্যথা, ওজন কমে যাওয়া।
  • স্তন ক্যান্সার: স্তনে গুটি, আকার পরিবর্তন, ব্যথা, নিপল থেকে অস্বাভাবিক তরল নির্গমন।
  • কোলন ক্যান্সার: মলত্যাগের অভ্যাসের পরিবর্তন, রক্তক্ষরণ, পেটে ব্যথা।
  • লিভার ক্যান্সার: ক্ষুধামন্দা, ওজন কমে যাওয়া, ত্বকের হলুদভাব।
  • কিডনি ক্যান্সার: মূত্রে রক্ত, পিঠের নিচে ব্যথা, অতিরিক্ত ক্লান্তি।
  • ত্বকের ক্যান্সার: নতুন আঁচিল বা বিদ্যমান আঁচিলের পরিবর্তন, ত্বকে ক্ষত যা সারে না।
  • মুখগহ্বরের ক্যান্সার: মুখে বা জিহ্বায় ঘা, চোয়ালের ব্যথা, গলায় অস্বস্তি।

ক্যান্সারের প্রাথমিক লক্ষণ:
ক্যান্সারের লক্ষণ নির্ভর করে এর অবস্থান ও ধরণ অনুযায়ী। তবে কিছু সাধারণ লক্ষণ রয়েছে, যেমন:

  • দীর্ঘস্থায়ী ক্লান্তি
  • অস্বাভাবিক রক্তপাত
  • শরীরের যেকোনো অংশে গুটি বা ফোলা
  • অস্বাভাবিক ওজন হ্রাস
  • দীর্ঘস্থায়ী কাশি বা গলায় খুশখুশে ভাব

যদি এই লক্ষণগুলো দীর্ঘ সময় ধরে চলতে থাকে, তবে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

 

লেখকঃ
ডা. বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য্য
সিনিয়র কনসালটেন্ট ও কোঅর্ডিনেটর
রেডিয়েশন অনকোলজি
এভারকেয়ার হসপিটাল ঢাকা।

রমজানে কিডনি রোগীদের জন্য পরামর্শ

বাংলাদেশে প্রায় দুই কোটি মানুষ কোনো না কোনো কিডনি রোগে আক্রান্ত। রমজান মাসে রোজা রাখা কিডনি রোগীদের জন্য বিশেষ চ্যালেঞ্জ হতে পারে। সঠিক পরামর্শ ও সতর্কতা মেনে চললে অনেক কিডনি রোগী নিরাপদে রোজা রাখতে পারেন।

যাদের জন্য রোজা রাখা ঝুঁকিপূর্ণ:

  • চতুর্থ পঞ্চম ধাপের দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগী: যাদের কিডনি কার্যকারিতা গুরুতরভাবে হ্রাস পেয়েছে এবং নিয়মিত ডায়ালাইসিস প্রয়োজন।
  • নিয়মিত ডায়ালাইসিসে থাকা রোগী: ডায়ালাইসিসের সময়সূচি ও প্রয়োজনীয় তরল গ্রহণের কারণে রোজা রাখা তাদের জন্য কঠিন হতে পারে।
  • মূত্রতন্ত্রের প্রদাহ বা আকস্মিক কিডনি বিকল রোগী: এ ধরনের অবস্থায় রোজা রাখা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।

বিশেষ সতর্কতা:

  • ডায়াবেটিস উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ: কিডনি রোগীদের মধ্যে ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ সাধারণ সমস্যা। রোজা রাখার আগে এসব রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরি।
  • পর্যাপ্ত পানি পান: ইফতার থেকে সেহরি পর্যন্ত সময়ের মধ্যে পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে, বিশেষ করে পাথরজনিত কিডনি রোগীদের জন্য এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
  • সুষম খাদ্যাভ্যাস: ইফতার ও সেহরিতে কম লবণ ও চর্বিযুক্ত খাবার গ্রহণ করুন। তাজা ফলমূল, শাকসবজি, দই, পুডিং, সবজি ও সালাদ খাওয়া যেতে পারে। তৈলাক্ত ও ভাজা খাবার পরিহার করা উচিত।
  • ওষুধ সেবন: রমজানে ওষুধের সময়সূচি পরিবর্তন করতে হতে পারে। সেহরি ও ইফতারের সময় ওষুধ সেবনের বিষয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

চিকিৎসকের পরামর্শ:

  • হঠাৎ কিডনি বিকল হয়ে থাকলে (Acute kidney injury) রোজা রাখা যাবেনা।
  • রোজা রাখার ৭ থেকে ১০ দিনের এর মাঝে সিরাম ক্রিয়েটিনিন, সিরাম ইলেক্ট্রোলাইট চেক করবেন। কোনো পরিবর্তন হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন।
  • ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে অবশ্যই ইনসুলিন নেয়া অথবা ওষুধের সময় ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী সমন্বয় করে নিবেন।

রমজানে রোজা রাখার আগে কিডনি রোগীদের অবশ্যই তাদের চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করা উচিত। চিকিৎসক রোগীর শারীরিক অবস্থা মূল্যায়ন করে রোজা রাখার উপযুক্ততা নির্ধারণ করবেন এবং প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদান করবেন।

সঠিক পরামর্শ ও সতর্কতা মেনে চললে কিডনি রোগীরাও রমজানে নিরাপদে রোজা রাখতে পারেন। তবে স্বাস্থ্যের অবনতি হলে রোজা ভেঙে দ্রুত চিকিৎসা গ্রহণ করা উচিত।

 

লেখকঃ

ডা. তাবাসসুম সামাদ

কনসালটেন্ট

নেফ্রোলজি (কিডনি) বিভাগ

এভারকেয়ার হসপিটাল ঢাকা।

রমজানে স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস: সুস্থতার জন্য করণীয়

পবিত্র রোজা ইনশাআল্লাহ শুরু হবে খুব শীঘ্রই। পুরো একটি মাস সংযমের সঙ্গে সুস্থভাবে রোজা রাখার জন্য আমাদের অনেক রকম প্রস্তুতি নিতে হয়। রোজায় খাবারের ধরন, সময়, পরিমাণ ও পরিবেশন পরিবর্তিত হলেও দৈনিক পুষ্টি ও ক্যালরির চাহিদা অপরিবর্তিত থাকে। তাই সুস্থভাবে সবগুলো রোজা পালন করতে হলে সঠিক খাবারের পাশাপাশি কিছু নিয়ম মেনে চলা জরুরি।

ইফতার

রোজা ভাঙার পর প্রথম খাবারই হলো ইফতার। আজানের পর একটি বা দুটি খেজুর ও পানি দিয়ে ইফতার শুরু করা ভালো। এর সঙ্গে এমন কিছু পানীয় গ্রহণ করুন যা শরীরে শক্তি জোগাবে ও ইলেক্ট্রোলাইটের চাহিদা পূরণ করবে।

সুস্থকরপানীয়:

  • ঘরে তৈরি চিনি ছাড়া ফলের জুস
  • ডাবের পানি
  • দই ও ফলের স্মুদি
  • আখের গুড়ের শরবত
  • লেবু-মধু পানি
  • লাচ্ছি
  • তোকমা বা ইসুবগুলের শরবত
  • চিড়ার শরবত

এরপর ঘরে তৈরি হালকা ভাজা খাবার এপেটাইজার হিসেবে খাওয়া যেতে পারে, তবে প্রতিদিন না খাওয়াই ভালো। এরপর এমন একটি স্বাস্থ্যকর মূল খাবার গ্রহণ করুন যা থেকে সব ধরনের পুষ্টি পাওয়া যায়। যেমন:

সুস্থকর মূল খাবার:

  • ঘরে তৈরি খিচুড়ি ও ডিম
  • সবজি ও মাংসের খিচুড়ি
  • রুটি, সবজি ও ডিম
  • লাইট ভাত ও তরকারি
  • এগ ভেজিটেবল নুডলস

ডেজার্ট হিসেবে মিশ্র ফল বা দুধজাত খাবার খাওয়া যেতে পারে। খেয়াল রাখবেন, খাবার যেন ঘরে তৈরি ও পরিমাণে বেশি না হয়।

সেহরি

রোজায় সেহরি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অনেকেই সেহরি খেতে চান না বা অনেক আগেই খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েন, যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। এতে রোজার সময় দীর্ঘ হওয়ায় শরীরে দুর্বলতা, ক্লান্তি, পানির পিপাসা, মাথাব্যথা ও অ্যাসিডিটির সমস্যা হতে পারে। তাই পুষ্টিকর ও স্বাস্থ্যকর সেহরি গ্রহণ করা উচিত।

সেহরির জন্য উপযুক্ত খাবার:

  • ভাত, মাছ, নরম সবজি ও মুরগি
  • রুটি, দুধ ও কলা
  • ওটস বা সিরিয়াল

সেহরিতে কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন ও ফ্যাটের সঠিক পরিমাণ বজায় রাখা জরুরি।

এড়িয়ে চলুন: মিষ্টি, ভাজাপোড়া, বেকারি খাবার ও প্রসেসড খাবার।

রাতের খাবার ডিনার

অনেকে ইফতারে বেশি খেয়ে রাতের খাবার এড়িয়ে যান, যা ঠিক নয়। ইফতার পরিমিত পরিমাণে খেয়ে তারাবির নামাজের পর একটি লাইট ডিনার করা উচিত।

সুস্থকর রাতের খাবার:

  • চিকেন ভেজিটেবল স্যুপ
  • দুধ ও সিরিয়াল
  • রুটি, সবজি ও ডিম
  • ওটস ও দুধ
  • সবজি, মাছ বা মুরগির হালকা রান্না করা খাবার

রোজায় করণীয় পর্যাপ্ত পানি পান করুন, ইফতার থেকে সেহরি পর্যন্ত শরীর হাইড্রেট রাখা অত্যন্ত জরুরি।
যারা কোষ্ঠকাঠিন্যে ভোগেন তারা- ইসুবগুল, তোকমা, শাকসবজি ও ফলমূল খাবারের তালিকায় রাখবেন।
এড়িয়ে চলুন- ভাজাপোড়া, রঙিন খাবার, প্রতিদিন হালিম, জিলাপি, বাইরের কমার্শিয়াল জুস ইত্যাদি।
নির্দিষ্ট রোগ থাকলে- রোজার আগে ডাক্তার ও ডায়েটিশিয়ানের পরামর্শ নিন।
সঠিক পরিমাণে ঘুম সুস্থ থাকার জন্য পর্যাপ্ত ও নিয়মিত ঘুম অত্যন্ত জরুরি।সঠিক খাবার ও সঠিক রুটিন মেনে চলুন, পরিবারের সঙ্গে সুস্থভাবে রোজা পালন করুন।

লেখকঃ
তামান্না চৌধুরী
প্রিন্সিপাল ডায়েটিশিয়ান
ডায়েটিক্স এবং পুষ্টিবিভাগ
এভারকেয়ার হসপিটাল ঢাকা।

ক্যান্সার কী এবং কেন হয়?

ক্যান্সার একটি প্রাণঘাতী রোগ যা শরীরের কোষগুলোর অস্বাভাবিক বৃদ্ধির ফলে সৃষ্টি হয়। স্বাভাবিকভাবে, শরীরের কোষ নির্দিষ্ট নিয়ম অনুসারে বিভাজিত হয় এবং এক পর্যায়ে বৃদ্ধিও থেমে যায়। কিন্তু ক্যান্সার হলে এই কোষ বিভাজনের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া নষ্ট হয়ে যায় এবং অনিয়ন্ত্রিতভাবে কোষ বৃদ্ধি পায়, যা টিউমার সৃষ্টি করতে পারে।

ক্যান্সারের কারণসমূহ:

ক্যান্সারের সুনির্দিষ্ট কারণ নির্ণয় করা কঠিন হলেও কিছু ঝুঁকিপূর্ণ কারণ রয়েছে। যেমন:

১. জিনগত কারণ: পরিবারের পূর্ববর্তী প্রজন্মে ক্যান্সারের ইতিহাস থাকলে ঝুঁকি বেড়ে যায়।
২. ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য: তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহারের ফলে ফুসফুস, মুখ, গলা ও অন্যান্য অঙ্গের ক্যান্সারের সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
৩. অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস: অতিরিক্ত চর্বি ও প্রক্রিয়াজাত খাবার গ্রহণ ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
৪. পরিবেশ দূষণ: বায়ু ও পানি দূষণ থেকে ক্ষতিকারক রাসায়নিক উপাদান শরীরে প্রবেশ করে ক্যান্সারের কারণ হতে পারে।
৫. অ্যালকোহল গ্রহণ: অতিরিক্ত অ্যালকোহল পান লিভার ও অন্যান্য অঙ্গের ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।
৬. ভাইরাস ও সংক্রমণ: কিছু ভাইরাস সংক্রমণ, যেমন হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস (HPV) ও হেপাটাইটিস বি, ক্যান্সারের কারণ হতে পারে।
৭. রেডিয়েশন: অতিরিক্ত সূর্যালোক বা এক্স-রে ও রেডিয়েশন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।

ক্যান্সার প্রতিরোধের উপায়:

যদিও ক্যান্সার পুরোপুরি প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়, তবে কিছু সতর্কতা গ্রহণ করলে ঝুঁকি কমানো যেতে পারে। স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন, সুষম খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত ব্যায়াম, ধূমপান ও অ্যালকোহল পরিহার করা, এবং নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়ক হতে পারে।
প্রাথমিক পর্যায়ে ক্যান্সার শনাক্ত করা গেলে চিকিৎসা সফল হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়। তাই, নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা এবং শরীরে কোনো অস্বাভাবিক পরিবর্তন লক্ষ্য করলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।

লেখকঃ
ডা. বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য্য
সিনিয়র কনসালটেন্ট ও কোঅর্ডিনেটর
রেডিয়েশন অনকোলজি
এভারকেয়ার হসপিটাল ঢাকা।

ফুসফুস ক্যান্সার সম্পর্কে যা যা জানা প্রয়োজন

সময়ের সাথে সাথে ক্যান্সারের ভিন্ন ভিন্ন ধরণ ও ভিন্ন ভিন্ন বৈশিষ্ট্য দেখেছে মানবসভ্যতা। ক্যান্সারে আক্রান্ত প্রতিটি রোগীর অভিজ্ঞতা এবং এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের গল্পগুলোও ব্যতিক্রম। তাই সবার ব্যতিক্রমিতাকে সম্মান জানাতে ‘ইউনাইটেড বাই ইউনিক’ থিম নিয়ে প্রতিবারের মতো এবছরেও পালিত হতে যাচ্ছে বিশ্ব ক্যান্সার দিবস।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিভিন্ন তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বে ফুসফুসের ক্যান্সার সবচেয়ে মারাত্মক হিসেবে পরিগণিত হয়। এর বেশ কিছু কারণ থাকলেও ধূমপানকে ফুসফুসের ক্যান্সারের অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তামাকের মধ্যে থাকা নিকোটিন, টার, আর্সেনিকের মতো প্রায় ৬৯টির বেশি রাসায়নিক পদার্থ রয়েছে যারা মানবদেহে ক্যান্সার সৃষ্টিতে বিশেষ ভূমিকা রাখে। ধূমপানের পর ফুসফুসে অবশিষ্ট থাকা নিকোটিন ও টার ফুসফুসে ক্যান্সারের কোষ গঠন করে। এমনকি যারা আগে ধূমপান করতেন তবে এখন ত্যাগ করেছেন বা পরোক্ষ ধূমপায়ী, তারাও ক্যান্সারে আক্রান্ত হতে পারে। সিগারেটের ধোঁয়ায় ক্যান্সার সৃষ্টিকারী উপাদান কার্সিনোজেন ধূমপায়ী ও দীর্ঘসময় ধূমপায়ীদের সংস্পর্শে থাকা ব্যক্তিরাও ক্যান্সার আক্রান্ত হতে পারেন। ধূমপানে ফুসফুসের আস্তরণের ব্যাপক ক্ষতি হয়। দেহের প্রতিরোধ ব্যবস্থা শরীরে প্রবেশকৃত ধোঁয়া ও অন্যান্য ক্ষতিকারক পদার্থের বিরুদ্ধে লড়াই করে। তবে দীর্ঘ সময় ধরে ধূমপানের ফলে তা ধীরে ধীরে নিস্তেজ হতে থাকে ফলে ফুসফুস সহজেই ক্যান্সার আক্রান্ত হতে পারে।

এছাড়া, কয়লা খনির শ্রমিক, বিল্ডিং নির্মাণ শ্রমিক, পেট্রোলিয়াম, কেমিক্যাল বা রাবার কারখানার শ্রমিক, জাহাজ শ্রমিক, এক্স-রে বিভাগে রেডিয়েশন থেরাপি দেওয়ার কাজ করে এমন কর্মীরাও ফুসফুস ক্যান্সারের আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকে।

উপসর্গসমূহ –

ফুসফুসের ক্যান্সারের প্রাথমিক পর্যায়ে কোন উপসর্গ থাকে না। তবে, ক্যান্সারের অবস্থা অনুযায়ী ধীরে ধীরে উপসর্গগুলো দেখা দেয়। ক্রমাগত কাশি বা স্মোকারস কফ, কাশির সাথে রক্ত যাওয়া, শ্বাসকষ্ট, নিশ্বাসকালীন বুকে ব্যথা, গলা ভাঙ্গা, ওজন হ্রাস, হাড় ও মাথাব্যথা ইত্যাদি ফুসফুস ক্যান্সারের কিছু উপসর্গ। এসব উপসর্গ দেখা দিলে তৎক্ষণাৎ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন। বিশেষ করে, যারা চেইন স্মোকার বা নিয়মিত ধূমপায়ী তাদের নিয়মিত মেডিকেল চেকআপ করানো উচিৎ।

ধরণ –

ফুসফুসের ক্যান্সার সাধারণত দুই প্রকার হয়; স্মল সেল লাং ক্যান্সার (এসসিএলসি) এবং নন-স্মল সেল লাং ক্যান্সার (এনএসসিএলসি)। মাইক্রোস্কোপের মাধ্যমে পরীক্ষার পর চিকিৎসকরা ক্যান্সারের ধরণ ও অবস্থা সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারেন।

ঝুঁকিসমূহ –

ধূমপান ছাড়াও পরোক্ষ ধূমপান, রেডন গ্যাস, অ্যাসবেস্টস ও কার্সিনোজেন এবং বংশগত ইত্যাদি ফুসফুস ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়। মাটি, পাথর এবং পানিতে ইউরেনিয়াম ভেঙে রেডন গ্যাস উৎপন্ন হয়। রেডন টেস্টিং কিট বাতাসে রেডনের উপস্থিতি সনাক্ত করে। রেডনের মাত্রা নির্ধারিত থাকে। যদি বাতাসে রেডনের উপস্থিতি নির্দিষ্ট মাত্রার বেশি থাকে তাহলে অবিলম্বে সংশ্লিষ্টপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন। অ্যাসবেস্টস ছাদযুক্ত বাড়িতে থাকলে ফুসফুস ক্যান্সারের ঝুঁকি তৈরি হতে পারে। অ্যাসবেস্টসে আর্সেনিক, ক্রোমিয়াম ও নিকেল থাকে, যা ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়। ধূমপায়ীদের ক্যান্সার পরীক্ষার জন্য সিটি স্ক্যান করানো হয়। ৫৫ বা এর বেশি বয়সীদের ধূমপানের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকা উচিৎ কারণ তাদের ক্যান্সার আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি থাকে।

পরীক্ষা পদ্ধতি –

ক্যান্সার কোষের উপস্থিতি বোঝার জন্য স্পুটাম সাইটোলজি পদ্ধতিতে মাইক্রোস্কোপ দ্বারা থুতু পরীক্ষা করা হয়। বায়োপসি’র মাধ্যমে ফুসফুসের কোষে ক্যান্সারের উপস্থিতি ও অবস্থা সম্পর্কে জানা যায়। ব্রোকোস্কোপ দ্বারা ফুসফুসে ক্যান্সারের অবস্থান সনাক্ত করা হয় ও মিডিয়াস্টিনোস্কোপি দ্বারা লিম্ফ নোডস থেকে টিস্যুর নমুনা সংগ্রহের জন্য ঘাড়ের গোড়ায় ছিদ্র করা হয়। ফুসফুসের ক্যান্সার নির্ণয়ে সিটি স্ক্যান করা হয়। ইমেজ টেস্ট এবং এক্স-রেও এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত। সিটি স্ক্যান এবং এক্স-রে দ্বারা বুকে ইনজেকশন প্রয়োগের মাধ্যমে ঝুঁকিপূর্ণ কোষ বা সেলগুলো সংগ্রহ করা হয়। ফুসফুসের ক্যান্সারের পর্যায় শুধুমাত্র ফুসফুসের ক্যান্সার সেল অধ্যয়ন করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ফুসফুসের ক্যান্সারের প্রথম পর্যায়ে, ক্যান্সার সেল শুধুমাত্র ফুসফুসে সীমাবদ্ধ। ফুসফুসের ক্যান্সারের দ্বিতীয় ধাপে দেখা যায় ক্যান্সার চেষ্ট ওয়াল ও ডায়াফ্রামে ছড়িয়ে পড়েছে। ফুসফুসের ক্যান্সারের তৃতীয় ও চূড়ান্ত ক্যান্সার ফুসফুস থেকে শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়তে দেখা যায়।

ক্যান্সারটি কোন পর্যায়ে আছে তা নির্ধারণে পিইটি সিটি স্ক্যান বা অন্যান্য রেডিওলজিক্যাল পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়। দুর্ভাগ্যবশত সঠিক স্ক্রিনিং ও সচেতনতার অভাবে বেশিরভাগ ফুসফুস ক্যান্সার চতুর্থ পর্যায়ে গিয়ে ধরা পড়ে। ফলস্বরূপ, ক্যান্সার শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়ে। তাই, ঝুঁকিপূর্ণ সময়ে বাড়তি সচেতনতা আবশ্যক।

চিকিৎসা –

ফুসফুস ক্যান্সারের চিকিৎসা রোগের পর্যায় বা অবস্থার ওপর নির্ভর করে। কখনও কখনও এক বা একাধিক চিকিত্সার প্রয়োজনও হতে পারে। যার মধ্যে; কেমোথেরাপি, রেডিয়েশন থেরাপি বা টার্গেটেড ড্রাগ থেরাপি, ইমিউনোথেরাপি উল্লেখযোগ্য। সার্জারি হলে ফুসফুসের ছোট, বড়, পুরো লোব এমনকি সম্পূর্ণ ফুসফুসও অপসারণের প্রয়োজন হতে পারে। সার্জারির ক্ষেত্রে রক্তপাত ও ইনফেকশনের ঝুঁকি থাকে, তাই অবশ্যই ভালো হসপিটাল ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দ্বারা সার্জারি করাতে হবে। এভারকেয়ার হসপিটাল ক্যান্সার নির্ণয় ও চিকিৎসায় ব্যাপক সমাদৃত।

রিসপিরেটরি থেরাপিস্টের পরামর্শ অনুযায়ী শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়ামের মাধ্যমে প্রাথমিক সুস্থতা নিশ্চিত করা যেতে পারে। সার্জারির আগে-পরে রোগীর যথাযথ যত্ন নিতে হয়। সঠিক যত্ন রোগীর উপসর্গ কমতে সাহায্য করে। সঠিক যত্নই পারে রোগীকে একটি স্বাভাবিক জীবন ফিরিয়ে দিতে। এভারকেয়ার হসপিটাল ঢাকায় আছে মাল্টি-ডিসিপ্লিনারি সুপার-স্পেশালিটি টারশিয়ারি কেয়ার ইউনিট, যেখানে অত্যাধুনিক চিকিৎসা, অস্ত্রোপচার এবং ডায়াগনস্টিক সুবিধাসহ সব ধরনের স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা হয়। পাশাপাশি তাদের বিশেষ মেডিকেল টিম চিকিৎসা পরবর্তী সময়েও রোগীকে সার্বিক পর্যবেক্ষণে রাখে এবং দ্রুত আরোগ্য লাভে সহায়তা করে।

সব দিক বিবেচনা করে, ক্যান্সার সনাক্ত ও চিকিৎসায় কোন প্রকার অবহেলা না করে দ্রুত প্রদক্ষেপ নেওয়াই শ্রেয়। ক্যান্সার হতে পারে এমন কাজ থেকে বিরত থাকা প্রয়োজন। বিশেষ করে, ধূমপান ত্যাগ করে লাইফস্টাইল পরিবর্তনে মনোযোগী হওয়া উচিৎ।

লেখকঃ
ডাঃ ফেরদৌস শাহরিয়ার সাঈদ
সিনিয়র কনসালটেন্ট ও কোঅর্ডিনেটর
মেডিকেল অনকোলজি
এভারকেয়ার হসপিটাল ঢাকা।

Essential Winter Care Tips for Children

In Bangladesh, the winter season spans the Bengali months of Poush and Magh, corresponding to December through February. During this period, the cold winds become intense, affecting people of all ages. Children, however, are more vulnerable to the cold than adults. Winter’s low humidity and increased airborne dust contribute to illnesses such as colds, coughs, asthma, bronchitis, and bronchiolitis. Despite parents’ best efforts to care for their children, extra precautions are necessary during this season.

Various types of colds are prevalent during winter. The body loses heat as temperature drops, making children more susceptible to weakness and flu infections. The change in season also reduces children’s immunity, increasing the likelihood of fever, colds, and coughs. The winter dry weather causes children’s skin to become rough and dry, further exacerbating their discomfort. Dry skin can cause significant irritation, underscoring the need for parents to pay close attention to their children’s health and well-being.

A common misconception among parents is that children should be bathed less frequently in winter. However, doctors recommend daily baths using warm water. This practice helps prevent allergies and keeps the child’s skin fresh. Applying a moisturizer after bathing is essential to maintain the skin’s moisture. Sunbathing is also beneficial. Exposing children to the gentle morning sun, rather than the intense afternoon sun, helps meet their body’s need for vitamin D.

Ensuring regular air circulation in children’s rooms is crucial, as dark and damp rooms increase the likelihood of illness. Parents should also take measures to prevent cold winds from entering the house. Beds should be covered with blankets or quilts, and care should be taken not to overheat the sleeping environment. Parents should avoid letting children play outside for extended periods during winter and restrict outdoor activities after evening hours unless necessary.

When children go outside, they should be dressed appropriately in warm clothing. Their heads, necks, and ears should be covered with winter garments. Before Wearing bulky winter clothing, Children should be dressed in layers of cotton clothing initially to avoid skin rashes from coming into direct contact with wool or other coarse materials. Children should also wear gloves on their hands and socks on their feet. To protect their skin, parents can apply lip balm or petroleum jelly to their lips, hands, and feet. Children should have multiple sets of winter clothing, which should be cleaned and washed every two to three days and dried thoroughly in the sun.

A nutritious, balanced diet can significantly strengthen a child’s immunity during winter. Parents should increase the intake of fruits, vegetables, and nutrient-rich foods. Consuming seasonal fruits and vegetables helps protect children from winter-related illnesses and other diseases. Breastfeeding infants regularly is also crucial, as breast milk strengthens the immune system and reduces the likelihood of colds, coughs, and other illnesses.

If a family member or relative has a cold, cough, or viral fever, they should avoid coming into close contact with mothers and newborns. Even a mild cough or sneeze from an adult can pose a health risk to a newborn. Parents should consult a doctor immediately if a child exhibits symptoms such as fever, cough, difficulty breathing, or a runny nose.

 

Author:
Dr. Nusrat Farooq
Senior Consultant, Pediatrics and Neonatology
Neonatal Intensivist, Fellow Neonatology (Singapore)
Evercare Hospital Dhaka

Role of Air pollution in Development of COPD

Role of Air pollution in Development of COPD

Chronic Obstructive Pulmonary Disease (COPD) is a progressive lung disease characterized by difficulty breathing, chronic cough, and mucus production. It is primarily caused by long-term exposure to harmful particles and gases. One of the significant risk factors for developing COPD is air pollution, which exacerbates both the incidence and severity of the disease.

1. How Air Pollution Affects COPD
Air pollution, particularly in urban environments, contains harmful particles and gases such as:
Particulate Matter (PM2.5 and PM10): Tiny particles that can penetrate deep into the lungs, causing inflammation and damage to lung tissues.
Nitrogen Dioxide (NO₂): A gas emitted mainly from vehicle exhausts, which can irritate the airways and lead to reduced lung function.
Ozone (O₃): Ground-level ozone can trigger inflammation in the airways, worsening symptoms in COPD patients.
Sulfur Dioxide (SO₂): Emitted from burning fossil fuels, it can cause bronchoconstriction and worsen COPD symptoms.

2. Mechanism of Impact
Air pollutants can exacerbate COPD through several mechanisms:
Inflammation: Pollutants cause inflammation in the respiratory tract, leading to airway constriction and increased mucus production.
Oxidative Stress: Exposure to pollutants increases the production of free radicals, causing oxidative damage to lung cells.
Impaired Lung Defense: Pollutants can impair the lung’s natural defense mechanisms, making it easier for infections to take hold, which can worsen COPD symptoms.

3. Impact of Air Pollution on COPD Patients
Exacerbations: COPD patients exposed to high levels of air pollution are at a higher risk of exacerbations, which are episodes of worsening symptoms requiring medical intervention.
Hospitalization and Mortality: Increased exposure to air pollution is linked to higher rates of hospitalization and mortality in COPD patients.
Reduced Quality of Life: Chronic exposure can lead to a decrease in physical activity, increased breathlessness, and lower overall quality of life.
4. Preventive Measures
Avoid Outdoor Activities During High Pollution Days: COPD patients should minimize exposure during high pollution days, especially during peak traffic hours.
Indoor Air Quality: Using air purifiers, avoiding smoking indoors, and maintaining good ventilation can help reduce indoor air pollution.
Face Masks: Wearing protective masks (like N95) can help reduce exposure to harmful particles.
Monitoring Air Quality: Using air quality apps or devices can help COPD patients plan their activities based on pollution levels.

5. Public Health Strategies
Reducing Emissions: Governments need to implement stricter regulations to limit emissions from vehicles and industries.
Promoting Green Spaces: Increasing green spaces in urban areas can help reduce pollution levels.
Public Awareness Campaigns: Educating people about the impact of air pollution on respiratory health can help in reducing exposure and promoting protective behaviors.

6. Research Findings
Studies have shown a strong link between long-term exposure to pollutants and the risk of developing COPD. Additionally, short-term spikes in pollution levels have been associated with acute exacerbations of the disease, leading to increased hospital admissions.
In conclusion, air pollution is a critical environmental factor contributing to the development and progression of COPD. Addressing this issue requires a combined effort of individual preventive measures and broader public health policies aimed at reducing emissions and improving air quality.

Author:
Dr. SM Abdullah Al Mamun
Senior Consultant & Coordinator
Respiratory Medicine Department
Evercare Hospital Dhaka